সাদ্দাম হোসেন মিদ্দে, ভাঙড়, আপনজন: গত সোমবার (৮ জানুয়ারি ২০২৪) শেষ হল সপ্তম বর্ষের ভাঙড় বইমেলা। ৬ দিনের মেলা শুরু হয়েছিল ৩ জানুয়ারি। ভাঙড় মহাবিদ্যালয় মাঠে নাচে-গানে-নাটকে-কবিতায়-প্রশ্নত্তরে, কৃতি সংবর্ধনায় অনুষ্ঠিত হয় এবছরের বইমেলা। বইমেলার পরিবেশ ও পরিকাঠামো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে ভাঙড়বাসীর। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙড়ে ২০১৮ সালে শুরু বর্তমান বইমেলা। প্রথম থেকেই বইমেলার পরিবেশ ও পরিকাঠামো নিয়ে বিতর্ক ছিল। বিতর্ক এবার পিছু ছাড়ল ভাঙড় বইমেলার। নেতিবাচক- ইতিবাচক, সবমিলিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ভাঙড়ের কৃতী প্রশাসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়াকে ইতিবাচক ভাবে দেখেছি ভাঙড়বাসী। অন্যদিকে ডিজে সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে অত্যধিক নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশনকে নেতিবাচক ভাবে দেখা হচ্ছে। “মুক্তমঞ্চ” যেখানে এলাকার মানুষ নিজেদের প্রতিভা মেলে দরার সুযোগ পান। সাধারণ মানুষের মত মুক্তমঞ্চ মূল মেলা প্রাঙ্গণের একেবারে বাইর হওয়ার তা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।জানতে চাওয়া হলে ‘আমার ভাঙড়’ সংস্থার কর্ণধার, শিক্ষক ইয়াউর রহমান আপনজন প্রতিনিধিকে মুঠোফোন জানান, “বইমেলা কমিটিকে বলবো বইমেলাকে আমাদের গর্বের মেলায় পরিণত করতে অবাঞ্ছিত সংস্কৃতি গুলো বর্জনের সিদ্ধান্ত নিন।”
জানতে চাইলে ‘ভাঙড় চেতনা মঞ্চ’-এর সভাপতি তাহিরুল ইসলাম জানান, “ ভাঙড় বইমেলা নিয়ে আমরা গর্বিত। কিন্তু বই মেলার নামে যে রাজনৈতিক মঞ্চ এবং যে গান, বাজনা, ড্যান্সের উৎসব চলে তা বইমেলায় শোভনীয় নয়। এত কর্কট আওয়াজের জন্য বইয়ের স্টলে বই কিনতেই বিরক্ত লাগে। মেলা কমিটির উচিত বইমেলা সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ নেওয়া।”মুঠোফোনে আপনজন প্রতিনিধিকে পেশায় শিক্ষক শেখ জুলফিকার জানান, “সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী, বিকৃত রুচির নাচ-গান, রুচিগর্হিত পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতি যুব সমাজকে আকৃষ্ট ও অনুরক্ত করার গভীর নীলনকশা ধীরে ধীরে কার্যকর হচ্ছে বইমেলার নামে।” কলেজ পড়ুয়া শামীম গাজি আপনজনকে জানান, “ভাঙড় বই মেলা দেখতে দেখতে সপ্তম বর্ষ পার করলো। আগের বছরে থেকে এ বছর বই প্রেমীদের ভির ছিল চোখে পড়ার মত। আশা করবো পরের বছর এর থেকে আরও ভালো হবে ভাঙড় বই মেলা।”আপনজনের পক্ষে জানতে চাইলে কলেজ পড়ুয়া এটিএম শাহিল জানান, “ভাঙড় বইমেলা সপ্তম বর্ষ ২০২৪ নিঃসন্দেহে এই বইমেলা ভাঙড়বাসীর কাছে অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। তবে পরিচালনা সমিতির কিছু ভুল ত্রুটি অথবা হতে পারে অবহেলার কারণে পূর্ণ বইমেলা হয়ে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে। মুক্তমঞ্চ যেখানে ভাঙড়ের ছোটো ছোটো বাচ্চাদের নানারকম প্রতিযোগিতা আমরা দেখতে পাবো সেটা দূরে সরিয়ে মূল মঞ্চের পাশে জায়গা দেওয়া হয়েছে খাবারের দোকান, স্টেশনারির দোকান, নাগরদোলার। মহিলাদের বাথরুমের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে কোনো লাইট ছিল না, অনেক যুবক ছেলে সেখানে বিড়ি সিগারেট নিয়ে আড্ডা দেওয়ায় মহিলারা কতটা বাথরুম ব্যবহার করতে পেরেছে এটা ভাববার বিষয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, সমকামিতার মতো ব্যাধী এই বইমেলার প্ল্যাটফর্ম থেকে ছড়ানো হচ্ছে, যা আমাদের কাছে দুর্ভাগ্যের। ২০-২৫ বছরের যুবক যুবতী যারা এতদিন তাদের নারীত্ব, পুরুষত্ব নিয়ে ঠিকঠাক থাকলেও অল্প গুটিকয়েক মানুষ তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ওই যুবক-যুবতীদের মধ্যে সমকামিতা ছড়িয়ে দেওয়ার নোংরা চেষ্টা চালাচ্ছে। এই সমস্যাগুলো দূর করতে পারলে বইমেলা নিজের মহিমা ফিরে পাবে আশা করি। আমরা এই সুন্দর মুহূর্তের অপেক্ষায় আছি।”‘জনসেবা ফাউন্ডেশন’-এর সভাপতি আরিফ মহম্মদ মালির কাছে জানতে চাওয়া হলে মুঠোফোনে বলেন, “কোন জাতি,গোষ্ঠী,দল কিম্বা কোন মঞ্চে যদি সমকামিতাকে প্রাধান্য দেয় তাহলে বুঝতে হবে সমাজ অধ:পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ধিক্কার জানাই এ সমাজে সমকামিতা প্রমোটকারীদের। ভাঙড়ের বই মেলায় এই ধরনের কোন কাজ যদি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই নিন্দনীয়।”তবে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া বিষয়ে, বিশেষ করে সমকামীতাকে সমর্থনের অভিযোগ বিষয়ে আপনজন প্রতিনিধির পক্ষে বইমেলা কমিটির কারও প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct