আপনজন ডেস্ক: নিষিদ্ধ কুর্দি গোষ্ঠী পিকেকে (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি) তুরস্কের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। গোষ্ঠীটির কারাবন্দী নেতা আবদুল্লাহ ওচালান তাদের আন্দোলনকে অস্ত্র সমর্পণ করে নিজেদের বিলুপ্ত করার আহ্বান জানানোর পর এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে তুরস্ক রাষ্ট্রের সঙ্গে ৪০ বছর ধরে চলা সংঘাতে অবসান ঘটতে চলছে।
শনিবার এক বিবৃতিতে পিকেকে বলেছে, তারা আশা করছে তুরস্ক ওকালানকে মুক্তি দেবে।
আবদুল্লাহ ওচালান ১৯৯৯ সাল থেকে নির্জন কারাগারে বন্দি আছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে তুরস্কের কুর্দিপন্থী ডিইএম পার্টির এমপিরা বিদ্রোহী প্রধানের সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করতে যান। সেখান থেকেই পিকেকে সংগঠনটিকে চিরতরে বিলুপ্ত করার আহ্বান জানালেন তিনি। আবদুল্লাহ ওচালান তার সংগঠনের সদস্যদের উদ্দেশে একটি বিবৃতি দেন।
এতে বলা হয়, ‘আমি অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানাচ্ছি এবং আমি এই আহ্বানের ঐতিহাসিক দায় নিচ্ছি।’ বিবৃতিতে ওচালান আরো বলেন, ‘আপনারা (দলের) সম্মেলন করুন এবং সিদ্ধান্ত নিন। সংগঠনের সবাইকে অবশ্যই অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। পিকেকেকে অবশ্যই নিজেদের বিলুপ্ত করতে হবে। তুরস্কের অতি-জাতীয়তাবাদী এমএইচপি পার্টির নেতা এবং তুর্কি সরকারের মিত্র দেবলেট বাহসেলি সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য একটি উদ্যোগ শুরু করার কয়েক মাস পর তার ঘোষণা আসল।
ওচালানকে কুর্দি জাতীয়তাবাদীরা স্নেহের সঙ্গে অপো নামে ডাকে। পিকেকে (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধিত্ব করে) বলেছে, ওচালানের কারাগারের অবস্থা শিথিল করা উচিত। তারা আরো জানিয়েছে, ‘শারীরিক স্বাধীনতায় বসবাস, কাজ করতে এবং তার বন্ধুদেরসহ যে কারো সঙ্গেই বাধাহীন সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হতে হবে।’ এই গোষ্ঠীটি ১৯৮৪ সাল থেকে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে। যাদের লক্ষ্য ছিল তুরস্কের ৮৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ কুর্দিদের জন্য একটি স্বদেশ প্রতিষ্ঠা করা। তবে তুরস্ক, ইইউ, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে। নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়ে ওচালান পিকেকে সদস্যদের কাছে একটি চিঠি পাঠ করে আবেদন করেছিলেন। চিঠিটি ডেম পার্টির সদস্য আহমেত তুর্ক এবং পারভিন বুলদান কুর্দি ও তুর্কি উভয় ভাষায় পড়ে শোনান।
তিনি বলেন, ‘সকল গোষ্ঠীকে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং পিকেকে অবশ্যই নিজেদের বিলুপ্ত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, তার আন্দোলন মূলত ‘গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে’ গঠিত হয়েছিল। তবে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিবাচক সংকেতের সমর্থনে বাহসেলি পিকেকে-এর অস্ত্র সমর্পণের জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করেছিলেন বলে ওচালান বলেন।
কুর্দি নেতারা মূলত এই উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্বে কুর্দি অধ্যুষিত দিয়ারবাকির এবং ভ্যান শহরে হাজার হাজার মানুষ বড় পর্দায় বিবৃতিটি দেখার জন্য জড়ো হয়েছিল।
উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তুর্কি-সমর্থিত বাহিনী কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের অভিযান তীব্র করেছে এবং গত মাসে সিরিয়ার নতুন নেতাদের কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসকে নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর কুর্দিপন্থী রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার এবং কারাদণ্ডের একটি তরঙ্গ লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। পিকেকে-এর বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা গেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে আড়াই বছরের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct