আপনজন ডেস্ক : বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, ‘হ্যাঁ, কথা বলছে'। মা, বাবা, দাদা, নানা, মামা- এগুলো তারা ওই ২০টি শব্দের মধ্যে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে কোনো বিশেষ্য যেমন- ব্যক্তি বা বস্তুর নাম, স্থান, পাহাড়, নদী, বই, চাল, ডাল, পাখি, গাছ, মায়া, মমতা এগুলো নেই। কোন বিশেষণ থাকে না, যেমন লাল-সবুজ পতাকা, সুন্দর দেশ, ভালো মানুষ, নতুন বই। আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, তোমাদের, আমাদের, নিজেকে বা অপরকে, কি, কিভাবে, কারা, কার, কেউ, কিছু- এগুলোতে পার্থক্য বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। ২৪ মাস বা দুই বছরের একটি শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০টি শব্দের ভান্ডার থাকবে। সে দুটো শব্দ একত্রে করার চেষ্টা করবে। এখানে আসো, ভাত খাও ইত্যাদি। এছাড়া সে কিছু সাধারণ নির্দেশনা ফলো করবে, যেমন- বসো, যাও, খাও, ইত্যাদি। ৩৬ মাস বা তিন বছরের একটি শিশুর কথার মধ্যে বেশ লম্বা একটা বাক্য থাকবে এবং সেগুলো একটু বড়ই থাকবে। সে বড় বাক্য ব্যবহার করবে। দুটো-তিনটে ইনস্ট্রাকশন একবারে ফলো করার চেষ্টা তার মধ্যে থাকতে হবে। যেমন- ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাও, গ্লাস এনে জল খাও। অনেক সময় বাবা-মা বলেন, ওতো কথা বলছে- চলো, যাও, খাও, বসো, আসো- এগুলো ফলো করবে। কিন্তু এগুলো একটি ছোট বাক্য বা শব্দ, দেখা যায় দুটো বাক্য একসাথে করে কথা বলার চেষ্টা তারমধ্যে নেই। সে ক্ষেত্রেও আমাদের একটু চিন্তা করতে হবে, তারমধ্যে দেরিতে কথা বলার একটি প্রবণতা আছে কি না। তিন বছরের ভেতর তারমধ্যে কেন, কোথায়, কে- এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা থাকতে হবে, যেমন- কোথায় যাচ্ছো? কেন যাচ্ছো? কিভাবে যাচ্ছ?
যখন আমরা দেখব শিশুটি এ ধরনের ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন বা শিশু বিকাশজনিত মাইলস্টোন অনুসরণ করছে না, তখনই আমরা বলব শিশুদের ভেতর একটু দেরিতে কথা বলার বা দেরিতে বেড়ে ওঠার প্রবণতা আছে। কিন্তু যদি শিশুটি অটিজম স্পেকট্রামে থাকে, তখন এ দেরিতে কথা বলার সাথে সাথে শিশুটির ভেতরে আরও কিছু ক্লিনিক্যাল ফিচার বা অন্যান্য উপসর্গ বা লক্ষণগুলোও চলে আসবে। সামাজিক হাসি অনুপস্থিত থাকবে, আমরা যখন কোনো ছোট শিশুকে দেখে হাসি, শিশুটিও সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তার হাসির ভেতর। কিন্তু অটিজমে আক্রান্ত শিশুর ভেতর এটি অনেকটা কম থাকবে বা একেবারে থাকবেই না। শিশুটির চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার চেষ্টা খুবই কম থাকবে। যখন আমরা কারো সাথে কথা বলি, একইভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করি। সে যা বলে তা বোঝার চেষ্টা করি- এতে তার মনোযোগ আরও বেশি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু অটিজমে আক্রান্ত শিশুটি অস্থির থাকে, সে চোখের দিকে না তাকিয়ে তার চারপাশের পরিবেশের দিকে বা নির্দিষ্ট কোনো কিছুর দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আবার চোখের দিকে তাকায় অনেকটা উদ্দেশ্যহীনভাবে। চোখের দিকে তাকানো- যোগাযোগের একটি বিশাল মাধ্যম, অটিস্টিক শিশুর বেলায় যা অনুপস্থিত বা কম থাকে। যখন আমরা শিশুটিকে নাম ধরে ডাকি, তার মধ্যে ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রবণতা কম দেখা যায়। আর এজন্য অনেক সময় বাবা-মার মনে হয় তার শিশুটি শুনতে পায় না। কিন্তু তার আশেপাশে যদি তার পছন্দ অনুযায়ী কোন জিনিসের প্যাকেট খোলা হয়। যেমন- চিপস, চকোলেট বা তার প্রিয় খেলনার নড়াচড়া- খুব অল্প সাউন্ড হলেও সে ঘুরে তাকায়, এতে প্রমাণ হয় শিশুটির শুনতে কোন সমস্যা নেই। শুধু সে সাড়া দেয় না বা রেসপন্স করে না।
আসলেই ‘অটিজমে আক্রান্ত ও দেরিতে কথা বলা'- দুটোর ভেতর অনেক পার্থক্য আছে। সুতরাং যখন এ ধরনের সমস্যাগুলো একটু দেরিতে কথা বলা শিশুর মধ্যে দেখা যায়, তখন বুঝতে হবে শিশুটি দেরিতে কথা বলার সাথে সাথে অটিজমের লক্ষণগুলো বহন করছে। আমরা যখন শিশুটিকে অ্যাসেসমেন্ট করার চেষ্টা করি, যে শিশুটি দেরিতে কথা বলছে না- অটিজমে আক্রান্ত- এ বিষয়ে পারিবারিক হিস্ট্রি নেওয়ার সময় ঠিকই চলে আসে যে, বাবা-মা’র পরিবারের কেউ দেরিতে কথা বলতো কি না? সে বিশ্বাস নিয়েই তারা আছেন। দ্রুত ইন্টারভেনশন বা খুব তাড়াতাড়ি অ্যাসেসমেন্ট করে থেরাপি শুরু করলে অবশ্যই এক্ষেত্রে উপকার পাওয়া সম্ভব। আমরা অধিকাংশ সময় একজন থেরাপিস্ট বা হেলথ প্রফেশনালের সহযোগিতায় এ ধরনের সমস্যা থেকে সরে আসতে পারি। শিশুটিকে অনেকাংশেই স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়, পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় দিয়ে পারিবারিক পরিবেশে। আর এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে বিকাশ ব্যাহত হলে বা বিলম্বিত হলে অতিসত্বর একজন চিকিৎসকের পরামর্শ মতো উপদেশগুলো গ্রহণ করা ঠিক হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct