আপনজন ডেস্ক: ফেদেরারের সেই চিঠি—
ভামোস, রাফায়েল নাদাল,
নিশ্চয়ই টেনিস থেকে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছ। আমি আবেগতাড়িত হয়ে পড়ার আগেই কিছু কথা বলতে চাই।
যে কথাটা আসবেই, সেটা দিয়েই শুরু করা যাক: তুমি আমাকে হারিয়েছ—অনেকবার। আমি তোমাকে যতবার হারিয়েছি, তার চেয়ে বেশি। আর কেউ তোমার মতো চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি। ক্লে কোর্টকে মনে হতো তোমার উঠান, শুধু টিকে থাকার জন্যই কল্পনাতীত পরিশ্রম করতে হতো। তুমি আমাকে নিজের খেলা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছ, এমনকি একটু বাড়তি সুবিধা পেতে র্যাকেটের মাথার আকার পর্যন্ত বদলাতে হয়েছে। আমি কুসংস্কারে বিশ্বাসী লোক নই, কিন্তু তুমি বিষয়টিকে অন্য মাত্রা দিয়েছ। (ম্যাচের আগে) যেসব বিষয় তুমি মানো, গোটা প্রক্রিয়াটা—পানির বোতলগুলোকে খেলনা সৈন্যদের মতো সাজিয়ে রাখা, চুল ঠিক করা, অন্তর্বাস ঠিক করা...এই সবকিছুতেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনোযোগ তোমার। আমি কিন্তু গোপনে এসব ভালোবেসেছি। কারণ, ব্যাপারগুলো অনন্য, যেখানে তোমাকে খুঁজে পাই।
আর রাফা, তুমি কি জানো খেলাটিকে আরও বেশি উপভোগ করেছি শুধু তোমার জন্য।
প্রথম দিকে হয়তো তেমন ছিল না। ২০০৪ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর প্রথমবারের মতো র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠলাম। দুই মাসের জন্য মনে হয়েছিল, গোটা পৃথিবীই আমার। তারপর মায়ামির কোর্টে লাল হাতাবিহীন জার্সি পরে বাইসেপগুলো (হাতের পেশি) দেখিয়ে তুমি নামলে এবং আমাকে সহজেই হারালে। তোমার বিষয়ে কথাগুলো কানে আসছিল—মায়োর্কা থেকে অবিশ্বাস্য এক খেলোয়াড় এসেছে, প্রজন্মান্তরের প্রতিভা, একদিন হয়তো গ্র্যান্ড স্লাম জিতবে—এগুলো শুধু মুখের কথা ছিল না। আমাদের অভিযাত্রার শুরুতেও আমরা ছিলাম, শেষেও আছি। রাফা, ২০ বছর পর আমাকে বলতেই হবে: কী অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ার তোমার! ১৪টি ফ্রেঞ্চ ওপেন—ঐতিহাসিক! তুমি স্পেনকে গর্বিত করেছ... গর্বিত করেছ গোটা টেনিস–বিশ্বকেও।
আমাদের স্মৃতিগুলো মনে ভাসে। একসঙ্গে খেলাটার প্রসারের কাজ করেছি। সেই ম্যাচটা আমরা অর্ধেক ঘাস ও অর্ধেক ক্লের কোর্টে খেলেছি। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে ৫০ হাজার দর্শকের সামনে সর্বকালের সর্বোচ্চ দর্শকের রেকর্ড ভেঙেছি। কত মজা করেছি, কোর্টের বাইরে কত খুনসুটি হয়েছে, আবার কখনো কখনো ট্রফি বিতরণী অনুষ্ঠানে (ক্লান্তিতে) আক্ষরিক অর্থেই একে অন্যকে ধরে রাখতে হয়েছে।
২০১৬ সালে মায়োর্কায় রাফা নাদাল একাডেমিতে তুমি আমায় নিমন্ত্রণ করেছিলে। সে জন্য আমি এখনো কৃতজ্ঞ। আসলে তো নিজেই নিজেকে দাওয়াত দিয়েছিলাম। জানতাম, তুমি এত বিনয়ী যে আমাকে সেখানে যাওয়ার জন্য জোর করতে পারবে না। কিন্তু আমি নিজে সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইনি। তুমি গোটা বিশ্বের শিশু–কিশোরদের আদর্শ। মিরকা (স্ত্রী) ও আমি অত্যন্ত খুশি যে আমাদের সন্তানেরা তোমার একাডেমিতে অনুশীলন করেছে। হাজারো বাচ্চাদের মতো তারাও অনেক কিছু শিখেছে, অনেক মজাও করেছে। যদিও একটা দুশ্চিন্তা ছিল। আমার বাচ্চারা হয়তো বাঁ হাতে খেলবে!
তারপর লন্ডন...২০২২ সালে লেভার কাপ। আমার শেষ ম্যাচ। তুমি আমার পাশে ছিলে, প্রতিপক্ষ নয়, দ্বৈতের সতীর্থ হিসেবে—এটাই ছিল আমার কাছে সবকিছু। সেই রাতে তোমার সঙ্গে কোর্টে দাঁড়ানো, একসঙ্গে কান্না—আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিশেষ মুহূর্তগুলোর একটি।
রাফা, আমি জানি তুমি এখন তোমার মহাকাব্যিক ক্যারিয়ারের শেষ নিয়ে মনোযোগী। সেটা শেষ হওয়ার পর আমরা কথা বলব। আপাতত এখন আমি তোমার দল ও পরিবারকে অভিনন্দন জানাই। তোমার সফলতায় তাদের বিশাল অবদান। তোমাকে এটাও জানিয়ে রাখতে চাই, তোমার সেই পুরোনো বন্ধুটি সব সময়ই তোমার জন্য গলা ফাটায় এবং সামনে যা করবে, সেসবের জন্যও সর্বোচ্চটুকু দিয়েই সমর্থন দেবে।
রাফা, আজ এটুকুই!
সব সময়ের জন্য শুভকামনা, তোমার ভক্ত
রজার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct