সুলেখা নাজনিন: তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসতে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবাংলার ইতিহাসে জ্যোতি বসুর পর তিনিই হচ্ছেন দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী যিনি তৃতীবারের জন্য এই আসনে বসছেন। এবারের বিধানসভার নির্বাচন ছিল সম্মানের লড়াই। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এমন ভাব দেখিয়েছিল যাতে মনে হচ্ছিল তারা যেন বঙ্গ বিজয় করেই নিয়েছে। কিন্তু সেই দর্প চূর্ণ হয়েছে বিজেপির। বিজেপির প্রচারে ফানুস চুপসে গিয়ে ফুলে উঠেছে ঘাসফুল।
নির্বাচনের কমিশনের তথ্য বলছে, এই ঘাসফুলের এবারের রেকর্ড বিজয়ের পিছনে অনুঘটকের কাজ করেছে মুসলিম ভোট।
মমতা নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মুসলিমদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তারা যেন ভোট ভাগ না করেন। রাজ্যের সংখ্যালঘু প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদে গিয়ে মমতা আহ্বান জানিয়েছেন, এবার যেন তারা একবার তৃণমূলকে সুযোগ দেয়। মুসলিমরা কথা রেখেছে। বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের মুসলিমরা শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, রাজ্যের সর্বত্র প্রায় ঢেলে ভোট দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। এর মূলে মমতার প্রতি মুসলিমদের আস্থা জন্মানোই অনুঘটকের কাজ করেছে। একদিকে যখন বিজেপি ক্ষমতায় এলে এনআরসি আর মুসলিম বিদ্বেষের জুজু, অন্যদিকে অসহায় মুসলিমদের প্রতি মমতা দ্বিধাহীনভাবে ছুটে যাওয়া নিঃসন্দেহে মুসলিমদের মনে দাগ কেটেছে। যেভাবে মমতা শতিলকুচিতে মুসলিম শিশুকে কোলে নিয়ে মাতৃসম আদর করেছেন তা হয়তো মুসলিমদের মনকে নাড়া দিয়েছে এই ভেবে যে মমতাই একমাত্র তাদের বিপদের বন্ধু হতে পারে। তার প্রতিদান ভোটের বাক্সে দিয়েছে রাজ্যের মুসলিমরা। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে মমতা ইচ্ছা পূরণ করলেও রাজ্য মন্ত্রিসভায় কি গতবারের চেয়ে বেশি মুসলিমের ঠাঁই হবে? ফিরে আসতে পারে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলের মতো রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বে মুসলিমদের অংশীদারিত্ব? সেই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে মন্ত্রিসভা গঠনের পর।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, এবারের তৃণমূলের বিধায়কের তালিকায় গতবারের থেকে প্রায় গোটা পনেরা জন মুসলিম বিধায়ক সংখ্যা বেড়েছে। সঙ্গত কারণেই মুসলিম মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়ানোর দাবি উঠছে। তবে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
তবে, এ কথা ঠিক সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের আমলে যেমন মুসলিম বিধায়কদের সংখ্যা বড়েছিল তেমন পরিস্থিতি এখন হয়েছে মমতার নেতৃতত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে। এখন অবশ্য সিদ্ধার্থ শং্কর রায়ের মন্ত্রিসভার কেনাও সদস্য বেছচে নেই। কিন্তু তাদের স্মৃতি বহন করে চলেছেন কেউ কেউ। সিধ্ধার্থ শং্কর রায়ের আমলে মন্ত্রিসভা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন মুরারইয়ের ডা. মোতাহার হোসেন। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ডা. মোতাহার হোসেনের পুত্র ডা. মোশারফ হোসেন তৃণমূলের টিকিটে জয়লাভ করেছেন। ফলে, সেই অতীত স্মৃতি উসকে দিচ্ছে যে সিদ্ধার্থ রায়ের মন্ত্রিসভায় মোতাহার হোসেন, আবদুস সাত্তারদের মতো মন্ত্রীদের স্মৃতি। মমতা তিার মন্ত্রিসভায় সত্যিই মুসলিমদের গুরুত্ব দেন কিনা তা দেখার। কারণ, মুসলিমরা মমতার প্রত্যাশা পূরণ করে বিপুল আসন দিলেও মমতার কতটা সদিচ্ছা তা বোঝা যাবে মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন বাংলার মুসলিমরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct