আপনজন ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্ট জ্ঞানবাপি মামলায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের রুজু করা সব আবেদন খারিজ করে দিল। মঙ্গলবার ওই সব দেওয়ানি মামলার আবেদন খারিজ করে বিচারপতি রোহিত রঞ্জন আগরওয়াল বলেন, মামলাগুলো রাষ্ট্রীয় স্বার্থসংবলিত বিষয়।বারানসির কাশী বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপি মসজিদ হিন্দুদের মন্দির ভেঙে তৈরি বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশের দাবি। সেই দাবি আদায়ে নিম্ন আদালতে মামলাও করা হয়েছিল। এতে মসজিদের জায়গায় মন্দির প্রতিষ্ঠা ও পূজার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। পাল্টা মামলা করা হয় মসজিদ কর্তৃপক্ষের তরফে।
তাদের দাবি ছিল, ১৯৯১ সালে কেন্দ্রীয় ধর্মস্থান আইন অনুযায়ী ওই মামলা খারিজ করা হোক। হাইকোর্ট সেই দাবি নাকচ করে জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালে বারানসির নিম্ন আদালতে যে দেওয়ানি মামলা করা হয়েছিল, আগামী ছয় মাসের মধ্যে তার নিষ্পত্তি করতে হবে।১৯৯১ সালে বিতর্কিত স্থলে ‘ভগবান আদি বিশ্বেশ্বর বিরাজমান’–এর পক্ষে এক আবেদনে পূজার অনুমতি চেয়ে বারানসি নিম্ন আদালতে মামলা করা হয়। সেই মামলা চ্যালেঞ্জ করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। তাদের দাবি ছিল, ওই মামলা ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইনের পরিপন্থী।ওই আইনে বলা আছে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর চরিত্র যেমন ছিল, তার বদল ঘটানো যাবে না। ওই আইনে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল অযোধ্যার বিতর্কিত রাম জন্মভূমি—বাবরি মসজিদ, যেহেতু সেই সময় সেই বিবাদ ছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। হিন্দু মামলাকারীদের যুক্তি ছিল, জ্ঞানবাপি বিতর্ক স্বাধীনতার আগে থেকেই চলছে। তাই ১৯৯১ সালের কেন্দ্রীয় আইনের আওতায় পড়ে না।
বিচারপতি রোহিত রঞ্জন আগরওয়াল মঙ্গলবার তাঁর রায়ে বলেন, ১৯৯১ সালে করা মামলাটি ওই বছর প্রণীত কেন্দ্রীয় আইনের আওতাভুক্ত নয়। তাই মামলাটি বিচারযোগ্য। বিতর্কিত মসজিদের একটি মাত্র ধর্মীয় চরিত্র থাকতে হবে—হয় মুসলমান, নয় হিন্দু। জরিপের কারণে জ্ঞানবাপি মসজিদ বিতর্ক ইদানীং বহুল আলোচিত। ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের পক্ষ থেকে একাধিক মামলায় মসজিদ জরিপের দাবি জানানো হয়েছিল। আবেদনকারীদের দাবি, মন্দির ভেঙে যে মসজিদটা গড়া হয়েছিল, তার বহু প্রমাণ সেখানে রয়েছে। মসজিদের দেয়ালে হিন্দু দেবীর মূর্তি রয়েছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ যাকে অজুর জন্য ফোয়ারা বলে দাবি করেছে, হিন্দুদের দাবি সেটা আসলে শিবলিঙ্গ। সে জন্য নিম্ন আদালত মসজিদ চত্বর জরিপেরও নির্দেশ দিয়েছিল। ওজুখানার ফোয়ারার কার্বন ডেটিং করে তার বয়স নির্ধারণের দাবিও জানানো হয়েছিল। তারও দায়িত্বে ছিল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)।উল্লেখ্য, গত সোমবার এএসআই তার প্রতিবেদন সিল করা খামে আদালতে পেশ করে। তার এক দিন পরেই আজ মঙ্গলবার এল এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়। ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির রমরমার সময় এ রায় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।বিশেষ করে ২২ জানুয়ারি যখন অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে দেশজুড়ে সাজো সাজো রব উঠে গেছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বহুকাল ধরেই অযোধ্যা, কাশী ও মথুরার ‘মুক্তি’র দাবিতে আন্দোলন করে চলেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct