আপনজন ডেস্ক: অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন দিল্লি দাঙ্গার অভিযুক্ত কয়েদিরা। জেল কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করেছে, এই মর্মে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে আদালতে। দিল্লির অতিরিক্ত দায়রা আদালত মঙ্গলবার ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েদিদের সাথে অমানবিক আচরণ নিয়ে। কয়েদিদের সঙ্গে অনেক আচরণ করা হচ্ছে কেন, কেন নির্দিষ্ট সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে, কেন জেলকোড মানা হচ্ছে না- এসব অভিযোগের জবাব চাইলেন ক্ষুব্ধ বিচারক অমিতাভ রাওয়াত।
ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমে শুনানির সময় বিচারক অভিযোগগুলির গুরুত্ব উল্লেখ করে দিল্লির তিহার জেল ও মান্দলি জেল কর্তৃপক্ষর উদ্দেশ্যে বলেন, এই ধরনের মারাত্মক অভিযোগ বারবার আদালতে আসছে কেন? কেন অভিযোগ নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছে না? এখনই এসব বন্ধ করতে হবে। ডিজি প্রিজনকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, অভিযোগ অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা এই মর্মে আদালতকে জানাতে হবে। ২৩ নভেম্বর পুনরায় শুনানি হবে এই মামলার। ক্ষুব্ধ বিচারক বলেন, প্রয়োজনে আইনজীবী টিম নিয়ে আমি জেলখানা পরিদর্শনে আসব যদি অভিযোগকারীদের সুবিধা বহাল করা না হয়।
দিল্লির মান্দলি ও তিহার জেলে থাকা দিল্লি দাঙ্গার অভিযুক্তদের ১৫ জন বেশ কয়েকদিন থেকে অভিযোগ জানাচ্ছেন, তাদের জেলখানার নির্দিষ্ট সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। শীতের কাপড় দেয়া হচ্ছে না। বাড়িতে কে পটানো সামগ্রী ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে না। কংগ্রেস নেত্রী ইসরাত জাহানের আইনজীবী জানান, তার মক্কেল জেলখানার সেনা স্লিপার পরে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। বাড়ি থেকে পাঠানো স্লিপার ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না কারা কর্তৃপক্ষ। তার বাড়ি থেকে পাঠানো গরম পোশাক দেওয়া হচ্ছে না।
মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশের পর কয়েকজন জেনএনইউ ছাত্রদের পক্ষ থেকে দাঁড়ানো আইনজীবী অজিত পূজারী বলেন, এই নির্দেশ অন্য সব কয়েদিদের জন্য প্রযোজ্য করা হোক। কেননা, দিল্লি দাঙ্গার অভিযুক্ত সব কয়েদিদের একইরকম দুর্ভোগের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এবছর ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর যাদেরকে ইউপিএ-র বিভিন্ন ধারায় গ্রেফতার করা হয় তাদের মধ্যে অধিকাংশ ছাত্র ও কেন্দ্রের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনে শামিল ছিলেন।
জেল কর্তৃপক্ষের যুক্তি শীতের সময় গরম পোশাক নিয়ম থাকলেও তারা এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল। আইনজীবী মেহমুদ প্রচা বলেন জেল কোড বিরোধী কাজ করছেন জেল কর্তৃপক্ষ। বিচারক জানান কয়েদিদের জন্য জেলখানায় ন্যূনতম মানবিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ এই বিষয় নিয়ে বারবার একাধিক অভিযোগ আসছে আদালত পর্যন্ত। জেলখানার কি কেউ নেই এইখানে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, জেল কর্তৃপক্ষের সুবিধা দিচ্ছে না কেন, এই সব অভিযোগ উঠেছে বারবার।
অভিযুক্ত আথার খান বলেন, তার সঙ্গে কয়েকজন থাকা দুজন অভিযুক্তকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর। বেশ কয়েকজনকে নিভৃতে বাসে রাখা হয়েছে করোনার জন্য। এখানে কোনও ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। জামিয়ার ছাত্র আসিফ ইকবালের অভিযোগ, তাকে তার পরিবারের লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না কয়েক মাস যাবত। অভিযুক্ত মিরাজ হায়দার জানালেন, দিল্লির শীতে কাবু হয়ে জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত হলেও তার অভিযোগে কর্ণপাত করছে না জেল অথরিটি। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, দিল্লি দাঙ্গার অভিযুক্তদের আইন কাগজপত্র দেওয়া হচ্ছে না যেগুলি দেখাও হাতে পাওয়ার অধিকার রয়েছে অভিযুক্তদের। পদে পদে তারা জেল কর্তৃপক্ষের হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, উত্তর পূর্ব দিল্লি দাঙ্গায় ৫৩ জন নিহত হন এবং আহত হয়েছেন দুশোরও বেশি মানুষ। এজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কো-অর্ডিনেটর কমিটির সদস্য সাফুরা হায়দার, শফিউর রহমান, আপ কাউন্সিলার তাহির হুসেন, সমজাকর্মী খালিদ সাফি, সাদাব আহমেদ, তাসলিম আহমেদ, সেলিম মালিক, মুহাম্মদ সেলিম খানদের এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তবে জেএনইউয়ের ছাত্রনেতা শারজিল ইমাম ও প্রাক্তন ছাত্রনেতা ওমর খালিদকে সন্ত্রাসী আইনে গ্রেফতার করা হলেও এখনও চার্জশিট দেওয়া হয়নি। দিল্লি পুলিশের রোষের শিকার এইসব অভিযুক্তরা। এবার তারা জেল কর্তৃপক্ষের হয়রানির শিকার হচ্ছেন তা পরিষ্কারভাবে জানা গেল মঙ্গলবার দিল্লি আদালতের মন্তব্যের পর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct