দিলীপ মজুমদার: ভারতের রাজনীতিতে এখন ভারতীয় জনতা পার্টির দোর্দণ্ড প্রতাপ। তাঁরা কেন্দ্রে আছেন। এক ডজনেরও বেশি রাজ্যে আছেন। ডবল ইঞ্জিন তত্ত্ব চালু করেছেন। তার মানে কেন্দ্রে ও রাজ্যে এক দলের সরকার। এখন সেটাই দরকার। পরে আরও হবে। এক দেশ, এক দল, এক সরকার। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে আসমুদ্রহিমাচল। চল রে চল পদ্মফুলে ছাপ মারব চল।
কিন্তু সেই প্রতাপশালী বিজেপি বঙ্গ দখলের খেলায় একটু সমস্যায় পড়েছেন। তাঁরা পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছেন বাঙালি ডিএনএ। মাস দেড়েকের জন্য তাঁদের দলের শরীরে সেই ডিএনএ ঢুকিয়ে দিতে হবে। দিতেই হবে। কেন কী, তাঁদের প্রতিপক্ষ তৃণমূল তাঁদের বহিরাগত বলে দেগে দিচ্ছেন। কিছু কিছু বিজ্ঞজন সেটা সঙ্গত বলে মনেও করছেন। এসব শুনে জনতা জনার্দন যদি বিগড়ে যায়!
কত কষ্ট করে প্রধানমন্ত্রী মশায় বাঙালি মনীষীদের নাম শিখলেন, তাঁদের দুচার কলি কবিতা বা বাণী আওড়ালেন বিকৃত উচ্চারণে, রবীন্দ্রনাথের মতো দাড়ি রাখলেন, বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে একেবারে জ্যান্ত করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তবু ভয় যায় না। তারপরে ধরলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখুজ্জে মশায়কে। ইনি তো বাঙালি। ইনি তো হিন্দুত্বের প্রবক্তা। কিন্তু চিড়ে ভিজল না। লোকে খেলো না সে তত্ত্ব। তখন ধরার চেষ্টা করলেন আমাদের দাদাকে। কম বয়সেই ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব করে দাদা বাঙালির আইকন। কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দাদা সরে রইলেন দূরে। হয়তো সেটাও দাদার খেলা। দাদা যাবার পর ধরলেন দাদুকে। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের মহাগুরু। সিনেমায় যাঁর এক ছোবলে শেষ হয় প্রতিপক্ষ। দাদুর সঙ্গে একরাশ বাঙালি তারকা গৈরিক পতাকা হাতে নিয়ে বল বাড়ালেন তাঁদের। ভয় তবু যায় না। কেমন যেন বাঁকা চোখে দেখছে মানুষ।
এদিকে তাঁদের ‘বহিরাগত’ ‘বহিরাগত’ বলে চিল্লে চলেছেন দিদি ও দিদির দল। বল মা তারা দাঁড়াই কোথা? দিদির চিৎকার ছড়িয়ে পড়ছে জেলায় জেলায়। কিছু মান্যতাও পাচ্ছে। কারণ কী, তাঁদের বঙ্গ নেতারা হয় দুগ্ধপোয্য শিশু, না হয় বিশু পাগল, না হয় তাঁদের ঠিক ঠিক বিশ্বাস করা যায় না। তাই দিল্লি থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসতে হয়। নড্ডা সাহেবকে আসতে হয়, মোদিসাহেবকে আসতে হয়, অমিতসাহেবকে আসতে হয়। দিল্লির নেতারা প্রার্থী ঠিক করবেন, তাঁরা ঝাড়াই-বাছাই করবেন, কৌশল তাঁরাই ঠিক করে দেবেন। আর বঙ্গনেতারা আকুল হৃদয়ে বলবেন : হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা / আমি যে পথ চিনি না।
দুগ্ধপোয্য শিশুর হাতে তো সব কিছু ছেড়ে দেওয়া যায় না। তাই শুনতে হচ্ছে ‘বহিরাগত’ অপবাদ। গায়ে লাগছে বড়। বঙ্গভোটে ঝাঁপাতে হবে, কাঁপাতে হবে, জিততে হবে। চাণক্যমশায় ভাবছেন আর ভাবছেন। ভাবতে ভাবতে তিনি ঠিক করেছেন বাঙালি আবেগকে কব্জা করতে হবে। যেন তেন প্রকারেণ। আর সুযোগ পেলেই বিজেপির শরীরে বাঙালি ডিএনএ ঢুকিয়ে দিতে হবে। ভোটের রেজাল্ট আউট হয়ে গেলে অপারেশন করে সেই ডিএনএ বের করে দিতে কতক্ষণ?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct