আপনজন ডেস্ক: এ রাজ্যে প্রায় প্রবাদে পরিণত হচ্ছিল বাম ও তৃণমূল নেতারা ‘এক ঘাটে জল খান না’। কিন্তু সোমবার শিলিগুড়িতে গান্ধি মূর্তির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রায় দশ বছর পর একই মঞ্চে দেখা গেল ‘সাপে নেউলের সম্পর্কের’ যুযুধান দুই নেতা শিলিগুড়ি পুরবোর্ডের প্রশাসক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য ও রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিমের। আর তাতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে রুখতে নতুন সমীকরণের সম্ভাবনা উসকে দিল।
দীর্ঘ বাম শাসনের অবসানের পর রাজ্যে আসে পরিবর্তনের সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বাম নেতাদের আদায় কাচকলার সম্পর্ক হয়ে দাঁড়ায়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে কোনও তৃণমূল নেতাকে বামেদের সঙ্গে একমঞ্চে দেখা যেত না। পাছে ভয়, দল বিরোধী তকমা পেয়ে বহিষ্কার না হয়ে যান।
তবে, এটা ঠিক বহু বাম বিধায়ক তৃণমূলে যোগদান করার পর আর পুরনো কর্মী বা বাম নেতাদের ছায়া মাড়ানোর চেষ্টা করেননি। একইভাবে বাম নেতাদের দেখা যেত না রাজ্য সরকারের কোনও অনুষ্ঠানে। স্থানীয় বিধায়ক বা সাংসদ হওয়ার সুবাদে আমন্ত্রিত হলেও রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে গরহাজির থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেন্। এর ফলে, দুই রাজনৈতিক নেতাদের মধ্য ব্যক্তিগত সম্পর্কেও ফাটল ধরতে শুরু করে বলেও অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে বাম দলের কর্মীদের উপর তৃণমূলের অত্যাচারের অভিযোগ ওঠার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হয়। একে অন্যদের এড়িয়ে চলতে থাকেন। আর পরস্পরকে রাজনৈতিকভাবে সমালোচনার বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে পদ্মফুলের আচমকা বিকাশের পর থেকে সাপে-নেউলের সম্পর্ক অনেকটাই শিথিল হয় বা-কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে। ইদানীংকালে, রাজনৈতিক বৈরিতায় বাম কংগ্রেসের প্রতি অনেকটাই নরম হতে দেখা গেছে শাসক দলকে। সেই তুলনায় বিজেপিকেই বেশি নিশানা করেছে তৃণমূল। শাসক দল স্বীকার করুক বা না করুক বিজেপি এ রাজ্যে শক্তি যে বাড়িয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। যেভাবে অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির শীর্ষ নেতারা বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছে তাতে খানিকটা হলেও বিচলিত তৃণমূল তাতে সন্দেহ নেই।
অন্যদিকে, আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম এ রাজ্যে আসার জন্য কড়া নাড়ছে। পলে, ভোট ভাগাভাগির খেলায় বিজেপির ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। সাধারণ মানুষজনের মধ্যে অনেকেরই মনে সন্দেহ দানা বাঁধছে আসন্ন একেুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতা না পেলেও তৃণমূল কি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে? তখন, বিজেপিতে ঠেকাতে বাম-কংগ্রেস প্রভৃতি অবিজেপি অসাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে জোট বাাঁধার প্রয়োজন হবে না তো, সেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে।
রাজনীতির খেলা সব সম্ভব। যে কংগ্রেস বিহারে মূলত লালু যাদবের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল তারাই এখন বিজেপিকে ঠেকাতে এক দশক ধরে লালুর সঙ্গে। মহারাষ্ট্রে বিজেপিকে রুখতে শিবসেনা সরকার গঠনে কংগ্রেসের সমর্থন এই সব প্রশ্ন ভাবাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে। সেই ইঙ্গিত উসকে দিয়েছে সোমবার শিলিগুড়িতে একই মঞ্চে পুরবোর্ডের প্রশাসক অশোক ভট্টাচার্য ও রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতি। ওই মঞ্চে ছিলেন, কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারও। সোমবার শিলিগুড়ির কাছারি রোডে ছিল গান্ধি মূর্তির উন্মোচন অনুষ্ঠানের মঞ্চে পাশাপাশি বসলেন দু’জনে। যা অবাক করেছে রাজনৈতিক মহলকে। কারণ, বিধানসভায় এই ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন অশোক ভট্টাচার্য।
জানা গেছে, গত দশ বছর অশোক ভট্টাচার্য ও ফিরহাদ হাকিমকে এক মঞ্চে দেখা যায়নি। সোমবার সরকারি অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে পাশাপাশি বসে বাক্যালাপ তাই জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি রুখতে প্রয়োজন হলে বামেদের সমর্থন নেওয়ার জন্য কি এক মঞ্চে বসে বার্তা দেওয়া, সেই প্রশ্ন ব্যাপকভাবে ঘুরছে। যদিও এ নিয়ে অশোক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, পুরমন্ত্রীর উদ্যোগে এই মূর্তির জমি পেয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভা। তাই উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো। ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এখানে আসার মধ্যে রাজনীতি নেই। গান্ধি মূর্তির উন্মোচন অনুষ্ঠানে রাজনীতি খোঁজা অনুচিত। তবে, যেভাবে দুই নেতাই মঞ্চে থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তা কিসের ইঙ্গিত তা রাজ্যের জনগণই ভাল বুঝতে পারবেন তাতে সন্দেহ নেই।
যদিও এ ব্যাপারে রাজ্য বিজেপি সভাপতি ‘সিঁদুরে মেঘ দেখছেন’ এই দুই নেতার একই মঞ্চে থাকাটাকে। তাই তিনি মন্তব্য করলেন, ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct