ভারতের ভোটিং প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বছরের পর বছর ধরে যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইভিএম, ভোটদান প্রক্রিয়াকে সহজ করণ করার জন্য চালু করা হয়েছিল। কিন্তু আজকের দিনে ইভিএম এর স্বচ্ছতা, সম্ভাব্য টেম্পারিং এবং নির্বাচনী ফলাফলের বৈধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে একাধিক রাজনৈতিক দল ও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। লিখেছেন পাশারুল আলম।
ভা রতের ভোটিং প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বছরের পর বছর ধরে যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইভিএম, ভোটদান প্রক্রিয়াকে সহজ করণ করার জন্য চালু করা হয়েছিল। কিন্তু আজকের দিনে ইভিএম এর স্বচ্ছতা, সম্ভাব্য টেম্পারিং এবং নির্বাচনী ফলাফলের বৈধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে একাধিক রাজনৈতিক দল ও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। যখন অনেক দেশ একই ধরনের সমস্যার কারণে ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম থেকে দূরে সরে গেছে, তখন ভারত EVM-এর প্রতি তার প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছে। এত বিতর্ক এত বাড়তি সংশয় থাকা সত্ত্বেও ভারতের নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিষয়ে দেশ এবং বিদেশের সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে, ইভিএমের প্রাথমিক ত্রুটি হল তাদের স্বচ্ছতার অভাব। কাগজের ব্যালটে ভোটারা শারীরিকভাবে তাদের পছন্দ যাচাই করতে পারে। অন্যদিকে ইভিএম ভোটারদের ভোট সঠিকভাবে রেকর্ড করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা কঠিন করে তোলে। যদিও ভারতের নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেল (VVPAT) চালু করেছে। চালু করলেও তা গণনা করার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই অনেকের মনে সন্দেহ রয়ে গেছে। এই সন্দেহের একাধিক কারন রয়েছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের মধ্যে একটি হল হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা। যদিও ভারতের নির্বাচন কমিশন জোর দিয়ে বলেন যে, ইভিএম সুরক্ষিত। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে, কোনও ইলেকট্রনিক সিস্টেম ম্যানিপুলেশন থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত নয়। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, অত্যাধুনিক হ্যাকিং কোনো চিহ্ন না রেখে নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। নির্বাচন কমিশন কোনো অস্বচ্ছতার কথা বার বার অস্বীকার করলেও রাজনৈতিক দলের হাতে ইভিএম মেশিন হস্তান্তর করেনা। এটি করলে হয়তো বোঝা যেত হ্যাকিং বা ম্যানিপুলেশন করা সম্ভব কিনা? মাঝে মাঝে এমন অভিযোগ আসে। ভোটার যে প্রতীকে ভোট দিল ভিভিপ্যাটে সেই প্রতীক দেখানো হয় না। এই নিয়ে প্রচুর অভিযোগ প্রতি নির্বাচনে আসে। এই অভিযোগের প্রত্যুত্তরে নির্বাচন কমিশন টেকনিক্যাল ভুল বলে দায় সারতে চান। কিন্তু বাস্তবের এই সত্যটাকে অস্বীকার করতে পারেন না। অনেকেই আবার মনে করেন, মোবাইল ফোনে গেম খেলতে গেলে ধীরে ধীরে তা গতিপ্রাপ্ত হয়ে টেম্পারিং হয় ঠিক তেমনি ইভিএম মেশিন দুই চারশ ভোট পড়ার পর একটি নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট পড়তে পারে, যদি সেই ভাবে ম্যানুয়াল করে দেওয়া থাকে। এই অভিযোগ যদি সত্য হয় তাহলে মকপোল করার সময় চল্লিশ পঞ্চাশটি ভোটে তা ধরা পড়বে না।
তাই নিরাপত্তার কারণে বেশ কিছু দেশ ইভিএম থেকে দূরে সরে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং আয়ারল্যান্ড ইভিএমের নির্ভরযোগ্যতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই উদ্বেগে এই সমস্ত দেশ কাগজের ব্যালটে ফিরে এসেছে। ভারতের সমালোচকরা প্রায়শই এই ঘটনাগুলিকে সতর্কতামূলক ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করে। তাই বহু মানুষ পরামর্শ দেয় যে, ভারতের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং ভারতবর্ষেও ইভিএম তুলে দিয়ে কাগজের ব্যালট দিয়ে ভোটের ব্যবস্থা করা জরুরী।
এই কারনে নির্বাচনী ফলাফলের উপর পরাজিত প্রার্থী, দল ও নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশ্বাস করে যে, ইভিএম নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর ভোটারের আস্থা নষ্ট করে। ভোট প্রদানের পর একটি শারীরিক রেকর্ডের অভাবের অর্থ হল স্বাধীনভাবে ফলাফল যাচাই করার কোন উপায় নেই। যা অবিশ্বাসকে উস্কে দিচ্ছে। তাই একাধিক নির্বাচনী ফলাফলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে। এই উদ্বেগ দূর করার জন্য নিয়ে আসা VVPAT কিন্তু তার স্লিপগুলি এই গণনা করা হয় না। যদি এই ভিভিপ্যাট গণনা করা হতো, তাহলে বোঝা যেত ইভিএম এর সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কোন গরমিল আছে কিনা ? পাঁচ শতাংশ গণনার কথা বলা হলেও তা সঠিকভাবে কার্যকরী হয় না। কেননা, তার পূর্বেই নির্বাচনের ফলাফল বহু ক্ষেত্রে ঘোষিত হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, VVPAT গুলির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। VVPAT ইউনিটগুলি একটি মুদ্রিত স্লিপ প্রদান করে। যা একটি সিল করা বাক্সে জমা করার আগে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভোটারের পছন্দ দেখায়, তবে এটি সম্পূর্ণ পুনঃগণনার জন্য খুব কমই ব্যবহৃত হয়। এর কালি ব্যাংকের এটিএম এর প্রদত্ত স্লিপ গুলির কালীর মতোই তাই এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে, VVPAT ব্যবহার করা হলেও এর দ্বারা শারীরিক প্রমাণপত্র হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা অপর্যাপ্ত। তাই কাগজের ব্যালট ব্যবহার করে ভোটের একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভোট প্রক্রিয়া সম্ভব।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন এবং ইভিএম সমর্থকরা যুক্তি দেয় যে, মেশিনগুলি কাগজের ব্যালটের তুলনায় অনেক সুবিধা দেয়, যেমন দ্রুত ফলাফল দেওয়া সম্ভব হয়। মানুষের ভুলের সম্ভাবনা হ্রাস এবং সহজলভ্যতা। এছাড়া এর রয়েছে গতি এবং দক্ষতা। ইভিএম গণনা প্রক্রিয়াটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুততর করেছে। ভারতের মতো একটি বড় দেশে, যেখানে বিশাল নির্বাচনী এলাকা জুড়ে নির্বাচন হয়, ইভিএম কাগজের ব্যালটের তুলনায় অনেক দ্রুত ভোট ও ফলাফল দেয়। এই দক্ষতা দীর্ঘায়িত রাজনৈতিক উত্তেজনা এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
এই যুক্তির বিপক্ষে যারা আছেন, তারা বলেন, ভারতবর্ষের ভোট প্রক্রিয়া একদিনে তো হয় না, সাধারণ নির্বাচন দুই মাস ব্যাপী চলে। বিধানসভা নির্বাচনগুলিও পনের দিন থেকে এক মাস ব্যাপী চলে। ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যদি তাড়াহুড়ো না থাকে তাহলে ভোট গণনার জন্য এত তাড়াহুড়া কেন ? ইভিএম এ প্রদত্ত ভোটের ফলাফল একদিনে পাওয়া যায়। কাগজের ব্যালটে ভোট হলে ফলাফল না হয় দুই দিনে পাওয়া যাবে। এতে মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে, দেশের নাগরিকও নির্বাচন কমিশন।
ইভিএম এর স্বপক্ষে আরো বলা হয়ে থাকে, ইভিএমগুলি অবৈধ বা নষ্ট ভোটের সমস্যাকে কমিয়ে দেয়, যা কাগজের ব্যালটে সাধারণত হয়ে থাকত। এখন একটি বোতাম টিপে ভোট প্রদান হয়ে যায়। এছাড়া প্রবক্তারা যুক্তি দেন যে, ইভিএম ব্যবহার পরিবেশ বান্ধব। কারণ তারা প্রচুর পরিমাণে কাগজের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে। এটি ভারতের মত বিশাল দেশে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। যেখানে কাগজের ব্যালটের ফলে সম্পদের ব্যাপক অপচয় বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।
এই যুক্তি প্রসঙ্গে সমালোচকরা বলেন, ভিভিপ্যাটে কাগজ ও কালি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এতে পরিমাণে কম হলেও কাগজ কালির ব্যবহার হয়ে থাকে। কাগজ পরিবেশকে দূষিত করে না। প্রতিদিন প্রতিনিয়তই টনটন প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই নিয়ে সরকারের কোন মাথাব্যথা নেই। ব্যালট পেপারে পরিবেশ দূষিত হবে এই নিয়ে যত চিন্তা। এছাড়া বলা হয়ে থাকে, অর্থ সাশ্রয়ের কথা। কিন্তু দেশের নাগরিক জানে, ভোটের নামে যে অর্থের অপচয় হয় সরকারিভাবে এবং বিভিন্ন প্রার্থী এবং দলের মধ্য দিয়ে, সেখানে কাগজ কোন ফ্যাক্টরই নয়।
ভারতীয় নির্বাচন কমিশন ধারাবাহিকভাবে বলে ইভিএম গুলি সুরক্ষিত, কেননা,ইভিএম ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই স্বতন্ত্র মেশিন, যা তাদের হ্যাকিংয়ের জন্য কম সংবেদনশীল করে তোলে। প্রতিটি ইভিএমের অখণ্ডতা নিশ্চিত করার জন্য তারা সুরক্ষিত প্রোটোকল এবং শারীরিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবহারকেও হাইলাইট করে, যেমন ট্যাম্পার-স্পষ্ট সিল। অন্যদিকে বহু ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার এই কথা মানতে চান না। যদিও বা এই দিকে সুরক্ষিত হয়ে থাকে কিন্তু মাঝে মাঝে শোনা যায়, ইভিএম মেশিন চুরি, অন্যের গাড়িতে ইভিএম মেশিন উপলব্ধ হওয়া কিংবা স্টং রুম থেকে মেশিন পরিবর্তন। এই অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে ভোটার স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বাস হারাবে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিষয়ে
বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবিদ এবং জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিতর্কের গভীরতা বোঝার জন্য বিভিন্ন বিষয় অন্বেষণ করলে দেখা যায়, ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) দৃঢ়ভাবে ইভিএমের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তাদের যুক্তি কয়েক বছর ধরে কঠোর পরীক্ষা এবং নিরাপত্তা বর্ধনের মধ্য দিয়ে তারা এগিয়ে গেছে। ইসিআই-এর মতে, অসংখ্য প্রযুক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রগুলিকে টেম্পার-প্রতিরোধী এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছে। এই কথা বলা হলেও পরীক্ষার জন্য সর্ব সাধারনের কাছে কোনো পথ নেই, বিশেষ করে ইভিএম মেশিন নির্মাণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য যে পরিচালক মন্ডলী তা বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়ায় কারনে বার বার বিরোধীরা প্রশ্ন তোলে। তাই রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য । বিরোধী দলের কিছু নেতা ইভিএমের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে যখন নির্বাচনের ফলাফল প্রতিকূল হয়। এই নেতারা যুক্তি দেন যে, কাগজের ব্যালটে ফিরে গেলে জনগণের আস্থা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। অন্যরা, বিশেষ করে যারা ইভিএমের পক্ষে, তারা যুক্তি দেয় যে, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই মেশিন গুলির উপর প্রশ্ন করা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুন্ন করে। এই প্রমান সংগ্রহ করতে গেলে মেশিনের ভিতরের সমস্ত বিষয়ে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কমিশন এই বিষয়টি গোপনে রাখতে চায়। তাই প্রমান করা সম্ভব হয়না। তবে ভোট প্রক্রিয়ায় যখন গরমিল হয় তখন এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ভোট চলাকালীন অবস্থায় যে সমস্ত দৃশ্য পরিস্ফুটিত হয়েছে তাতে ইভিএম মেশিন যে একশ শতাংশ সঠিক নয় তার হাজারো প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এই বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হল, অনেক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, ইভিএম তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত হলেও কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেম টেম্পারিং থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত নয়। এই বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা যেমন রুটিন অডিট বা কাগজ-ভিত্তিক ভোটে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তাদের কথাও গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে মনে হয়না।
এত গেল বিশেষজ্ঞদের কথা কিন্তু সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিষয়টি বিভাজনমূলক। কারো কারো জন্য, ইভিএম অগ্রগতি এবং দক্ষতার প্রতিনিধিত্ব করে, অন্যরা সন্দেহের চোখে দেখে। যারা কাগজের ব্যালটে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে তারা যুক্তি দেয় যে কাগজের ভোট দেওয়ার স্পর্শকাতর অভিজ্ঞতা নাগরিক কর্তব্যের অনুভূতিকে শক্তিশালী করে এবং নিশ্চিত করে যে তাদের পছন্দটি সঠিকভাবে রেকর্ড করা হয়েছে। সঠিকভাবে রেকর্ড হলো কিনা তা জানার এবং বুঝার অধিকার রয়েছে একজন নাগরিকের। ইভিএম ভোট প্রক্রিয়া এই অধিকারকে ক্ষুন্ন করে। একজন ভোটার ভোট দিলেন একটি মেশিনে, সেই মেশিন সঠিক নাকি বেঠিক তা জানার ক্ষমতা, দক্ষতা বা অধিকার কোনোটিই নাগরিকের নেই। বহু ভোটার এমনও বলেন, ভোট দিয়ে কি লাভ, ভোট যেখানেই দিই, ভোট তো ঐ দলে যাবে। একই ভাবে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য কোনো কোনো নেতা বলেন, ভোট যেখানে দিন, ভোট তো আমার দলের দিকে যাবে। এই যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তা থেকে নাগরিক কিভাবে মুক্ত হতে পারবে ? তাই নাগরিকের এই প্রশ্ন করা এবং ভোট প্রক্রিয়া বদলের দাবি করা ন্যায় সঙ্গত। নির্বাচন কমিশনের কথায় শেষ কথা, নাকি জনগণের কথায় শেষ কথা। একটি গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকই হল মূল চালিকাশক্তি। নাগরিকের দাবিকে নির্বাচন কমিশন কোন মতেই উপেক্ষা করতে পারে না। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন ইভিএম নাকি কাগজের ব্যালট ? কোনটি নাগরিকরা চায়, তার উপরে একটি ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারে। কেননা, ভোট দেওয়ার অধিকার নাগরিকের তাই কোর্ট কাছারি কিংবা সরকার আমলার নয়, এতে জনগনের রায়কে চূড়ান্ত হিসাবে ধরা হোক। এতে করে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে। তার উপরে ভিত্তি করে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে, দেশের নির্বাচন ইভিএম এ হবে নাকি কাগজের ব্যালট দিয়ে ভোট হবে।
উভয় পক্ষের শক্তিশালী যুক্তি মূল্যায়ন করে বেশ কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ একটি মধ্যম পথ, হাইব্রিড পদ্ধতির প্রস্তাব করেন। এতে প্রতিটি নির্বাচনে বাধ্যতামূলক VVPAT পুনঃগণনার সাথে ইভিএম ব্যবহার করা বা স্বচ্ছতার উদ্বেগ দূর করতে নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় কাগজের ব্যালটের আংশিক পুনঃপ্রবর্তন করার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। শেষ পর্যন্ত, ইভিএম এবং ব্যালট নিয়ে বিতর্ক আস্থা, স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তৃত প্রশ্ন তুলে ধরে। যেহেতু ভারত তার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আধুনিকরণ করে চলেছে, দক্ষতা এবং ভোটারদের আস্থার মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বের করা অপরিহার্য হবে৷ ভালো অডিটিং, VVPAT-এর বর্ধিত ব্যবহার বা অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে হোক না কেন, ভারতের নির্বাচনের অখণ্ডতা, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা মূল দাবি হওয়া উচিত।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যালট এবং ইভিএমের মধ্যে লড়াই শুধুমাত্র ভোটের পছন্দের পদ্ধতির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল একটি স্বচ্ছ, বিশ্বস্ত নির্বাচন ব্যবস্থা। যেখানে জনগণের দাবির প্রতিফলন ঘটবে এবং নাগরিকের বিশ্বাসের পূর্ণতা পাবে। এমন ভোট প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্রের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে। তাই ইভিএম বাতিল করে কাগজের ব্যালট চালু সময়ের দাবি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct