আপনজন ডেস্ক: বিশ্ব কোকোয়া ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, শুধু ইউরোড-আমেরিকাতেই বছরে প্রায় ৩ মিলিয়ন টনেরও বেশি কোকোয়া বীজ কেনা-বেচা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, ৪০০০ বছর আগেই মেক্সিকোতে প্রথম কাকো গাছের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে অ্যাজটেকরা প্রথম চকোলেট পানীয় হিসেবে খাওয়া শুরু করেন ২৫০০ বছর আগে থেকে। সে হিসেবে চকলেটের ইতিহাস আড়াই হাজার বছর পুরোনো। ‘চকলেটের সত্য ইতিহাস’ (থেমস এবং হাডসন, ২০১৩) বইয়ের লেখক ইতিহাসবিদ সোফি এবং মাইকেল কো এর মতে, চকলেট শব্দটি এসেছে অ্যাজটেক শব্দ জোকোয়াটল থেকে।তখনকার সময় কোকোয়া বীজ থেকে এক ধরণের তেঁতো স্বাদযুক্ত পানীয় তৈরি হত। স্পেনীয় বিজয়ীদের মধ্য আমেরিকায় আসার আগ পর্যন্ত এভাবেই চকলেট খাওয়ার প্রচলন ছিল। ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মধ্য আমেরিকায় কোকো গাছ ও এই গাছের বীজ অত্যন্ত মূল্যবান বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়। সে সময় তারা কোকো গাছের বীজ থেকে গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘ্রাণ উৎপন্ন করতো। তারপর তা শুকিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রোস্টের মতো তৈরি করে তাপ দিয়ে বীজের খোসা ছাড়িয়ে ফেলে দিত। খোসা ছড়ানোর পর যা অবশিষ্ট থাকতো তাকে বলা হতো নিব। আর এই নিবের সঙ্গেই বিভিন্ন মসলার সংমিশ্রণে তৈরি করা হত চকলেট।।এই পানীয় তিক্ত প্রকৃতির হলেও তখনকার সময়ে এটি অভিজাত শ্রেণীর মানুষেরা কাছে জনপ্রিয় ছিল এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবে এই পানীয় পান করা হতো। এই পানীয় অত্যন্ত মূল্যবান হওয়ায় তা সাধারণ মানুষের পক্ষে ক্রয় করে খাওয়া সম্ভব ছিল না। এই গাছ এতটাই মূল্যবান ছিল যে, এই কোকো গাছের বীজ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মায়ানস এবং অ্যাজটেকস বিশ্বাস করতো, কোকোয়া বীজের রহস্যময় বৈশিষ্ট্য আছে। এ কারণে ধর্মীয় বিভিন্ন রীতি-নীতিতে তারা এর ব্যবহার করতো। এরপর স্প্যানিশরা প্রথম চকলেটের মধ্যে মিষ্টি যোগ করা হয়। জনশ্রুতি আছে, অ্যাজটেকের রাজা মন্টেজুমা স্প্যানিশ বিজয়ী রাজা হার্নান কর্টসকে তিক্ত চকলেট পানীয় পান করান। এই স্বাদ খুবই জঘন্য লেগেছিল রাজা হার্নানের কাছে। এরপর তার লোকেরা এতে বেত ফলের নির্যাস, চিনি এবং মধু যুক্ত করে বিশেষ পানীয় তৈরি করে স্পেনে ফিরে আসে। এরপর স্পেনে এই পানীয়র জনপ্রিয়তা দ্রুত বেড়ে যায়।চকলেট ১৮তম শতাব্দীতে ইউরোপীয়দের কাছে একটি ফ্যাশনেবল পানীয় ছিল। শিল্প বিপ্লবের সময় চকলেট উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এর ফলে কোকো গাছের উৎপাদনও বেড়ে যেতে শুরু করে। আফিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ভালো জন্মায় কোকো গাছ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct