সেখ রিয়াজউদ্দিন, বীরভূম: বীরভূম জেলার মানচিত্রে জায়গা দখল করে আছে দুবরাজপুরের মামা-ভাগ্নে পাহাড় যাহা পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত।স্থানীয় সহ দূর দূরান্ত থেকে বহু পর্যটক শীতের সময় আনন্দঘন মুহূর্ত, বা মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে আসেন এই পর্যটন ক্ষেত্রে।
কিন্তু সম্প্রতি দেখা যায় আগের চেহেরায় নেই দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বর বা মামা-ভাগ্নে পাহাড়। এখন মামা- ভাগ্নে পাহাড়ের ঐতিহ্য ঘিরে চলছে সমাজ বিরোধীদের আখড়া। হারাচ্ছে গরিমা, বিমুখ হয়ে ফিরে যাচ্ছে পর্যটকেরা। ঐতিহ্য নষ্ট বা পরিবেশ কলুষিত নিয়ে সরব হয়ে ওঠেন স্থানীয় দুবরাজপুর শহরের বিশিষ্টজনেরা। বীরভূমের ঐতিহাসিক জায়গা,প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে ভরপুর এই মামা-ভাগ্নে পাহাড়। তাই বিখ্যাত চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের অনেক সিনেমায় ফ্রেম বন্দি হয়ে আছে মামা- ভাগ্নে পাহাড়ের চোখ মাতানো দৃশ্য। পাহাড়টিকে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর তথা আকর্ষণীয় করে তুলতে দুবরাজপুর পৌরসভার উদ্যোগে এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি তথা কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রী প্রনব মুখোপাধ্যায়ের অর্থানুকূল্যে গড়ে তোলা হয় একটি শিশু উদ্যান,পাশাপাশি রয়েছে পাহাড়েশ্বর শিব মন্দির। যানজট পূর্ণ দুবরাজপুর শহরের বুকে শহরবাসীর কাছে এটা একটু খোলা মেলা শ্বাস নেওয়ার জায়গা, তেমনই পর্যটকদের কাছে ও আকর্ষণীয় একটি জায়গা।
আজ সেই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক জায়গা তিল তিল করে সমাজ বিরোধীদের হাতে চলে যাচ্ছে। ফলে দুপুরে , সন্ধ্যায় বসছে নিয়মিত মদের আড্ডা। বাইরে থেকে বহু মানুষ পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসলে এই সমাজ বিরোধীদের জোর জুলুমের বা আতঙ্কের শিকার হতে হয়, চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ফাকা মদের বোতল। এক নজরে দেখে মনে হবে না এটা বীরভূমের ঐতিহাসিক একটি জায়গা।
দুবরাজপুর শহরের এই মামা- ভাগ্নে পাহাড় ও পাহাড়েশ্বর শিব মন্দির এখন সমাজ বিরোধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। ২০০ মিটার দুরেই রয়েছে থানা ও দুবরাজপুর পৌরসভা। যে পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে এই এলাকা। দুবরাজপুর পৌরসভার পৌর প্রশাসক পীযুষ পান্ডে জানান, এই বিষয় নিয়ে কয়েকজন অভিযোগ করেছে, তদন্ত করে দেখছি বিষয়টি। যদি কোথাও কিছু পড়ে থাকে তাহলে আমরা পৌরসভার কর্মী দিয়ে সাফ করিয়ে দেব। পাহাড়েশ্বর নিয়ে কিছু মানুষ অপপ্রচার ছালাচ্ছে বলেও তিনি জানান। পাশাপাশি দুবরাজপুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমের শীর্ষসেবক স্বামী সত্যশিবানন্দ মহারাজ জানান, দুবরাজপুর পৌরসভার উদ্যোগে পাহাড়েশ্বরে একটি শিশু উদ্যান এবং একটি বিশালকার শিব মন্দির নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু সমাজ বিরোধী মানুষ এখানে মদ ও গাঁজার আসর বসিয়ে এখানকার ঐতিহ্য নষ্ট করছে। তাই আমারা দুবরাজপুর পৌরসভা এবং প্রশাসনের কাছে আবেদন অবিলম্বে নজর দিক। অন্যদিকে দুবরাজপুরের নাট্যকর্মী সুমনা চক্রবর্তী জানান, মামা-ভাগ্নে পাহাড় একটি ঐতিহাসিক জায়গা,বহু পর্যটক এখানে আসেন কিন্তু বিগত কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে এই জায়গাটা মদের আড্ডা বা আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তাই শুধু যে প্রশাসনকে বলব তা নয়, আমাদেরও উচিত এটার দিকে নজর দিতে। তাই এই ঐতিহাসিক জায়গার পরিবেশ ফেরাতে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহলের মানুষজন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct