জেনারেল ক্যাটেগরির দরিদ্র মানুষদের জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা অনুমোদনের সিলমোহর দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত এবং যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হচ্ছে। এই রায় থেকে বেশ কিছু বড় প্রশ্ন উঠে আসে। জেনারেল ক্যাটেগরির দরিদ্র মানুষদেরও কি শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়া উচিত? দলিত, জনজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণির গরিবদের কি দারিদ্র্যের ভিত্তিতে দেওয়া এই সংরক্ষণের বাইরে রাখা উচিত? এ নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ শেষ কিস্তি।
প্রথম প্রশ্ন হল, সংরক্ষণ কি দারিদ্র্য রোগের সঠিক ওষুধ? সংবিধানে ‘সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে অনগ্রসর শ্রেণি’র জন্য বিশেষ ব্যবস্থার অনুমতি গরিবদের জন্য প্রযোজ্য হবে কি, না তাতে আইনি প্যাঁচ আছে? কিন্তু এই আইনি সমস্যাটিকে বাদ দিলেও প্রশ্ন জাগে, কোন পরিস্থিতিতে সংরক্ষণের মতো হাতিয়ার ব্যবহার করা ঠিক হবে? এখনও অবধি, সংরক্ষণের পক্ষে যুক্তি হল, এটি এমন অসাধারণ হাতিয়ার যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা শত শত বছরের নিষেধাজ্ঞা এবং বঞ্চনাকে অতিক্রমের জন্য ব্যবহার করা উচিত। এটি যদি কোনো একটি পরিবার বা ব্যক্তির সমস্যা বা সুযোগের সমতার জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে সংরক্ষণের মতো অসাধারণ হাতিয়ারের অপব্যবহার হবে। দারিদ্র্যের কারণে যে বৈষম্য তৈরি হয়, তা সংশোধন করতে চাইলে আরও ভালো স্কুল ব্যবস্থা, বৃত্তি ও অন্যান্য শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। যদি সত্যিই গরিবদের শিক্ষা ও চাকরির ভালো সুযোগ দিতে হয়, তাহলে সবার আগে শিক্ষার বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে হবে, যার কারণে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের ভালো শিক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হল, শিক্ষার খরচ নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য কি সংরক্ষণের ললিপপ এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে গরিবদের হাতে?
দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য যদি সংরক্ষণ করতেই হয়, তবে তা শুধু জেনারেল ক্যাটেগরির জন্য কেন? রায়ের ভিন্ন মতে বিচারপতি ভাট এবং ললিত একটি সরকারি সমীক্ষার উল্লেখ করেছেন যা দেখায়, দেশের ৬ জন দরিদ্র মানুষের মধ্যে ৫ জন তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে, এঁরাও দরিদ্রদের জন্য সংরক্ষণের একটি বড় অংশ দাবি করতে পারেন। কিন্তু সংবিধানের ১০৩তম সংশোধন অনুসারে, দারিদ্র্য সংরক্ষণের সুবিধা শুধুমাত্র সেই পরিবারগুলিকে দেওয়া হবে যারা এসসি, এসটি বা ওবিসিভুক্ত নয়। যুক্তি হল, যাঁরা জাতপাতের ভিত্তিতে সংরক্ষণ পাচ্ছেন, তাঁদের অর্থনৈতিক ভিত্তিতে দ্বিগুণ সুবিধা দেওয়া যাবে না। যার অর্থ হল, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ লোক ৫০ শতাংশ চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন এবং বাকি ৫০ শতাংশ চাকরি কার্যত দেশের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। উচ্চবর্ণের দরিদ্ররা কোনোভাবেই দেশের জনসংখ্যার ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি নয়। তাঁদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? এটা হবে সামাজিক ন্যায়ের নামে অবিচার। যাই হোক, আমাদের দেশে জাত-পাতের ভুয়ো শংসাপত্র তৈরি করা কঠিন, তবে দারিদ্র্যের মিথ্যা শংসাপত্র তৈরি করা সবচেয়ে সহজ। যে যত ধনী, সে তত সহজে দারিদ্রের সনদ তৈরি করতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত সেই সমস্ত লোককে হতাশ করেছে যাঁরা এই দেশে চলমান সামাজিক অবিচারের পাল্টা হিসাবে সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে দেখেছেন। এই সিদ্ধান্তটি পাল্টাতে কত বছর বা দশক লাগে তা দেখার বিষয়। (বিশেষ সহযোগিতা - প্রণব ধাওয়ান) (সমাপ্ত...)
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: শ্রেয়ণ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct