জৈদুল সেখ, কান্দি: করোনা সংক্রমণের জেরে প্রায় দু’বছর বন্ধ থাকার পর চারটি শ্রেণির জন্য স্কুল খুলেছে। কিন্ত শুরু থেকেই জেলার বেশ কিছু স্কুলে উপস্থিতির হার খুব কম। স্কুল খোলার দশদিন পরও বুধবার থেকে শুক্রবার পড়ুয়াদের গরহাজিরা নিয়ে চিন্তা কাটেনি শিক্ষকদেরও। সেই তালিকায় রয়েছে মুর্শিদাবাদের সাহাজাদপুর সারবাগান হাইস্কুল, নামু কান্দি হাইস্কুল, নবগ্রাম কেবিসিএস হাইস্কুল, জীবন্তি উদয়চাঁদ হাইস্কুল সহ একাধিক স্কুল।
সাহাজাদপুর সারবাগানের প্রধান শিক্ষক আরসাদুর রহমান বলেন “ মাধ্যমিক অর্থাৎ দশম শ্রেণির মোট শিক্ষার্থী ৪৬৫ জন কিন্তু গড়ে উপস্থিত হচ্ছে ১৯২- ২০০ জন। যদিও উচ্চমাধ্যমিকের পড়ুয়াদের উপস্থিতি বেশ ভালো। “ তিনি আরও জানান নতুন রুটিং এবং দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকাকালীন পড়ুয়াদের পড়াশোনায় অনভ্যাসের কারণে উপস্থিতি সংখ্যা শোচনীয়। তাই স্কুলছুটদের ফেরাতে শিক্ষকেরা হাজির হলেন শিক্ষার্থীদের দুয়ারে দুয়ারে। শনিবার বেলা বারোটা থেকে সাহাজাদপুর সারবাগান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আরসাদুর রহমান সহ দশজন শিক্ষক শিক্ষিকা এবং সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে ট্যাবলোই মাইকিং করে গ্রামের উদ্দেশ্যে পড়ুয়াদের দুয়ারে পৌঁছালেন শিক্ষকেরা। গ্রামে ঘুরতে ও ছাত্র ছাত্রীদের বাড়ি চিনিয়ে দিতে সাহায্য করলো কিছু বর্তমান ও কিছু প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী। শিক্ষকদের আগ্রহ দেখে অভিভাবক গণ খুব আপ্লুত। শিক্ষকরাও তাদের ব্যবহার ও আপ্যায়নে খুব খুশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে কান্দীর অন্তর্গত জীবন্তি উদয়চাঁদপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সামসুজ্জোহা বিশ্বাস বলেন “অন্যান্য স্কুলের তুলনায় আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সংখ্যা ভালো, বিশেষ করে ছাত্রীদের বেশি আগ্রহ। তবে আমাদের একটাই দাবী নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেনির সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস হোক। না হলে সিলেবাস শেষ করা যাবেনা এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে না। তাছাড়া মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করার ব্যাপার রয়েছে। কিন্তু নামু কান্দি স্কুলের হাজিরা অত্যন্ত শোচনীয় মাত্র ২৫ শতাংশ। তাই উপস্থিতি বাড়াতে সেখানেও নামলেন পড়ুয়াদের দুয়ারে। প্রধান শিক্ষক মাননীয় শীষ মোহাম্মদ বলেন “করোনার জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের একাংশ ধান কাটার কাজে লেগে পড়েছে। কেউ আবার রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ে, কেউ ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে। বেশ কিছু নাবালিকার বিয়েও হয়ে গিয়েছে। যারা কাজ করছে, আসছে না তাদের স্কুলে ফেরাতেই সহপাঠীদের এমন উদ্যোগ নিয়েছে।’’গ্রামে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে শিক্ষকেরা স্কুলে উপস্থিত হওয়ার জন্য সচেতন করেন। তন্মধ্যে কিছু অভিভাবক জানান ধান ওঠার সময় তাই ছেলে মেয়েরা চাষ ও খামারের কাজে কিছুটা সাহায্য করে তবুও সামনে দিন থেকে পড়ুয়াদের স্কুল পাঠানোর কথা বলেছেন। মুর্শিদাবাদ জেলার সমস্ত স্কুল কলেজ খুলে গেছে বিদ্যালয় মুখী হয়েছেন পড়ুয়ারা। তবে অধিকাংশ স্কুলেই সংখ্যাটা অনেকটাই কম। কয়েকমাস পর দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক পরীক্ষা ও দ্বাদশ শ্রেণীর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক মহল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct