দুষ্টু রাখাল
মনির চৌধুরী
এক গ্রামে বাস করত এক দুষ্টু রাখাল। রাখালের ছিল এক পাল মহিষ।প্রতিদিন সে বিকালে মহিষের পাল নিয়ে চরণভূমিতে চড়াতে যেত।মহিষের পাল যখন মনের সুখে চরণভূমিতে নরম দূর্বা ঘাস আর গাছ-গাছালির সবুজ লতা-পাতা খেতে শুরু করত। তখন দুষ্ট রাখাল,মহিষের পাল চরণভূমিতে রেখে প্রতিবেশীদের গাছের ফল-ফলাদি চুরি করতে যেত।সে তার ইচ্ছে মত প্রতিবেশীদের গাছের পাকা ফল-ফলাদি চুরি করে নিয়ে ফিরে আসত চরণভূমিতে এবং সে একটা গাছের ছায়া তলায় বসে মনের সুখে ফল খেত আর অপচয় করত।যখন বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হত,তখন সে মহিষের পাল খেদিয়ে বাড়িতে ফিরে আসত।এভাবে রাখাল প্রতিদিন বিকালে মহিষ চড়াতে যেত আর প্রতিবেশীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে,গাছের ফল-ফলাদি চুরি করে খেত লাগল। হঠাৎ একদিন রাখাল ফল চুরি করতে গিয়ে ধরা পরে গেল,প্রতিবেশী রহিম চাচার কাছে। তখন রহিম চাচা রাখালকে বলছে,কথায় আছে,চোরের দশ দিন আর গেরস্তার একদিন।অনেক দিন ধরে আমি অপেক্ষা করছি,তোমাকে হাতে নাতে ধরব বলে। আজকে বাপু তোমাকে হাতে নাতে ধরে ফেলেছি।তোমাকে আজকে উচিত শিক্ষা দিয়ে-ই ছাড়ব। কিন্তু রহিম চাচা তাকে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছিল না।কারণ রাখাল ছিল খুব দুষ্টু। তাকে মারধর করলে পরে রাতের আঁধারে এসে,যে কোন প্রকারের জিনিস ক্ষয়-ক্ষতি করে চলে যাবে।এই জন্য রহিম চাচা,রাখালকে হাত ধরে তার মায়ের কাছে বিচারের জন্য নিয়ে যায় এবং তিনি রাখালের মাকে বলছে,তানিয়া আপা তোমার ছেলে প্রতিদিন মহিষ চড়াতে গিয়ে,আমার গাছের ফল চুরি করে খায় আর নষ্ট করে থুয়ে চলে যায়।আমি তো গরিব মানুষ,এভাবে প্রতিদিন তোমার ছেলে দুষ্টুমি করে গাছের ফল-ফলাদি নষ্ট করলে,আমার সংসার চলবে কেমন করে।তুমি ওকে একটু শাসন করও পরবর্তীতে যেন ও আর কারো গাছের ফল-ফলাদি চুরি না করে।এই কথা বলে রহিম চাচা সেখান থেকে চলে গেল।
মুহূর্তের মধ্যে রাখালের মা রাখালকে কষে চওলে দুই থাপ্পড় মারল এবং তাকে বলল,জীবনে আর কারও যেন ক্ষতি করতে না দেখি।তখন রাখাল মনটা ভার করে পাড়ায় চলে গেল।সেদিন সে আর মহিষ চড়াতে গেল না।রাখালের মায়ের মনটাও খারাপ হয়ে গেল,ছেলের গায়ে হাত তোলা জন্য। রাখালের মায়ের মনে চিন্তা বেড়ে গেল।তিনি চিন্তা করছে, না জানি অবুঝ ছেলে রাগের মাথায় কমনে কি করে বসে। রাগের মাথায় ওকে মারধর করা ঠিক হয়নি আমার।যাহোক ভালো মত সন্ধ্যা দিকে রাখাল বাড়িতে ফিরে এলো। তখন মায়ের মনে হাসি ফিরে এলো এবং তিনি ছেলে দেখে বলছে,বাপ তুই তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে আয়,তোর জন্য আমি খাবার রেডি করছি।রাখাল মুহূর্তে মধ্যে হাত মুখ ধুয়ে মায়ের সাথে খাবার খেতে বসল। কিছু ক্ষণের মধ্যে তার খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেল এবং সে হাত ধুয়ে শয়ন কক্ষে ঘুমাতে গেল। গোয়াল ঘরের কাছাকাছি ছিল তার শয়ন কক্ষ।ক্লান্ত দেহ নিয়ে মুহূর্তে মধ্যে সে ঘুমিয়ে পড়ল।কিন্তু সেদিন ভাগ্যের কি পরিহাস,মাঝ রাতে একদল ডাকাত এসে, তাদের বাড়িতে হামলা করল এবং গোয়াল ঘরে প্রবেশ করে মহিষ গুলো নিয়ে চলে গেল। নিস্তব্ধ নিশিরাত যখন অবসান প্রায় পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে রাখালের ঘুম ভেঙ্গে গেল।ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ তার লক্ষ্য গেল গোয়াল ঘরের দিকে।তখন সে দেখতে পেল একটা মহিষও গোয়াল ঘরের নেই। মনটা ভার করে কাঁদতে কাঁদতে সে তার মায়ের কাছে গেল আর চিৎকার করে বলতে লাগল,মা তাড়াতাড়ি ওঠো আমাদের সব মহিষ গুলো আজ রাতে চুরি হয়ে গেছে।তখন তার মা তাড়াহুড়া করে ঘুম ওঠে মনটা ভার করে বলছে,তুই তো দুষ্টুমি করে পরের গাছের ফল-ফলাদি চুরি করে খেয়ে বেড়াতি আর নষ্ট করতি।কত দুঃখ-কষ্ট পেয়েছে সেই সব মানুষ গুলো।যেমন-আজকে আমাদের মহিষ গুলো চুরি হয়ে গেছে বলে আমারও খুব কষ্ট পাচ্ছি।তখন রাখাল তার ভুল বুঝতে পেরে মায়ের কাছে ওয়াদা করল,আমি আর কোন দিন চুরি করব না।কারো সাথে দুষ্টুমি করব না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct