মনমোহনের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময় দিল্লির সরকারি বলয়ে এ কথা কারও কাছে অবিদিত ছিল না যে তিনি তাঁর বসের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনো গুরুতর সিদ্ধান্ত নিতে বা নীতি ঠিক করতে পারতেন না। বহু সাংবাদিিই বিশ্বাস করে থাকেন পি ভি নরসিমা রাওয়ের অধীনে অর্থমন্ত্রী থাকাকালে মনমোহন সিং যে সংস্কারগুলো নিয়ে এসেছিলেন, তা ভারতকে বদলে দিয়েছে। নতুন কংগ্রেস সভাপতি মনমোহন সিংয়ের পথ অনুরসরণ করে কি নতুন কোনও পথ দেখাবেন? এ নিয়ে লিখেছেন তাভলিন সিং। আজ প্রথম কিস্তি।
গত সপ্তাহে কংগ্রেস নতুন সভাপতি পেয়েছে। দুই দশক পর দলটি এই প্রথম এমন একজন সভাপতি পেল, যাঁর নামের শেষে গান্ধী উপাধি নেই। এর সুবাদে আমি কংগ্রেসের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম, যার ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার। ব্যাখ্যা দেওয়াটা দরকারি হয়ে পড়েছে। কারণ, কংগ্রেসের একজন নেতা আমাকে হুমকি দিয়ে একটি চিঠি লিখেছেন এবং আমাকে সেটি পাঠানোর পরপরই তা টুইটারে প্রকাশও করেছেন। চিঠিতে আইনি ভাষায় বলা হয়েছে যে আমি ‘জ্ঞাতসারে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতা ড. মনমোহন সিংয়ের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকার সময় “গোপন” সরকারি ফাইল শেয়ার করে সরকারি গোপনীয়তা বিধি, ১৯২৩ লঙ্ঘন করেছিলেন বলে মিথ্যা অভিযোগ’ করেছি।সরকারি গোপনীয়তার এই আইন যে এক শ বছরের পুরোনো, তা প্রথমবারের মতো জানা আমার কাছে নতুন কিছু আবিষ্কারের মতো ঠেকল। আমি প্রকাশ্যে বলেছি, এই পুরনো আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে আমি কখনোই বলিনি। সত্যটা হল, আমি কখনো প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ পর্যন্ত করিনি। আমি শুধু বলতে চেয়েছি, সোনিয়া গান্ধী গোপনীয়তা–সংক্রান্ত কোনো রাষ্ট্রীয় শপথ গ্রহণ ছাড়াই সরকারের গোপন ফাইল হাতে পেতেন এবং তিনি সরকারের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।
মনমোহন সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা এ কথা প্রকাশ্যে স্বীকারও করেছেন। সোনিয়া গান্ধীর গুণমুগ্ধ সহযোগীরা বেশ গৌরবের সঙ্গে এখনো বলে থাকেন, সোনিয়া ভারতবাসীকে জনবান্ধব পঞ্চায়েত আইন ও খাদ্যনিরাপত্তা আইন দিয়েছেন। এ কথা কারও অবিদিত নয় যে দলীয় কাজ করার চেয়ে সরকারি কাজেই তখন সোনিয়া গান্ধীর সময় কেটেছে বেশি। মনমোহন দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর পদে বসে প্রথম যে কথাটি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন, তা হলো যখনই রাহুল গান্ধী ভারতের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বোধ করবেন, তখনই তিনি খুশিমনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ত্যাগ করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী না হয়ে এতটাই স্পষ্টভাবে কর্মচারীর ভূমিকা পালন করছিলেন যে একটি সংবাদ সম্মেলনে যখন রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের সামনে ইউপিএ সরকারের পাস করা একটি অধ্যাদেশ ছিঁড়ে ফেলেন, তখন তা কাউকেই অবাক করেনি। আমার নিজের ধারণা, মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সে সময় সঠিকভাবে কাজ করতে দেওয়া হলে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির পক্ষে জয়ী হওয়া আরও কঠিন হত। মনমোহনের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময় দিল্লির সরকারি বলয়ে এ কথা কারও কাছে অবিদিত ছিল না যে তিনি তাঁর বসের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনো গুরুতর সিদ্ধান্ত নিতে বা নীতি ঠিক করতে পারতেন না। আমি একাধিকবার বলেছি, আমি বিশ্বাস করি, পি ভি নরসিমা রাওয়ের অধীনে অর্থমন্ত্রী থাকাকালে মনমোহন যে সংস্কারগুলো নিয়ে এসেছিলেন, তা ভারতকে বদলে দিয়েছে। অনেকটা সে কারণে আমি মনমোহন সিংয়ের একজন অবিচল ভক্ত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct