আসছে যেন ভূত
মাওলানা তাজুল ইসলাম নাহীদ
একদিন রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে একা একা পথ চলছিলাম। আমাদের গ্রামটি বিশাল বড় গ্রাম।আশেপাশের গ্রামের মধ্যে এত বড় গ্রাম আর একটি ও নেই।পায়ে হেঁটে হেঁটে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত গেলে প্রায় দুই ঘন্টার মত সময় লেগে যায়।তো যখন আমি একা পথ চলছিলাম রাত তখন আনুমানিক দুই আড়াটা হবে। সারা দুনিয়া যেন নীরব নিস্তব্ধ হয়ে আছে। নেই কোনো মানুষের চলাচল। নেই কোনো শোরগোল। নেই কোনো জোনাকিদের আনাগোনা ও।দূর আকাশের চাঁদটি যেনো সেদিন বড্ড অভিমান করে লুকিয়ে ছিলো।যার কারণে অন্ধকার রজনীতেই পথ চলতে হয়েছিল আমাকে।গ্রাম বলে কথা। আমাদের গ্রামের লোকজন যারা আছে সবাই এশার পরপরই খাওয়া দাওয়া শেষ করে দশটায় ভেতরেই ঘুমিয়ে যায়।যেখানের লোকজন দশটা বাজে ঘুমিয়ে যায় সেখানে আড়াইটা বাজে কে সজাগ থাকবে বলেন? কেউ নেই।মাঝেমধ্যে দুয়েকটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনা যায়।এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।তখনকারের সময়টাও ছিলো শীতকাল।তাছাড়া গ্রামে ছিলো না কোনো পাঁকা রাস্তা ঘাট ও কারেন্টের আলো। এবার নিজেরাই চিন্তা করেন অবস্থাটা কি হবে।কি আর করার আছে আমার।আনমনা হয়ে একা একাই পথছিল আমি।মনের ভেতরে ভীষণ ভয় হচ্ছিল। আবার কি না জানি কি সামনে এসে দাড়ায়!না জানি কি ভয়ংকর জিনিস চোখে পড়ে। যেনো মনে হচ্ছে পিছনে কেউ আসতেছে। এই তো আসার শব্দ যেনো শোনা যাচ্ছে।এসব চিন্তায় আমাকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলছে।কিছুতেই যেনো সামনে চলতে পারছিলাম না।তখন বাধ্য হয়ে বাড়ির দিকেই উল্টো রওয়ানা দিলাম।বাড়ির দিকে আসতে গিয়ে ও ভয়ে আসতে পারছিলাম না।মনে মনে জানটা দিয়ে দোয়া কালাম পড়ে পড়ে যেমনই হোক সামনে আগাচ্ছিলাম। কিন্তু আবার হঠাৎ করে আরো ভয় বেড়ে গেল। যখন দেখলাম আমি পথ চলতে চলতে একবারে কবরস্থানের পাশে চলে এসেছি।তখন যেনো মনে হল আমি আর বাঁচবোই না। এখনই মরে যাবো।কারণ ছোট্টবেলায় শুনে ছিলাম এই কবরস্থানে নাকি জিনভূতেরা থাকে। কাউকে একলা পেলেই ধরে ধরে মেরে ফেলে।
এখন সেই ভয়টাই যে বার বার আমার ভেতরে কাজ করছে।হায় হায় ভয়ে সারা শরীর কাঁপছে আমার! এখন কেমনে এ পথ পাড়ি দিব। সামনেই তো দেখা যাচ্ছে কবরস্থান!আমাকে যদি সত্যি সত্যিই জ্বিন ভূতেরা ধরে ফেলে তাহলে কে এসে উদ্ধার করবে। এখনতো দেখছি নির্ঘাত আমার মরণ হবে।মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে চোখটা বন্ধ করে কোন রকম এই গোরস্থান পাড়ি দিলাম।আবার পাঁচ ছয় মিনিটে মাথায় আমাদের বাড়ির একদম কাছাকাছি আরেকটি গোরস্থান অবস্থিত। চলে এসেছি তার ও খুব নিকটে। কিন্তু ভয়ে বুকটা দুরু দুরু করে কাঁপছে। মনে মনে ভাবি যদি-ই আমাকে জ্বীন ভূরে ধরে ফেলে তাহলে তো আমি শেষ। এখন কেমনে পাড়ি দেয় এই কবরস্থান। আবার আশেপাশে আছে বড় বড় পুকুর ও ডোবা।যা রাতের বেলায় আমার কাছে আরো বেশি ভয়ংকর লাগত। তার কারণ হল ঐ যে? ছোট্টবেলায় নানানজনের কাছে গল্প শুনেছি। এই সমস্ত পুকুর ও ডোবাতে নাকি জ্বীনেরা বসবাস করে। কখনও কখনও কাউকে মেরেও ফেলে। যেমনটা শুনতাম অমুকে পানিতে গোসল করতে নেমেছিল কিন্তু আর নিচ থেকে উঠতে পারেনি। জ্বীনেরা টেনে গভীর পানির নিচে নিয়ে মেরে ফেলছে। অনেক বাচ্চারা ও এভাবে গোসল করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। এসব কথা মনে হতেই ভয়ে আমার সারা গায়ের সব লোম দাড়িয়ে গেছে। কি আর করার আছে যেতে তো হবেই আমার বাড়িতে। শেষমেষ চোখটা বন্ধ করে এক দৌড় দিয়ে ঘরের সামনে গিয়ে মা-কে ডাক দিলাম। মা! মা গো! আমি এসেছি জলদি দরজা খোলো। ডাক দিতেই মা সঙ্গে সঙ্গে দরজা খোলে দিলো। সামনে দিকে দুইটা হাত বাড়িয়ে বলতেছে কি রে বাজান এত রাতে বুঝি ঘরে ফিরে আসার সময় হল? ভয় পাছনি তো একা একা ঘুরাঘুরি করে আসতে? না মা না, তেমন কোনো ভয় পাইনি। তবে ভেরতে ভেতরে মনের ভয়ে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো। এই বুঝি সামনে কে আসছে। পিছনে কে ডাকছে। কেউ যেনো সাদা শাড়ি পড়ে বসে আছে। কি জানি একটা গোরস্থানে থেকে বের হয়ে আমার দিকে আসছে এসব কল্পনা জল্পনায় ভোগছিলাম মা। তাছাড়া আর কিছু না। মা-শান্তনা দিয়ে বললো। না বা এসব কিছুই না। আল্লাহ্ তোর সবসময় হেফাজত করবে ইনশাআল্লাহ। তবে আজ থেকে কিন্তু আর ভুলেও একা একা এত রাত করে কোথায় থেকে আসবে না? আমি বললাম হ্যাঁ মা ঠিক বলছেন। আমি আর ভুলেও এ কাজ করবো না। মা- আমাকে হাত মুখ ধুয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে বললেন। মায়ের বুকভরা ভালোবাসা ও আদর স্নেহে আমি কখন জানি ঘুমের রাজ্যে চলে গেলাম আমি নিজে ও জানি না। শিক্ষা-ছোটবেলায় কাউকে এসব ভয় ভীতি দেখাতে নেই। কারণ এই ভয়টি সে সারা জীবন ই মনের ভেতর লালন করে থাকে। বরং ছোট্ট থাকতে বড় বড় বীর বাহাদুরদের কথা বলে বলে তাদের সাহসী করে তোলা চাই। যেনো কখনও ভীতু না হয় তারা। লেখক: প্রবাসী ইমাম, ওমান
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct