আলফাজুর রহমান, তেহট্ট, আপনজন: বৃহস্পতিবার ভোরে কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে শহীদ হন প্যারা কমান্ডো বাহিনীর জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ । শনিবার সকালে কাশ্মীরে শহীদ জওয়ান ঝন্টুর কফিনবন্দি দেহ এসে পৌঁছায় তার গ্রাম তেহট্ট থানার পাথরঘাটায়। দেশেরবীর সন্তানকে শ্রদ্ধা জানাতে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়। জাতীয় পতাকায় মোড়া তার কফিনের সামনে গান ফায়ারের মাধ্যমে শহীদ ঝন্টু আলিকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় ।
উল্লেখ্য, কাশ্মীরের উধমপুরে নিরাপত্তা বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের জেরে নিহত হন পাথরঘাটা গ্রামের ৩৭ বছর বয়সী ঝন্টু আলি শেখ। শুক্রবার জম্মুতে শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রথমে দিল্লি, তারপর দিল্লি থেকে রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে তার নিথর কফিন বন্দি দেহ নামানো হয়। সেখানে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম উপস্থিত থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানান।
শনিবার ভোরে জওয়ানের দেহ তার নিজের গ্রাম তেহট্ট থানার পাথরঘাটার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত পাথরঘাটা পশ্চিমপাড়ার মানুষদের তাদের ঘরের ছেলে জওয়ান ঝন্টু আলিকে শ্রদ্ধা জানাতে সকলকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। শুধু তাই নয় পশ্চিম পাড়ার বিভিন্ন রাস্তা এলাকার মানুষকে সাফ করতে দেখা যায় । জওয়ান ঝন্টু আলীর বাড়ির সামনে পশ্চিমপাড়া ঈদগাহ মাঠ, সেই মাঠে দেহ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। শনিবার শহীদ ঝন্টু আলীর দেহ আসার সময় যত এগিয়ে আসছিল রাস্তার দুই পাশ থেকে শুরু করে প্রতিটি ছাদে ও ঈদগাহের মাঠে মানুষের ভিড় শুরু হয় । বিশাল পুলিশ বাহিনী গোটা এলাকায় ছেয়ে যায়। সকাল আটটার পর থেকে কৃষ্ণনগর করিমপুর রাজ্য সড়ক থেকে পাথরঘাটা পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। সকাল ন’টা ৩০ নাগাদ সেনা গাড়িতে করে ঝন্টু আলি দেহ এসে পৌঁছায়। ঝন্টুর কফিনবন্দি দেহ পশ্চিমপাড়া ঈদগাহের কিছুটা আগেই সেনা গাড়ি থেকে নামিয়ে জওয়ানরা কাঁধে নিয়ে ঈদগাহের মাঠে নিয়ে আসেন। এরপর দিকে দিকে ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান উঠতে থাকে ।
ঈদগাহের মাঠে কফিন পৌঁছাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী সহ গোটা পরিবার। কফিনে মাথা দিয়ে স্ত্রী শাহনাজ পারভীন কাঁদতে থাকে, অঝোরে কাঁদতে থাকে ঝন্টু আলির বাবা। বাবার কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে ছেলে মেয়ে। কিছুক্ষণ রেখে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে। সেখানে কফিন খুলে ঝন্টু আলির নিথর দেহকে স্নান করিয়ে আবার নিয়ে আসা হয়। গান ফায়ারের মাধ্যমে শেষ শ্রদ্ধা জানান সেনাকর্তারা। এরপর ঈদগাহের মাঠে জানাজা সেরে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় পাথরঘাটার কবরস্থান, সেখানেই দাফন করা হয় ঝন্টু আলির লাশ ।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ঝন্টুর স্ত্রী রুমার সঙ্গে ফোন করে সমবেদনা জানান। সন্তানদের পড়াশোনায় পূর্ণ সরকারি সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এর পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরির প্রস্তাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।শেষকৃত্যের সময় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, দলের বিধায়ক রুকবানুর রেহমান, উজ্জ্বল বিশ্বাস, তাপস সাহা প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct