সূর্যের সীমানায় পৌঁছে গেছে নাসার নভোযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’। মঙ্গলের গিরিখাতে জল শনাক্ত করেছে রাশিয়া ও ইউরোপিয়ান নভোযান ‘এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটার’। নাসা জানিয়েছে, ২০২৫ সালে চাঁদে যাচ্ছে প্রথম নারী নভোচারী জেসিকা ওয়াটকিনস। আর্টেমিস-৩ অভিযানে তিনি চাঁদে অবতরণ করবেন। এর আগে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের এপ্রিলে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। চন্দ্র, সূর্য ও মঙ্গল গ্রহের এই অভিযান নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ আবদাল আহমদ। আজ প্রথম কিস্তি।
র্যের সীমানায় পৌঁছে গেছে
নাসার নভোযান ‘পার্কার
সোলার প্রোব’। মঙ্গলের গিরিখাতে জল শনাক্ত করেছে রাশিয়া ও ইউরোপিয়ান নভোযান ‘এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটার’। এ দিকে নতুন মুন মিশন সম্পর্কে নাসা জানিয়েছে, ২০২৫ সালে চাঁদে যাচ্ছে প্রথম নারী নভোচারী জেসিকা ওয়াটকিনস। আর্টেমিস-৩ অভিযানে তিনি চাঁদে অবতরণ করবেন। এর আগে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের এপ্রিলে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে।
চন্দ্র সূর্য ও মঙ্গল গ্রহে অভিযানের নতুন সাফল্যের খবর বিজ্ঞান বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’ ও সিএনএন-এর খবরে বলা হয়, সৌর বিজ্ঞানের এই সাফল্যকে বিজ্ঞানীরা অসাধারণ কীর্তি বলে বর্ণনা করেছেন। তারা বলছেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন স্থাপনে ইতোমধ্যে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা মহাকাশ ও সৌর বিজ্ঞান গবেষণাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা বাণিজ্যিক মহাকাশ স্থাপনে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে মোটা অঙ্কের অর্থ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। নাসা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। ২০৩০ সালের পর এটি আর চালানো যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, জাপান ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের যৌথ প্রকল্প হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এতদিন পরিচালনা করে আসছে নাসা।
সূর্য স্পর্শ করার স্মরণীয় মুহূর্ত
নাসার বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, সূর্য অভিযানে নিয়োজিত নভোযান পার্কার সোলার প্রোব প্রথমবারের মতো সূর্যের সীমানায় পৌঁছে গেছে। যানটির সংগৃহীত নমুনা বিশ্লেষণে বোঝা গেছে, সেটি সূর্যের করোনা বা উপরের বায়ুমণ্ডলে পৌঁছে গেছে। বিজ্ঞানীরা একে সূর্য স্পর্শ করা বলেই দাবি করেন। ‘নেচার’ সাময়িকী ও সিএনএন-এর খবরে বলা হয়, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্সের আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের ফল মিটিংয়ে পার্কার সোলার প্রোবের সাফল্যের ঘটনাটি জানানো হয়। নাসার বিজ্ঞান মিশন অধিদফতরের সহযোগী প্রশাসক টমাস জুরবুচেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পার্কার সোলার প্রোবের সূর্য স্পর্শ করার ঘটনাটি সৌরবিজ্ঞানের জন্য একটি স্মরণীয় মুহূর্ত এবং সত্যিই একটি অসাধারণ কীর্তি। এ মাইলফলক আমাদের সূর্যের বিবর্তন এবং সৌরজগতের ওপর প্রভাব সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদানের পাশাপাশি বাকি মহাবিশ্বের নক্ষত্র সম্পর্কে আরো জানতে সাহায্য করবে।’ নভোযান পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের করোনা অঞ্চলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। সূর্যের করোনা, নক্ষত্রের প্রকৃত পৃষ্ঠের চেয়ে অনেক বেশি তপ্ত। করোনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ লাখ ডিগ্রি কেলভিন। আর সূর্যপৃষ্ঠের তামপাত্রা ছয় হাজার ডিগ্রি কেলভিন। ইতোমধ্যে পার্কার সোলার প্রোব ২০১৯ সালের সৌরঝড়ের চৌম্বকীয় কাঠামো সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে।
চন্দ্রবিজয়ের ৪৯ বছর পর নাসার বিজ্ঞানীরা শুরু করেন সূর্যজয়ের অভিযান। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট নাসা মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে মনুষ্যবিহীন অনুসন্ধানমূলক নভোযান’‘পার্কার সোলার প্রোব’। এটি সূর্যের ৬০ লাখ কিলোমিটার মধ্যে গিয়ে পৌঁছানোর কথা। এই মিশনে বিজ্ঞানী দলের নেতৃত্ব দেন নাসার বিজ্ঞানী ও জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সের অধ্যাপক ড. নিকোলা ফক্স। এই নারী বিজ্ঞানী নিকি ফক্স নামে পরিচিত। নীল আর্মস্ট্রং যখন চাঁদে নামেন, তখন শিশু বয়সে লন্ডনের বাসায় বাবার সঙ্গে এ দৃশ্য তিনি টেলিভিশনে দেখেছিলেন। ছোট্ট নিকি ফক্স তখনই সৌরবিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ৪৯ বছর পর ২০১৮ সালে সৌরবিজ্ঞানী হিসেবে তিনিই নেতৃত্ব দেন সূর্য অভিযানে। পার্কার সোলার প্রোবটি সূর্যের সীমানায় পৌঁছার খবরে উল্লসিত ড. নিকি ফক্স বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা পৌঁছলাম। মানুষের প্রচেষ্টায় সূর্যকেও স্পর্শ করা সম্ভব হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ও তার টিমের সদস্যের এ সাফল্যে উল্লাস প্রকাশ করেন। পার্কার সোলার প্রোব পাঠানোর আগে নাসা সূর্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০১২ সালে ভয়েজার-১ মিশন পাঠিয়েছিল।
২০১৮ সালে সূর্য অভিযানে পার্কার সোলার প্রোব উৎক্ষেপণের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সৌর পদার্থবিজ্ঞানী শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. ইউজেন নিউম্যান পার্কার। এ বিজ্ঞানীর তত্ত্ব, চিন্তাধারা এবং স্বপ্নের বাস্তবায়নই সূর্য অভিযান। তার নামেই নভোযানের নাম হয় পার্কার সোলার প্রোব। সূর্যের যে উজ্জ্বল আলোকচ্ছটার অংশটি সূর্যগ্রহণের সময় দেখা যায় তাকে বলে ‘করোনা’, যানটি তার ভেতর দিয়েই উড়ে যাওয়ার কথা এবং সেই লক্ষ্যে যানটি পৌঁছে সূর্যের চার দিকে ২৪ বার প্রদক্ষিণ করবে এ যান। সে সময় এর গতি থাকছে ঘণ্টায় ছয় লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। যানটি ৬০ লাখ কিলোমিটার দূর থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তথ্য পাঠাচ্ছে। পার্কার সোলার প্রোব সম্পর্কে বিজ্ঞানী নিকি ফক্স বলেন, ‘এত দ্রুতগতির কোনো কিছু এর আগে তৈরি হয়নি। সূর্যের চারদিকে এটি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৯০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে ঘুরছে। অর্থাৎ এই গতিতে নিউইয়র্ক থেকে টোকিও যেতে সময় লাগে এক মিনিটেরও কম। মানুষের তৈরি কোনো যান এর আগে সূর্যের এতটা কাছে যায়নি।’ (ক্রমশ...)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct