আজিজুর রহমান, গলসি, আপনজন: একসময় যার পা এর জাদুতে বিশ্ব মানচিত্রের শিরোপায় ছিল ভারতীয় ফুটবলের নাম। যিনি বলে বলে গোলপোস্টে কিক মরে নিজের দলকে জয় এনে দিতেন। যিনি আন্তর্জাতিক খেলায় একাই বল নিয়ে গোটা মাঠ নাচিয়ে বেড়িয়ে গোল দিতেন। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এখনও যার সোনার মূর্তি রাখা আছে। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন বিশ্ব ফুটবলের জাদুকর সৈয়দ আব্দুস সামাদ। অবিভক্ত ভারতবর্ষের বর্ধমান জেলার গলসির ভুঁড়ি গ্রামে ১৮৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন সামাদ। এখানেই কেটেছে তার ছেলেবেলা। বিশ্ব বিখ্যাত খেলোয়াড় হবার পরও তিনি ভূঁড়ি গ্রামে এসেছেন। এক সময় পা ভেঙে এখানে অনেকদিন ছিলেন। তারপর থেকে দেশ বিদেশে কেটেছে তার জীবন কাল। ভূঁড়ি গ্রামে আজ তার বসত ভিটে খোঁজ পাওয়া যায়। এক একর জায়গায় উপরে ছিল একটি মাটির বাড়ি ও পুকুর। ছিল ঘোড়াশাল। বাড়ি লাগোয়া রয়েছে মসজিদ। যেটি এখন ভাঁঙা মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদ লাগোয়া পুকুরে ছিল বাঁধানো ঘাট। ওই সময় তার নেতৃত্বে ভারতীয় দল তৎকালীন শ্রীলংকা, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, চীন ও ইংল্যান্ড সফর করেছিল। অফ সিজনে ভারতীয় জমিদাররা তাকে পয়সার বিনিময়ে হায়ার করে নিয়ে যেতেন। এবং পা এর জাদুতে তিনি জমিদারদের কথা মতো বলে বলে গোল দিতেন। গলসির ভুঁড়ি গ্রামের বাসিন্দা হলেও তিনি শেষ বয়সে বাংলাদেশ ছিলেন। তার উত্তরসূরীরা এখন বিহারের পুর্নিয়াতে বসাবস করেন। তবে তার পূর্ব পুরুষের বংশধর এখনও ভুঁড়ি গ্রামে তার বসত ভিটেতে রয়েছেন। জানা গেছে, পৃথিবীর ইতিহাসের ফুটবল মানচিত্রে তিনি জাদুকর সামাদ নামে বিখ্যাত হয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে প্রথম ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে ইংরেজদেরকে হারিয়ে স্বাধীনতার অনুভূতি দিয়েছিল। ওই সময় ক্লাবের নাম ছিল মোহামেডান ক্লাব। সেই সময় মোহামেডান ক্লাব পাঁচ বার পরপর আইএফ এ শিল্ড ও লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তিনি ১৯২৬ সালে ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। ওই সময়কার বিশ্বসেরা ফুটবল দল গ্রেট ব্রিটেনকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ছিলেন সামাদ। এরপরই পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়ে যায় জাদুকর সামাদের নাম। এর পরেই চীনের সঙ্গে খেলায় তিন শূন্য গোলে পিছিয়ে থাকা ভারতীয় দলকে পরপর চারটি গোল করে চার তিন গোলে জয় এনে দেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ায় জাভায় খেলার সময় পরপর দুটি বল বার পোস্টের উপরের অংশে লেগে ঘুরে এলে তিনি রেফারিকে বারপোষ্ট ছোট বলে দাবী তুলেন। রেফারি তা মানতে অস্বীকার করলে তিনি বারপোস্টের মাপ নিতে বাধ্য করার।
এরপরই বারপোষ্ট মেপে দুটি গোলই দিয়ে দেন রেফারি। তাছাড়াও গেট-বিটেনে বিরুদ্ধে খেলার সময় তার একটি বল বার পোস্ট ছুঁয়ে উপর দিকে চলে গেলো তিনি রেফারির কাছে গোলের আবেদন করেন। রেফারিকে ফিতে দিয়ে মাপতে বাধ্য করেন। তখন দেখা যায় বারপোস্ট চার ইঞ্চি ছোট আছে। অসাধারণ এই ফুটবলের জাদুকর ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশের পার্বতীপুর মৃত্যুবরণ করেন। তার পূর্ব পুরুষের বংশধররা এখনও গলসির ভূঁড়ি গ্রামে রয়েছেন। তবে সামাদ এর পরিবারের লোকেরা বিহারের পুর্ণিয়াতে বসাবস করেন বলে জানা গেছে। পৃথিবীর ইতিহাসের ফুটবলের ট্রাজিক হিরোর নাম সৈয়দ আবদুস সামাদ। তাকে মনে রাখেনি জন্মভূমি বর্ধমান, মনে রাখেনি দুই বাংলা তথা ভারতবর্ষও। তবে পৃথিবীর উন্নত দেশে তার জন্ম হলে তিনি পাঠ্য পুস্তকে স্থান পেতেন। দেশের মানুষের কাছে আইকন হিসাবে পরিগণিত হতেন। তার স্মৃতিতে বসত ভিটেয় কিছু তৈরী করার আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct