আপনজন ডেস্ক: আবগারি নীতি সংক্রান্ত আর্থিক তছরুপের মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।দিল্লি হাইকোর্ট আম আদমি পার্টির জাতীয় আহ্বায়ককে সিবিআইয়ের কোনও জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ থেকে সুরক্ষা দিতে অস্বীকার করার কয়েক ঘণ্টা পরেই এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হল।লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের মধ্যেই ৫৫ বছর বয়সী এই নেতাকে গ্রেফতার করার পর তার দল আম আদমি পার্টি (আপ) ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই ইডির একটি দল তাঁর বাড়িতে পৌঁছে তল্লাশি চালায়। এরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইডি শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীকে আদালতে হাজির করবে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার হেফাজতে চাইবে।ইডি আধিকারিকরা ভিতরে তাদের অভিযান চালানোর সময়, অতিরিক্ত দিল্লি পুলিশ কর্মী এবং র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) এবং সিআরপিএফ দল মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, আপ সমর্থকদের বিক্ষোভের আশঙ্কায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইডি।বিপুল সংখ্যক আপ কর্মী ও নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের কাছে জড়ো হয়ে ইডির পদক্ষেপের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।এদিন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরিওয়াল।গত সপ্তাহে ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) নেতা কে কবিতার গ্রেপ্তারির সময় যা ঘটেছিল তার কার্যত পুনরাবৃত্তি ইডির পদক্ষেপ, যিনি এখন একই মামলায় ইডি হেফাজতে রয়েছেন।মামলাটি ২০২১-২২ সালের জন্য দিল্লি সরকারের আবগারি নীতি প্রণয়ন ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ সম্পর্কিত, যা পরে বাতিল করা হয়েছিল। আপ নেতা মণীশ সিসোদিয়া এবং সঞ্জয় সিং এই মামলায় বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। ইডির পেশ করা চার্জশিটে একাধিকবার কেজরিওয়ালের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, আবগারি নীতি তৈরির জন্য অভিযুক্তরা কেজরিওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল, যার বিনিময়ে তারা অন্যায্য সুবিধা পেয়েছিল, যার বিনিময়ে তারা আপকে ঘুষ দিয়েছিল।আপ নেতা অতিশী এই গ্রেপ্তারের সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে কেজরিওয়াল জেল থেকে সরকার পরিচালনা করবেন।আমরা সব সময় বলেছি, অরবিন্দ কেজরিওয়াল জেল থেকেই সরকার চালাবেন। তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন।
অতিশী আরও বলেন যে তারা সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছেন এবং তাদের আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার রাতেই জরুরি শুনানির দাবিতে শীর্ষ আদালতে যাচ্ছেন।এর আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল এবং তাঁর বক্তব্য প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের (পিএমএলএ) ৫০ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।মদনীতি জালিয়াতি নিয়ে ইডির নয়টি সমন এড়িয়ে গেছেন আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান। গত সোমবার ইডির করা দিল্লি জল বোর্ডে কথিত অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত অর্থ পাচার মামলার পৃথক আরেকটি সমনেও তিনি হাজির হননি। মদনীতি মামলায় তেলেঙ্গানার বিআরএস নেতা কে কবিতাকে গ্রেপ্তারের এক সপ্তাহের মধ্যে ইডির পক্ষ থেকে কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কবিতাকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমবারের মতো এ মামলা কেজরিওয়ালকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নাম যুক্ত করা হয়।গত বছরের অক্টোবরে ইডি কেজরিওয়ালকে প্রথম সমন জারি করে ২ নভেম্বর হাজির হতে নির্দেশ দেয়। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ইডি গ্রেপ্তার করতে পারে।গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ মামলায় দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে গ্রেপ্তার করে ইডি। আপের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিংকে গত অক্টোবরে হেফাজতে নেওয়া হয়।কেজরিওয়াল একাধিকবার দাবি করেছেন, দিল্লির মদনীতি নিয়ে কোনো জালিয়াতি হয়নি। তাঁর দাবি, কেন্দ্রে বিজেপির নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা ইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করে আপকে দমাতে চায়। আপ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিরোধী দল ইডিকে নিজ স্বার্থে বিজেপি কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে। তাদের দাবি, নেতাদের বিরুদ্ধে এই সংস্থাকে ব্যবহার করছে বিজেপি। আগামী ১০ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচন। এর আগেই নেতাদের গ্রেপ্তারে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে। কেজরিওয়াল কিছুদিন ধরেই বলে আসছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি তাঁকে গ্রেপ্তার করবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct