আপনজন ডেস্ক: শেষ ওভার করতে এলেন দীনেশ কার্তিক। ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিংয়ে অভিজ্ঞতা আছে তাঁর, তবে এর আগে ১৬৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে বোলিং করেননি কখনোই। কার্তিকের পরপর ২ বলে ২ ছক্কা মারলেন ইব্রাহীম জাদরান, শেষ ওভারে উঠল ১৮ রান। তবে তাতে কিছু যায় আসেনি, শেষ ওভারটি তো ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। ১ হাজার ২০ দিন পর বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি, ভুবনেশ্বর কুমারের রেকর্ড ৪ রানে ৫ উইকেটে ২১২ রান তাড়ায় আফগানিস্তান থেমেছে ১১১ রানেই। ১০১ রানের জয়ে এশিয়া কাপ শেষ করল ভারত, সুপার ফোরে এটি তাদের একমাত্র জয়। লড়াই করা আফগানদের এ পর্বে থাকতে হলো জয়শূন্যই।
পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের রাতেই রোমাঞ্চকর এক ম্যাচের সাক্ষী ছিল আফগানিস্তান, যদিও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে তাদের। আর ওই হারেই নিশ্চিত হয়েছিল, আফগানদের সঙ্গে ভারতেরও বিদায়। এ ম্যাচটি তাই ছিল শুধুই নিয়মরক্ষার। তবে এ ম্যাচকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি খরা কাটানোর জন্য বেছে নিলেন কোহলি, আর পরে ভুবনেশ্বর গড়লেন রেকর্ড বোলিং ফিগার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মাত্র পঞ্চমবার কোনো দল একই ম্যাচে দেখল সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট। রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই দুই আফগান ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই ও রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফেরান ভুবনেশ্বর। পরের ওভারে তাঁর শিকার করিম জানাত ও নজিবুল্লাহ জাদরান, ৯ রানেই চতুর্থ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। মাঝে মোহাম্মদ নবীকে ফেরান অর্শদীপ সিং, নিজের শেষ ওভারে এসে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের উইকেট নেন ভুবনেশ্বর। নাকল বল, ইনসুইং, আউটসুইংয়ে বিপর্যস্ত করে তোলেন আফগান ব্যাটসম্যানদের জীবন, ৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বোলিং শেষ করেন এ পেসার। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে এত কম রান দিয়ে ৫ বা এর বেশি উইকেট নেননি কেউ। সব মিলিয়ে এর চেয়ে কম রান দিয়ে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে শুধু রঙ্গনা হেরাথ ও রশিদ খানের (৩ রান)। ২১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা আফগানিস্তান যে শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার খেলতে পেরেছে, সেটির কৃতিত্ব ইব্রাহীম জাদরানের। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৫৯ বলে ৬৪ রান করে। শেষ দিকে তাঁকে সঙ্গ দেন রশিদ খান ও মুজিব উর রহমান। ইব্রাহীম একাই করেন দলের ৫৭.৬৫ শতাংশ রান। এর আগে ভারত ইনিংসটি ছিল কোহলিময়। নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মার বদলে নেতৃত্ব দেন লোকেশ রাহুল, রোহিতের বদলে ওপেন করতে আসেন কোহলি। আইপিএলে নিয়মিত ওপেন করলেও জাতীয় দলে সর্বশেষ গত বছরের মার্চে এ পজিশনে নেমেছিলেন কোহলি। সেঞ্চুরি পেলেন সেখানেই।রাহুলের সঙ্গে কোহলির ওপেনিং জুটিতে ওঠে ১১৯ রান। ৪১ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলেন রাহুল, ৬টি চারের সঙ্গে মারেন ২টি ছক্কা। ১৫১ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি ভারতের ইনিংসেও গতির সঞ্চার করে। চোট থেকে ফিরে ছন্দে ছিলেন না, এ ইনিংস নিশ্চিতভাবেই আত্মবিশ্বাস জোগাবে তাঁকে। অবশ্য রাহুল ফিরলেও সমস্যা হয়নি কোহলির। ৩২ বলে ফিফটি পেয়েছিলেন, ১ হাজার ২০ দিন পর সেঞ্চুরিটি পান ৫৩ বলে। মোহাম্মদ নবীর বলে ব্যক্তিগত ২৭ রানের সময় মিড উইকেটে ইব্রাহিম জাদরানের হাতে জীবন পাওয়াটা বাদ দিলে কোহলির ইনিংসটাকে নিশ্ছিদ্রই বলতে হবে। ইনিংসের ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফরিদ আহমেদকে পুল করে মারা ছয়ের পরই ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে চওড়া হাসিতে উদ্যাপন শুরু করেন কোহলি। এরপর উদ্বাহু হন স্বস্তিমেশানো চেহারা নিয়ে। এক ফাঁকে চুমু এঁকে দেন নিজের বিয়ের আংটিতেও। টি-টোয়েন্টিতে এটিই কোহলির প্রথম সেঞ্চুরি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭১তম। তাঁর ৬১ বলে অপরাজিত ১২২ রানের সৌজন্যে ভারতও গড়েছে ২ উইকেটে ২১২ রানের পাহাড়। পরে ভুবনেশ্বর নিশ্চিত করেছেন, আফগানরা সে পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ছে ভালোভাবেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct