ক্যানসার এমন একটি রোগ, যে রোগটি সম্পর্কে মানুষ এখনও জানা ও বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছে, এই একবিংশ শতাব্দীতেও যখন মেডিক্যাল সায়েন্সের এত উন্নতি হয়েছে। আসলে ক্যানসার সম্পর্কে আমাদের সীমিত জ্ঞানের জন্যই রোগটির নাম শুনলে আমরা আঁতকে উঠি। বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার হয়, এর মধ্যে সার্ভাইক্যাল ক্যানসার মানে ইউটেরাস, ওভারি, পেলভিস অঞ্চলে ক্যানসার হলে যত দ্রুত রোগ নির্ণয় হবে ততই রোগীর সুস্থতার হার বেশি । সার্ভিক্স, ইউটেরাসের বাকি অংশ সহ তলপেটের একাধিক অঞ্চলে মোট কথা স্ত্রী প্রজনন অঙ্গে যে কোনও জায়গাতেই হতে পারে ক্যানসার, এগুলিকেই বলা হয় সার্ভাইক্যাল ক্যানসার । তবে সব মহিলার সবসময়ে একই ধরনের উপসর্গ থাকেনা। ক্যানসারটি কোথায় হয়েছে ও কতদূর ছড়িয়েছে সেই অনুসারে এর উপসর্গের পার্থক্য হয়।
কোন কোন উপসর্গ দেখে সচেতন হবেন:
কয়েকটি কমন উপসর্গ দেখে মহিলাদের সচেতন হতে হবে ও এগুলিকে কখনওই অবহেলা করা যাবে না-
অস্বাভাবিক ব্রিডিং
দুটি পিরিয়ডসের মধ্যবর্তী সময়ে পিরিয়ডস হয়ে যাওয়া ।
২৩ দিনের কম গ্যাপে পিরিয়ডস
যোনিদ্বার দিয়ে অতিরিক্ত সাদাস্রাব হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া, তলপেটে পিরিয়ডসের সময় ছাড়া অন্য সময়ে ক্র্যাম্প ধরার মতো ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য,
বার বার ইউরিন পাস করার প্রয়োজনীয়তা
মেনোপোজ হয়ে গেলেও যোনিদ্বার থেকে রক্তপাত।
আছে ভ্যাকসিন ই
বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সার্ভাইক্যাল ক্যানসার মহিলাদের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে দেখা যাওয়ায় শঙ্কা বেড়েছে চিকিৎসকদের মধ্যে । ইউটেরাসের নীচের অংশকে বলা হয় সার্ভিক্স। এর বাইরের ও ভিতরের কোষগুলি যখন তার চরিত্র বদল করে তখনি আস্তে আস্তে ক্যানসারাস কোষের দিকে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ হল হিউম্যান প্যাপিলোমো ভাইরাস সংক্ষেপে এইচপিভি। যৌন সহবাস, অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের ফলে এই ভাইরাসস্ত্রী দেহে ঢুকে পড়ে।
তবে আশার কথা হল এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন আছে। প্রথমটি নেওয়ার একমাস পরে দ্বিতীয়টি ও তার ছয়মাস পরে তৃতীয়টি নিতে হবে। কোনও মেয়ে খতুমতী হওয়ার পর থেকেই যত দ্রুত সম্ভব এই ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া উচিত। বিদেশে অনেকদিন ধরেই এই ভ্যাকসিন চলছে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর রোগনির্ণয় করা, রেগুলার স্ত্রিনিং, যোনিদ্বার থেকে সোয়াব নিয়ে প্যাপস্মিয়ার টেস্ট করালে ক্যানসারের সম্ভাবনা আছে কি না বোঝা যায়। প্যাপস্মিয়ার টেস্টের ফলে কোষগুলির কোনওরকম ক্যানসারাস পরিবর্তন হচ্ছে কি না সে বিষয়ে আগাম আন্দাজ করা সম্ভব ।
কমন কয়েকটি সাভাইক্যাল ক্যানসার
১। এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার
এই ক্যানসারকে ইউটেরাইন ক্যানসারও বলে। ইউটেরাস থেকেই এই ক্যানসার শুরু হয়। অধিকাংশ সময়েই এটি প্রথমাবস্থায় ধরা পড়ে, কেননা এর প্রধান উপসর্গ হল অস্বাভাবিক রক্তপাত, যা দেখলে যে কেউ সচেতন হয়ে যাবেন । এর প্রধান চিকিৎসা হল অপারেশন করে ইউটেরাস বাদ দিয়ে দেওয়া হিস্টেরেক্টোমি। এই ধরনের ক্যানসারের ঘদি পরিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে যাতে রোগটি না হয়, সেজন্য আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। মেনোপোজের পরেও এই ক্যানসার হতে পারে। সেক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি করে আগে থেকে সুস্থ থাকার প্রচেষ্টা করা হয়। তবে সবার আগে কমাতে হবে ওবেসিটিকে।ওবেসিটি এই ক্যানসারের অন্যতম কারণ।
২। ওভারিয়ান ক্যানসার
ওভারি থেকে এই ক্যানসারের সুত্রপাত। পেলভিক অঞ্চল কিংবা পেটে ছড়িয়ে পড়ার আগে পর্যস্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওভারিয়ান ক্যানসার ধরা পড়ে না। যত দেরিতে রোগ ধরা পড়বে, ততই এর চিকিৎসা করা অসুবিধাজনক হয়ে উঠবে। জন্মনিয়ন্ত্রক পিল মানে হরমোনজনিত বিভিন্ন পিল খেয়ে এই ক্যানসার রোধের চেষ্টা করা হয়। তবে কারণ যদি ওভারিয়ান ক্যানসার ও স্তন ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার।
৩। ভ্যাজাইনাল ক্যানসার
ভ্যাজাইনা বা যোনিদ্বারের ক্যানসারও সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের অন্তর্গত । যত দ্রুত রোগ নির্ণয় হবে, ততই রোগীকে সেরা চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাহয় না।অনেকসময়ে যোনিদ্ধারের ভিতর দিয়েও ছড়িয়ে পড়ে ক্যানসারটি ৷ পেলভিক পরীক্ষা, প্যাপস্মিয়ার টেস্ট করে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের তত্বাবধানে থাকতে হবে। বয়স৩৫-এর বেশি হলে আর অবশ্যই এইচপিভি ভ্যাকসিন নিতে হবে।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা:
অতীতে বংশগতির ধারার ক্যানসারের ইতিহাস আছে। তাদের ক্ষেত্রে পূর্ব থেকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করলে ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব । আমার পিতা ডাঃ প্রকাশ মল্লিক একজন প্রবীণ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক । তিনি ৩৮ বছর নানান জটিল রোগের পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসা করেন । তাকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ বলা হয়। ক্যানসারে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগী দীর্ঘদিন যন্ত্রণাহীন সাবলীল ভাবে বেঁচে থাকে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে সমস্ত রোগীরা সমস্ত ধরনের এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করে তারা আমাদের কাছ থেকে সুস্থ হয়েছেন।
লেখক- ডাঃ পার্থসারথী মল্লিক এম.ডি(কন)
সম্পাদক: ভয়েস অব হোমিওপ্যাথি
মো: ৯৮৩০৫০২৫৪৩
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct