নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে টেটের উত্তরপত্র নষ্ট করে দেওয়া মামলায় জারি করা হয়েছে সিবিআই তদন্ত। পাশাপাশি প্রাক্তন প্রাক্তন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এর সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য কে সিবিআই দপ্তরে এদিন রাত ৮ টার মধ্যে যাওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে আদালতের তরফে।তদন্তে অসহযোগিতা করলে প্রয়োজনে সিবিআই গ্রেপ্তার করতে পারে মানিক ভট্টাচার্য কে।এই ছাড়পত্র সিবিআই কে দিয়েছে আদালত। গত ২০১৪ সালের টেটের খাতা হদিশ মিলছেনা। অভিযোগ, উত্তরপত্র নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। কেন নষ্ট করা হল প্রাথমিকের ওএমআর শিট? কার নির্দেশে, কী উদ্দেশে নষ্ট করা হল উত্তরপত্র? এইসবের উত্তর খুঁজবে এবার সিবিআই। 'ওএমআর শিট নষ্টের ক্ষেত্রে পর্ষদের ভূমিকা সন্দেহজনক। সাংবিধানিক সংস্থার কাছ থেকে এই ভূমিকা প্রত্যাশিত নয়' বলে মনে করছে আদালত । গোটা ঘটনাটি তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। নির্দেশ আদালতের।২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষার উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। মামলাকারী শান্তনু শিট এবং রাহুল চক্রবর্তীর মামলায় মঙ্গলবার এই নির্দেশ জারি করে থাকে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন এজলাসে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী জানান, -'সমস্ত রেকর্ড নষ্ট হয়ে গেছে'।গত ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র নষ্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে কার কার ওএমআর শিট নষ্ট? সেই তথ্যই জানে না প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। তবে সব মিলিয়ে ১২ লক্ষের বেশি ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতের নির্দেশ,-' সিবিআই-কে এক মাসের মধ্যে এই ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে'।আগামী ১ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির রয়েছে ।পাশাপাশি মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে। সহযোগিতা না করলে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই।এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।গত ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার নিরিখে মোট দুটি নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল। ২০১৬ এবং ২০২০ সালে। ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় টেট পরীক্ষার ওএমআর শিট নষ্ট করে দেওয়া হবে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। বেশ কিছু চাকরি প্রার্থী আদালতে অভিযোগ জানান, -' তাঁরা তথ্যের অধিকার আইনে ওএমআর শিট দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পর্ষদের তরফে তাঁদের কোনও রকম ওএমআর শিট দেওয়া হয়নি'। বেশ কিছু প্রার্থীকে ওএমআর শিট দেওয়া হলেও, মূল মামলাকারী কিন্তু ওএমআর শিট পাননি। এরফলে এই ওএমআর শিটকে নিয়ে একটা সন্দেহ তৈরি হয়। আইন বহির্ভূত ভাবে ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ করা হয়। এর ভিত্তিত পর্ষদের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই রিপোর্ট আসতেই এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বিচারপতি ।এদিন এজলাসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, -' কোন আইনে এই ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র নষ্ট করা হল? তা পর্ষদের কাছে স্পষ্ট নয়। কোন যুক্তিতে ২০ লক্ষ প্রার্থীর মধ্যে ১২.৯৫ লক্ষ প্রার্থীর ওএমআর নষ্ট করা হল? এছাড়াও কোনও সংস্থাকে বরাত দিয়ে বা টেন্ডার ডেকে এই উত্তরপত্র নষ্ট করার কাজও করা হয়নি। যা থেকে পর্ষদের ভূমিকা নিয়েও একটা সংশয় তৈরি হয়। পর্ষদের কর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে'। এইসবের পরিপেক্ষিতে এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। এফআইআর দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করবে সিবিআই।গত সোমবার যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় । ২০২০ সালে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের পরেও ৩৯২৯টি শূন্যপদ ছিল। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে দু'বার নিয়োগ হয়েছিল।একবার ২০১৬ ও দ্বিতীয়বার ২০২০ সালে। প্রথম ধাপে ৪২ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে জানা যায় ১৬ হাজার ৫০০ শূন্যপদ রয়েছে। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর জানা যায় আরও ৩৯২৯ টি শূন্যপদ রয়েছে।শূন্যপদ থাকতেও চাকরি দেওয়া হয়নি কেন? এই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরা। সেই মামলার শুনানি ছিল এদিন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে।এদিনের শুনানিতে অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় জানান এজলাসে , 'যোগ্যরা কেন চাকরি পাননি? তা স্পষ্ট নয়। রাজ্যের থেকে এ ব্যাপারে হলফনামা চাওয়া হলেও তা পাওয়া যায়নি। আর সুযোগ দেওয়া হবে না'। বিচারপতি জানান, -' সেই সব নথি যাচাই করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আগামী নভেম্বর মাসে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সেইদিনই পর্ষদকে জানাতে হবে কতজনকে চাকরি দেওয়া হল?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct