মোল্লা মুয়াজ ইসলাম , বর্ধমান, আপনজন: পূর্ব বর্ধমানের কালনা থানার অন্তর্গত রাহাতপুর এলাকায় ঘটল এক মর্মান্তিক ঘটনা। স্কুলে পরীক্ষার সময় শিক্ষিকার হাতে অপমানিত হওয়ার পর বাড়ি ফিরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। মৃত ছাত্রীর নাম আফসানা মন্ডল।
সূত্রের খবর, বাকুলিয়া রাজেন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনের ছাত্রী আফসানা সোমবার তার এক বন্ধুর খাতা দেখে উত্তর লেখার চেষ্টা করছিল। সেই সময় এক শিক্ষিকা বিষয়টি দেখতে পেয়ে সাথে সাথে দুই ছাত্রীর খাতা কেড়ে নেন।
শুধু তাই নয়, পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই তাদের ক্লাসরুম থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় অপমানিত ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আফসানা। পরীক্ষার পর সে বিষণ্ণ অবস্থায় বাড়ি ফিরে যায়। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকেই সে একদম চুপচাপ ছিল এবং কারো সঙ্গেই ঠিকমতো কথা বলছিল না। রাতে পরিবারের অজান্তে ঘরের ভেতরে গলায় ফাঁস দেয় সে। সকালে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে সন্দেহ হলে বাড়ির লোকজন দরজা ভেঙে দেখে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে আফসানা।
তারপর তড়িঘড়ি তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ কালনা মহকুমা হাসপাতালে তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
এই ঘটনার পর এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয় বাসিন্দারা ও সহপাঠীরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, পরীক্ষার খাতা কেড়ে নেওয়া ও ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া কি আদৌ উচিত ছিল? বিষয়টি নিয়ে স্কুলের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে।
পরিবারের দাবি, স্কুলের শিক্ষিকারা যদি একটু সহানুভূতি দেখাতেন, তাহলে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
তবে এই মর্মান্তিক ঘটনায় এখনো পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছে।
এই অকালমৃত্যু শুধুমাত্র এক পরিবারের নয়, গোটা সমাজের জন্যই এক বড় শিক্ষা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct