‘ইন্ডিয়া টুডে’র‘মুড অফ দ্য নেশন সার্ভে’-এর সর্বশেষ রাউন্ড, দেশের জনসাধারণের এই মুহূর্তের মতামত অনুধাবনের জন্য একটি জনমত সমীক্ষায় উঠে এসেছে, যদি লোকসভা নির্বাচন এবছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হত, সেক্ষেত্রে বিজেপির আসন সংখ্যা কমে দাঁড়াত। সেই সঙ্গে কমে দাঁড়াত এনডিএর মোট আসন সংখ্যাও। বিহারের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে এই জনমত সমীক্ষাটি করা হয় যা বিশেষ বার্তাবহ। লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ দ্বিতীয় কিস্তি।
নির্দিষ্ট করে আরও বলা যায়, এটা চরম হতাশাজনক যে ভারতে নির্বাচনী জনমত সমীক্ষার ব্যাপারে উচ্চমানের একটি পত্রিকা স্বচ্ছভাবে জনমত সমীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যে বাজেট দরকার, সেই ব্যাপারে সমঝোতা করেছে। এটা করতে গিয়ে সরাসরি মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের বদলে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়াকে বেছে নিয়েছে। জনমত সমীক্ষায় এই পদ্ধতিগত পরিবর্তনকে বলা হচ্ছে ‘ক্যাটি (CATI) ইন্টারভিউজ’। প্রাপ্তবয়স্কদের মতামত এই ধরনের সাক্ষাতকারগ্রহণ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়।আপনারা কি বুঝতে পারছেন যে CATI-র পুরো কথা হল, ‘কম্পিউটার অ্যাসিসস্টেড টেলিফোনিক ইন্টারভিউ’? আপনারা কি বুঝতে পারছেন যে এই পদ্ধতিতে জনমত সমীক্ষা করার ফলে মানুষের দরজায় দরজায় পৌঁছে যাওয়ার যে মানসম্মত পদ্ধতি, তা এবারের ‘মুড অব দ্য নেশন সার্ভে’ (MOTNS)-এ বাতিল হয়ে গেছে? এর ফলে ঠিক কী হয়েছে? এই ‘ক্যাটি’ পদ্ধতির সাক্ষাৎকারের ফলে বেশ কিছু তথ্য বিবেচনাতেই আনা হয়নি। যেমন, যাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, তাদের বয়স, তাদের শ্রেণী, তাদের লিঙ্গ পরিচয়— এসব বিষয়ে কোনো তথ্যই পাওয়া যাওয়া যায়নি। এমনকি অর্থনৈতিক নিপীড়ন, লৈঙ্গিক ও সাম্প্রদায়িক সমস্যার মতো অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে কোনোরকম তথ্য এই সমীক্ষায় উঠে আসেনি।
*‘আরে বোকা, এটা অর্থনীতি’*
এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, সমীক্ষাটি প্রচুর তথ্য সামনে এনেছে। বিশেষ করে জনমতের বিস্তৃত প্রবণতার উপর। এই সমীক্ষা থেকে নির্ভুলভাবে একটা শিরোনাম উঠে আসছে, সেটা হল, ‘আরে বোকা, এটা অর্থনীতি’। “এই মুহূর্তে গোটা দেশ সবথেকে বড় কোন সমস্যার মুখোমুখি?”- এই প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় যে তিনটি উত্তর সর্বাধিকভাবে সামনে এসেছে, সেগুলি হল – ১. মূল্যবৃদ্ধি (২৭ শতাংশ) ২. বেকারত্ব (২৫ শতাংশ) ৩. দারিদ্র্য (৭ শতাংশ)। যুক্তিযুক্তভাবেই প্রায় সকলের মনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করে অর্থনৈতিক সমস্যার কথাটাই বিষয়টাই রয়েছে। কারণ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিরওপর খাতায়-কলমে এবং তার বাইরেওতথ্য তেমনটাই। তালিকার শীর্ষে রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। কারণ রেকর্ড যা বলছে তাতে মুদ্রাস্ফীতি কম হলেও এই মূল্যবৃদ্ধি হামেশাই হয়। কর্মসংস্থানের ব্যাপারে হতাশ হওয়ার মতো যেপরিসংখ্যানে আমাদের সামনে উঠে আসে তার পরিপ্রেক্ষিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জনমত সমীক্ষার ৫৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে বেকারত্বের পরিস্থিতি ‘খুবই গুরুতর’। এর বিপরীতে মাত্র ৯ শতাংশ এমনটা মনে করেন না। হ্যাঁ, আমি এই জনমত সমীক্ষা দেখে একটা ব্যাপারে খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম। সেটা হল, মানুষ মনে করছে যে এই মুহূর্তে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলেও ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কয়েক যুগ ধরে জনমত সমীক্ষা পর্যালোচনা করে আমি এমনটাই দেখেছি যে ভারতীয়রা আসলেই বেশ আশাবাদী। তাঁরা মনে করেন, বর্তমান অবস্থা যেমনই থাকুক, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি উন্নত হবেই। আমার কাছে এটা একটাধাক্কা খাওয়ার মতো ছিল যে ৩৪ শতাংশের বেশি লোক আশা করে যে আগামী ছয় মাসে দেশের অর্থনীতি আরও খারাপ হবে, অন্যদিকে ৩১ শতাংশ লোক আশা করছে যে সামনের ৬ মাসের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হবে যা বিগত ৬ মাসের তুলনায় ঠিক উলটো চিত্র। কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের পরের পরিস্থিতি বাদে ভারতে অর্থনৈতিক নৈরাশ্যবাদের বিষয়ে ব্যাপকভাবে কোনো কথাবার্তা হয়েছে কিনা—যেটা নথিবদ্ধ—তেমনটা আমার মনে পড়ছে না।
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: অতনু সিংহ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct