আপনজন ডেস্ক : প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক সারার পর ফের আজ, বৃহস্পতিবার আরেক প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই বৈঠকে দুটি দেশের মধ্যে ৯টি সমঝোতা চুক্তি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তার মধ্যে তালিকায় তিস্তা জলবণ্টন চুক্তিও রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে আসন্ন বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এই চুক্তি কতটা কার্যকর হবে সেদিকেই থাকবে সকলের নজর।
তবে বুধবার বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, ভার্চুয়াল বৈঠকে ৯টি বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে। তবে এখন কিছু চূড়ান্ত হয়নি। এবিষয়ে কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, তিস্তা জলবণ্টন, কোভিড সহযোগিতা, বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ, যোগাযোগ, সীমান্ত হত্যা, রোহিঙ্গা সংকট ও বিদ্যুৎ নিয়ে দুদেশের মধ্যে আলোচনা হওয়ার সম্ভবণা রয়েছে।
এছাড়া ভার্চুয়াল বৈঠকের মধ্যে দুইদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত-বাংলাদেশের চিলাহাটি-হলদিবাড়ির মধ্যে ৫৫ বছরের পুরনো রেল যোগাযোগের পথ পুনরায় উদ্বোধন করবেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ ছিল।
দুদেশের মধ্যে জলবণ্টন নিয়ে বলতে গিয়ে বুধবার মোমেন বলেন, ঢাকা দু’দেশের মধ্যে বয়ে চলা প্রধান সাতটি নদী মনু, মুহুরি, গোমতি, ধরলা, দুধকুমার, ফেনী ও তিস্তার জল বণ্টনের ইস্যুটিকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার প্রস্তাব দেবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শিগগিরই, এমনকি যদি সম্ভব হয় আগামী মাসেই এই অভিন্ন সাতটি নদীর জল বন্টন ইস্যু সমাধানের লক্ষ্যে একটি কাঠামো গড়ে তুলতে মন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব রাখা হবে। সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পটিও জেআরসি বৈঠকের অন্যতম এজেন্ডা হবে। ১০ বছর আগে ২০১০ সালে নয়া দিল্লিতে সর্বশেষ জেআরসি’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, চুক্তিটি অনেক আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। এমনকি ভারতের পক্ষ থেকে চুক্তির প্রতিটি পাতায় স্বাক্ষর করা হয়েছে।বিগত কয়েক বছর ধরে দিল্লি চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য বারংবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা। তবে বাংলাদেশ যে এখনও চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপার দিল্লির ওপর ছেড়ে দিয়েছে এবিষয়েও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন মোমেন।
এদিকে কোভিড ভ্যাকসিন সবরাহ নিয়ে কথা হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। মহামারী রুখতে বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দিয়ে সহযোগীতার কথা অনেক আগে দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে ৩০ মিলিয়ন ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকিসন সরবরাহে জন্য ৫ নভেম্বর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মোমেন বলেন, ঢাকা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভারতকে রাষ্ট্রসংঘে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাবে। চলতি বছর রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য বাংলাদেশ ভারতকে সমর্থন দিয়েছে। তাই আমরা ভারতকে বলতে চাই, যদি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না হয়, তবে গোটা অঞ্চলেই অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে, যা মায়ানমারে ভারত বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। ভারত আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ইউএনএসজি বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য ঢাকা প্রতিবেশী দেশ ভারতে কাছে এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সমর্থন চাইবে। এছাড়া সীমান্তে সুরক্ষা ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে সমাধানের রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করা হবে। বাণিজ্য সহযোগিতা নিয়ে মোমেন জানান, বাংলাদেশের পাট আমদানির ক্ষেত্রে এন্টি-ডাম্পিং পলিসি প্রত্যাহারের জন্য ভারতের কাছে আহ্বান জানাবে।
বিদ্যুৎ নিয়ে সরবরাহ নিয়ে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতে উৎপাদন করা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ সম্ভাব্য ক্ষেত্রে এখন এদেশে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতে রপ্তানি করতে চাইছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ভারতের সহায়তায় ভুটানের মতো তৃতীয় কোন দেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চাইছে। ভুটান বাংলাদেশের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ইচ্ছুক।
যোগাযোগ ক্ষেত্র নিয়ে বাংলাদেশ জানিয়েছে, দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ ঘোষণা করবেন। সড়কটি বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে মেহেরপুরের মুজিবনগরে জিরো লাইনে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি বলেন, সড়কটি যে স্থানে অবস্থিত সেখানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়। সড়কটি দু’দেশের জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct