আমাদের সেনাবাহিনীকে আগের চেয়ে আরও তরুণ ও শক্তিশালী করতে অগ্নিপথ প্রকল্প আনা হয়েছে। অথচ বয়স একটা অজুহাত মাত্র, আসল কথা খরচ কমানো। আমাদের সেনাবাহিনীতে বুড়োরা কখনই ছিল না, তা সব সময় জোয়ানদেরই থেকেছে। সেই কারণে মাত্র পনেরো বছর চাকরি করার পর ৩২ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে সেনাদের অবসর হয়ে যায়। এর মধ্যেই, প্রতি বছর তার শক্তি, তৎপরতা এবং সহনশীলতার পরীক্ষা নেওয়া হয়। ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ শেষ কিস্তি।
ষষ্ঠ মিথ্যা: বিশ্বের অনেক দেশেই সেনাবাহিনীতে স্বল্পমেয়াদী নিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে। সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য আমাদের একটি পাঁচ বছরের শর্ট সার্ভিস কমিশনও রয়েছে।
সত্য: ইসরায়েলের মতো দেশে সামরিক নিয়োগ বাধ্যতামূলক, অন্যথায় তারা সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য যুবকদের পায় না। বাধ্যতামূলক চাকরি দুই-চার বছরের বেশি করা যাবে না। ভারতে, দেশপ্রেম এবং বেকারত্ব উভয়ই এত বেশি যে লক্ষ লক্ষ যুবক সর্বদা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। যাইহোক, এই দেশগুলিতে স্বল্পমেয়াদী নিয়োগের পাশাপাশি সরাসরি স্থায়ী নিয়োগও রয়েছে। যা অগ্নিপথ প্রকল্পের ক্ষেত্রে নেই। একইভাবে, অফিসার পদের জন্য ভাল প্রার্থীর অভাব পূরণের জন্য শর্ট সার্ভিস কমিশন প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। সেই পরিকল্পনার কারণে সেনাবাহিনীতে সরাসরি ও স্থায়ী নিয়োগ কখনও বন্ধ হয়নি।
সপ্তম মিথ্যা: কার্গিল যুদ্ধের পরে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি এবং আরও অনেক বিশেষজ্ঞ এটা সুপারিশ করেছিলেন।
সত্য: কার্গিল কমিটি কোথাও বলেনি যে চার বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ করা উচিত। কমিটি পরামর্শ দিয়েছিল যে প্রাথমিকভাবে ৭-১০ বছরের জন্য সেনাদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, তার পরে তাদের CISF, BSF ইত্যাদি অন্যান্য বাহিনীতে স্থানান্তর করা যেতে পারে। স্থায়ী চাকরি শেষ করে দিয়ে চুক্তিতে নিয়োগের কথা কোনো কমিটি বা বিশেষজ্ঞ বলেনি। এমনকি পরিকল্পনাটা কখনই সংসদ বা প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়নি।
অষ্টম মিথ্যা: সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করছেন।
সত্য: সরকারের হ্যাঁতে হ্যাঁ মেলানো ছাড়া তাদের আর কী উপায় আছে? প্রবীণ দেশপ্রেমিক সেনাদের মনের কথা যদি শুনতে হয়, তবে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, প্রাক্তন জেনারেল এবং পরম বীর চক্র বিজয়ী বানা সিং এবং যোগেন্দ্র সিং যাদবের কণ্ঠ শোনা উচিত।
নবম মিথ্যা: অগ্নিবীর প্রকল্পে যুবকদের সমর্থন রয়েছে, তারা এর জন্য নিবন্ধন করতে প্রস্তুত।
সত্য: এদেশে বেকারত্বের এমন অবস্থা যে, চার বছর ছুটি দিলে, চার মাস চাকরি দিলেও প্রতি পদে শত শত প্রার্থী দাঁড়াবে। দেশে পিএইচডি করা লোকেরা পিওনের চাকরির জন্য আবেদন করে। এতে পরিস্থতির জন্য যুবকদের বাধ্যবাধকতা প্রমাণ করে, পরিকল্পনার গুনাগুন নয়।
দশম মিথ্যা: এই প্রকল্পের ফলে সরকারের কোষাগারের ওপর থেকে পেনশন এবং বেতনের বোঝা কমবে।
সত্য: এটাই আসল কথা। এটা সত্য যে প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় ৪০% বেতন এবং পেনশন খাতে যায়, তবে এর সমাধান সরাসরি এবং স্থায়ী নিয়োগ বন্ধ করে, বাহিনীকে কমিয়ে অর্ধেক করা নয়। সমাধান হচ্ছে প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো। কিন্তু মোদি সরকার, ২০১৭-১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকারি মোট খরচের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতের জন্য খরচ ১৭.৮% থেকে কমিয়ে, ২০২০-২১ সালে ১৩.২% করেছে। এর প্রতিরক্ষা বাজেটে অ-সামরিক (বেসামরিক) কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন কমিয়ে দেওয়াও এই সমস্যার আরেকটা সমাধান হতে পারতো। সেনাদের অবসরের বয়স এবং পেনশনের পরিমাণও বিবেচনা করা যেতে পারত সমস্যা সমাধানের জন্য, কিন্তু পেনশন পাওয়ার অধিকারের চাকরির সুযোগই এক ধাক্কায় শেষ করে দেওয়া হচ্ছে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ছেলেখেলা। আজকের এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমরা কি দেশের নিরাপত্তা নিয়ে এই কৃপণতা করতে পারি?
(সমাপ্ত...)
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct