বেলাশেষে
শংকর সাহা
______________
আজ দেখতে দেখতে পাঁচটি বছর কেটে গেল। সৌম্যের মনে আজও পলাশপ্রিয়ার প্রতি ভালোবাসা একবিন্দুও কমেনি শুধু আজ দূরত্ব আর এই কঠিন বাস্তব বুঝিয়ে দিয়েছে সবটুকু। সৌম্য আজও পলাশপ্রিয়াকেই ভালোবাসে। তার সকল স্মৃতি যেন আজও নীরবে বয়ে নিয়ে চলে সে। আজ সে প্রতিষঠিত সাহিত্যিক। দেশ-বিদেশের নানান ম্যাগাজিনে আজ জনপ্রিয় লেখকের তালিকায় তার নাম। কিন্তু পাঁচ বছর আগের সেই কষ্ট গুলো আজও সে যে ভোলেনি। সৌম্য তখন সবে কলেজ পাশ করেছে। এই কঠিন সময়ে চাকুরি পাওয়াটি যে খুব কঠিন। খুব মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সে। কলেজ পাশ করে দুটো টিউশন পরিয়ে কোনো ভাবে মাকে নিয়ে তার সংসার চালানো। একদিন হঠাৎই সৌম্যকে ডেকে পলাশপ্রিয়া বলে, “সৌম্য, বাড়ি থেকে বাবা বিয়ে ঠিক করছেন। তুমি কিছু করো? আমি যে তোমায় ছেড়ে বাঁচবো না সৌম্য.. “ সেদিন তার যে সত্যিই কিছু করার ছিলনা। পকেটে সামান্য পাঁচশো টাকা নিয়ে কি করে পলাশপ্রিয়ার বাবার সামনে গিয়ে বলবে, “ আমি, আপনার মেয়েকে ভালোবাসি।তাকে ছাড়া বাঁচবো না.. “সেই কষ্ট গুলো নীরব থেকে যায় সৌম্যের কাছে।বুঝতে পারে এ জগত খুব কঠিন। পলাশপ্রিয়ার থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয় সে...!”বুকে হাজারো কষ্ট চেপে সেই রাতেই গ্রাম ছেড়ে মাকে নিয়ে শহরে মামার বাড়িতে আসে সে। আজ দেখতে দেখতে সময় অনেকটাই এগিয়ে যায়। চারপাশের চেনা জগতটি কেমন যেন বদলে যেতে থাকে। আজ পলাশপ্রিয়া অন্যের স্ত্রী। তবে নীরবে আজও সৌম্যকেই ভালোবাসে সে।
সেদিন সন্ধ্যে বেলায় সন্ধ্যে প্রদীপ দেবার পরে দৈনিক পত্রিকাটি হাতে নিয়ে পড়তে থাকে সে। হঠাতই নজরে আসে ম্যানবুকার পুরষ্কারে সম্মানিত হতে চলেছে সৌম্যনীল সাহা তার বিখ্যাত উপন্যাস “ ফিড়কি”র জন্যে। খবরটি পড়তেই তার দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। এ যে তার সৌম্য। যে মানুষটিকে ছেড়ে পাঁচটি বছর সে নীরবে থেকে গেছে আজ সেই সৌম্য তার পুচকিকে রুপ দিয়েছে উপন্যাসে যা আজ দেশ-বিদেশের অসংখ্য পাঠককে করে তুলেছে মুগ্ধ। খবরটির নীচে লেখা দশই মে এই শহরে আসছে বিখ্যাত উপন্যাসিক সৌম্যনীল সাহা।তাহার পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে।আজ যে পলাশপ্রিয়ার সৌম্যের কথা খুব মনে পড়ছে। যে মানুষটিকে সবার থেকে ভালোবাসতো সে আজ সে অনেক দূরে। সৌম্যকে একটি বার দেখার জন্যে পাগল হয়ে পড়ে সে। হঠাৎ বৈশাখের শেষ বিকেলে আকাশটি কালো মেঘে ঢেকে গেছে। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে নিলিপ্ত ভাবে চেয়ে আছে সে। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে পলাশপ্রিয়া। আজ যে তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে আসে। একমনে নীরবে বলে যায়,
“ আমায় ক্ষমা করো সৌম্য। সেদিন এই কঠিন পৃথিবী আমায় আটকে রেখেছিল তোমার থেকে৷ কিন্তু আজও ভালোবাসার জায়গাটি শুধুই তোমার জন্যে। তোমার পুচকি আজও কাঁদে...! আজ যে খুব মনে পড়ছে সৌম্যের কথা তার .
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct