নকীব উদ্দিন গাজী ও বাইজিদ মন্ডল, ফলতা, আপনজন: যদি একটা পাতা, একটা কাগজ প্রকাশ করতে পারে, আমি রাজনীতির আঙিনায় পা রাখব না’। ‘নিঃশব্দ বিপ্লবে’র বর্ষপূর্তিতে বিজেপিকে ঠিক এই ভাবেই চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের নতুন কর্মসূচি ‘নিঃশব্দ বিপ্লব। বলা ভালো এটি একদিকে কর্মসূচি অন্যদিকে বই। বইটি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জানা গিয়েছে, এই বই আগে পাবেন ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দারা। তারপর রাজ্যের প্রতিটি মানুষের কাছেও পৌঁছে যাবে। রবিবার ফলতায় নিজের সংসদীয় এলাকার কাজের খতিয়ান বইয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করলেন অভিষেক। আর কাজের নিরিখে মোদী–শাহকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ হওয়ার পরে গত ৯ বছরে ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে যা কাজ করেছেন, তা জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। অভিষেকের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের দ্বারা এখানকার মানুষ ব্যাপক উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু একটা লোকসভা কেন্দ্রে এত কাজ যে হয়েছে সেটা তো রাজ্য তথা গোটা দেশ জানে না। তাই তা জানাতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে যে পরিমাণ উন্নয়নের কাজ হয়েছে সেটা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের লোকসভা কেন্দ্রে হয়নি বলেই তাঁর দাবি। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সাংসদ হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখতে দেখতে তার কাজের নয় বছর কেটে গিয়েছে। গত ৯ বছরে এলাকার উন্নয়নকে কী কী কাজ করেছেন? এদিন ফলতা বিডি গ্রাউন্ডে বই প্রকাশ করলেন তিনি। ২০২৪ সালে আবার হবে লোকসভা নির্বাচন। সুতরাং একবছর বাকি থাকতেই কাজের খতিয়ান তুলে ধরতে নেমে পড়েছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। আর এই ৯ বছরে নিঃশব্দে কাজ করে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই বইয়ের নাম রাখা হয়েছে নিঃশব্দ বিপ্লব। তবে এই বই যখন তিনি প্রকাশ করলেন তখন রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। সুতরাং এখন এই বই প্রকাশ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এই বই যখন প্রকাশ করা হচ্ছে তখন সামনের মাসে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। এমন সন্ধিক্ষণ আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। এই বিষয়ে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পূর্ত দফতর, সেচ দফতর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে গত ৯ বছরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার কাজ ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে আমরা করেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্রে এত কাজ হয়নি। ১১২৩ রাস্তা হচ্ছে ডায়মন্ডহারবারে ১০০ কোটি ব্যয়ে। ৪২৮ কিমি রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে। ফলতা-মথুরাপুর জলের প্রকল্প ১৫০০ কোটি টাকার জল প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। ভারতের সবচেয়ে বড় জলের প্রকল্প ডায়মন্ডহারবারে হচ্ছে। এক বছরের মধ্যে প্রত্যেক বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেবে আমাদের সরকার। এদিন অভিষেক এও বলেন, ‘ভারতবর্ষের কোনও সাংসদ দেখাতে পারবেন না, প্রতিবছর যে নির্বাচন থাকুন বা না থাকুন, পুস্তিকার প্রকাশ করে সে কী কাজ করেছে তার হিসেব দেয়। ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী যত বড় বড় তাবড় নেতারা রয়েছেন, তাঁরা নিজেদের সংসদীয় এলাকা থেকে একটা বই প্রকাশ করেনি’। সঙ্গে বিরোধীদের ‘অনুরোধ’, ‘ক্ষমতা থাকলে আপনারা আপনাদের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসুন’। সে কথা স্মরণ করিয়ে সাংসদ হিসেবে তার কাজের খতিয়ান তুলে ধরে ২০২৪-এ রেকর্ড ভোটে জেতানোর আর্জি জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বার ২০১৪ সালে ৭১, হাজার ভোট জয়ী হলেও ২০১৯ সালে তিন লাখের বেশি ভোট জিতেছেন। সে কথা স্মরণ করিয়ে সাংসদ হিসেবে তার কাজের খতিয়ান তুলে ধরে ২০২৪-এ চার লাখেরও বেশি ভোট জেতানোর আর্জি রাখেন। রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জেতানো কেন্দ্র হিসেবে ডায়মন্ড হারবারকে সামনে আনতে চান তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন অভিষেকের বক্তব্যের অনেকটাই জুড়ে ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চরম সমালোচনা ও তাকে নিয়ে কটাক্ষ। বিশেষ করে যেভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি তার ছোট বাচ্চাকে বিদেশে যাওয়া রুখে দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফেরানো হয়েছে তা খুবই ব্যথিত করেছে অভিষেককে। তাই অভিষেক মোদিকে নিয়ে বলেন, মোদীজির ৫৬ ইঞ্চি ছাতি। আমার ৩ বছরের বাচ্চা, তাকেও ছাড়েনি। ৯ বছরের মেয়ে তাকে আটকাচ্ছে। এয়ারপোর্টে আটকানো হয়েছিল তাদের। আমার স্ত্রীকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি। এ নিয়ে কংগ্রেস আমলে মোদির আমেরিকা যাত্রার বিসা বাতিলের কথা তুলে ধরে বলেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবেই। আপনাকেও কংগ্রেস আমেরিকায় যেতে দেয়নি। বিদেশ মন্ত্রক থেকে আপনাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। মানুষ এগুলো পছন্দ করে না। তার স্ত্রী ও ছোট্ট বাচ্চাকে বিমান বন্দরে আটকানোর জন্য মানুষ জবাব দেবে। মানুষ এসব পছন্দ করে না। এদিন ফলতার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ক্যানিংয পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা, বজবজের বিধায়ক অশোক দেব, মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের বিধায়ক দিলীপ মন্ডল, পূজালী পৌরসভার চেয়ারম্যান তাপস বিশ্বাস, জেলা পরিষদের সদস্য শংকর ঘোষাল। , শেখ বাপি প্রমুখ। সমস্ত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের পরিবহন দফতরের কর্মাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর খান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct