আপনজন ডেস্ক: আমফান দুর্গত থেকে শুরু করে করোনা সচেতনতা- সর্ব ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে উঠেছিলেন্ বিডিও সাইদ আহমেদ। এলাকায় করোনা মোকাবিলায় পথে নামলেও শেষ পর্যন্ত করোনাতেই তার প্রাণ গেল। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
সাইদ আহমেদ করোনা টেস্টে আক্রান্ত হওয়ার পর ফোনে ‘আপনজন’ সম্পাদক জাইদুল হককে জানান গত ২১ অক্টোবর। কলকাতার বাঙ্গুর হাসপাতালের ৬ বেডে শুয়ে তিনি জানান, তার করোনা পজিটিভ হওয়ায় তিনি ভর্তি হয়েছেন। তার সুস্থতা কামনার জন্য দুয়া করতে বলেন।
এরপর কয়েক দিন চিকিৎসার পর বৃহস্পতিবার তার শরীরের অবনতি দেখা দেয়। তারপর তার মৃত্যু হয়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন…(আমরা তো আল্লাহরই এবং আর নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী)।
কলকাতার খিদিরপুরের বাসিন্দা সায়িদ আহমেদকে খুবই তৎপরতা দেখা গেছে লকডাউনে থেকে শুরু করে আমফান আর করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার ক্ষেত্রে। যেখানেই খবর পেয়েছেন মন্দিরবাজারের মানুষ খাওয়ার সমস্যায় পড়েছেন লকডাউনের জন্য, তিনি নিজের উদ্যোগেই তাদের কাছে খাবার পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছেন। একবার ‘আপনজন’ সম্পাদকের কাছে মন্দিরবাজারের এক পরিবার সরকারি খাদ্য সামগ্রী পাচ্ছেন না বলে জানালে সেকথা বিডিও সায়িদ আহমেদের কানে তুলতে তিনি চিঠি লিখে পঞ্চায়েত প্রধানকে খাবারের ব্যববস্তা করতে বলেন। বহুবার নানা ভাবে তিনি অসহয়দের কাছে কতাবার পৌঁছে দিয়েছেন।
আমফানের সময় দেখা গেছে কীভাবে রাস্তায় গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে রাস্তা পরিষ্কারে তিনি তদারকি করতে সক্রিয় রয়েছেন। এরপর করোনা সচেতনতায় এলাকায় এলাকায় প্রচারের ব্যবস্থা করেছিলেন। কলকাতার খিদিরপুরে থাকলেও তিনি একেবারে ঘাঁটি গেড়ে পড়েছিলেন মন্দিরবাজারে। যথার্থ বিডিও হিসেবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রকৃত গরিবের বন্ধু। কলকাতার খিদিরপুরের বাড়িতে মাসে একবার এসে পারিবারিক যোগাযোগ স্থাপন করতেন মন্দিরবাজার এলাকার মানুষের স্বার্থে। তার স্ত্রী পরিবারও সায় দেয় তার এই ডব্লুবিসিএস (এক্সি) অফিসারের সমাজসেবামূলক উদ্যোগে। এভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে অবশেষে তিনি নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশের সেবা করতে গিয়ে প্রাণ দিলেন।
কলকাতার খিদিরপুর এলাকার বাসিন্দা মরহুম সায়িদ আহমেদ ১৯৯২ ব্যাচের ডব্লুবিসিএস অফিসার। তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি হাসিল করার পর এশিয়াটিক সোসাইটিতে গবেষণায় যোগ দেন। একসময় খিদিরপুর মুসলিম হাইস্কুলের তিনি সম্পাদক ছিলেন। ডব্লুবিসিএস হওয়ার পর তিনি প্রথমে মিনাখাঁ ব্লক সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টিং হন। এরপর সর্বশেষ মন্দিবাজারের বিডিও পদে কর্মরত ছিলেন।
তার বাবা মাওলানা রশিদ আহমেদ ছিলেন এক বেসরকারি মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি মারা যান ১৯৯ সালে। মা হাসিনা খাতুনও মারা যান ২০০১ সালে। তার স্ত্রী খিলকত শেখ কলকাতা বিশ্বদ্যিালয় থেকে এমএ পাশ করে বর্তমানে কলকাতা পুরসভার একটি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বড় ছেলে ব্যাঙ্গালুরুতে স্নাতক সম্পন্ন করে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ছোট ছেলে স্নাতক পাঠরত। আর মেয়ে এবারে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিলেন সায়িদ আহমেদ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct