সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া: কোভিডের জন্য ভিন রাজ্য বা ভিন জেলার অর্ডার যেমন মেলেনি তেমনি স্থানীয় কেঞ্জাকুড়ার কাঁসা,পিতল শিল্পে,বা গামছা ও তাঁত শিল্পও ধুঁকছে। কোভিড আবহে স্থানীয় মানুষের হাতেও টাকার টান। তার জেরে এবার এক ধাক্কায় মেগা জিলিপি তার আকার ও আয়তনেও কম গিয়েছে। একটা সময় ছিল ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে ভাদু ও বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষ্যে কে কত বড় জিলিপি ময়রা দোকানে অর্ডার দেবেন তার প্রতিযোগিতা চলত। এমনকি বেয়াই বাড়ীতে মেগা জিলিপি পাঠিয়ে নিজের বড়াই জাহির করার চলও ছিল। দিন,দিন তা কমতে বসেছে। এবার কোভিড আবহে কোন ক্রমে নিয়মরক্ষার জিলিপি তৈরী হচ্ছে।বছর দুই আগে তিন, চার,পাঁচ কেজি ওজনের এক একটি জিলিপির অর্ডার মিলত এবছর তা কমে এক থেকে দেড় কেজিতে ঠেকেছে। কেঞ্জাকুড়ার অভিজাত মিষ্টির দোকানী মুক্তা দত্ত তেমনটাই জানালেন। যুগযুগ ধরে কাঁসা,পিতলের শিল্প গ্রাম কেঞ্জাকুড়ায় এই বিশাল দৈত্যাকৃতির জিলিপি তৈরীর পরম্পরা চলে আসছে। এবার সেই জিলিপির আকার এক লাফে কমে গিয়েছে। তাই জিলিপির কারিগর অশোক ভুঁই, হারাধন কুম্ভকারদের মন ভালো নেই। তাদের দাবী কোভিড আবহে বাজারে মন্দা,মানুষের রোজগার শিকেয় উঠেছে। মানুষের হাতে টাকাও নেই। তাই বিশাল আকারের জিলিপির বরাত নেই এবার। আগে ঝাড়খন্ড,বিহার,ওড়িশা থেকেও অর্ডার মিলত। ওখানকার বনেদি বাঙ্গালীরা ভাদু পুজোর আগের দিন গাড়ী করে জিলিপি নিয়ে যেতেন এখান থেকে।
অনেক ক্রেতা আসতেন পুরুলিয়া,বর্ধমান,পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকেও। গত বছর থেকে সেসব অতীত। তবে, কেঞ্জাকুড়ার বাসিন্দারা পরম্পরা মেনে আজও মেগা জিলিপি কিনতে হাজির হচ্ছেন। এমনকি এখনকার প্রজন্মের যুথিকার মতো অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এই জিলিপি। যুথিকার সাফ কথা এই জিলিপি আমাদের পরম্পরার অঙ্গ। তাই ভাদু পুজোর দিন এই জিলিপি আজও কেঞ্জাকুড়ায় প্রতি ঘরেঘরে বিরাজ করে। এটা বাংলার মিষ্টান্ন শিল্পেরও গৌরব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct