আপনজন ডেস্ক: ভারতের উত্তর প্রদেশের ঝাঁসি জেলার একটি মেডিক্যাল কলেজের শিশু ওয়ার্ডে আগুন লেগে অন্তত ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ১৬জন শিশু। এই ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। জেলাশাসক অবিনাশ কুমার জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিট নাগাদ মহারানি লক্ষ্মীবাঈ মেডিক্যাল কলেজের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। জেলাশাসক বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০ শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। কম সঙ্কটজনকদের এনআইসিইউর বাইরের অংশে ভর্তি করা হয় এবং আরও গুরুতর রোগীদের অভ্যন্তরীণ অংশে রাখা হয়। ঝাঁসির ডিভিশনাল কমিশনার বিমল কুমার দুবে মধ্যরাতে হাসপাতালে পৌঁছে সাংবাদিকদের বলেন, এনআইসিইউর অভ্যন্তরীণ অংশে প্রায় ৩০ জন শিশু ছিল। সিনিয়র পুলিশ সুপার (এসএসপি) ঝাঁসি সুধা সিং শনিবার জানিয়েছেন, এই ঘটনায় আহত আরও ১৬ শিশুর চিকিৎসা চলছে। ঘটনার সময় এনআইসিইউতে ৫০ জনেরও বেশি শিশু ভর্তি ছিল।
ঝাঁসি পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে একটি দমকল বাহিনী পাঠানো হয়েছে এবং জেলার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও মেডিকেল কলেজে পৌঁছেছেন। নিকটবর্তী মাহোবা জেলার এক দম্পতি তাদের নবজাতক সন্তানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। শিশুটির মা সাংবাদিকদের জানান, গত ১৩ নভেম্বর সকাল ৮টায় সন্তানের জন্ম হয়। অসহায় মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সন্তানকে আগুনে পুড়ে হত্যা করা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের কথিত ফুটেজে দেখা গেছে, আতঙ্কিত রোগী ও তাদের তত্ত্বাবধায়কদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, এমনকি বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করছেন।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনার কথা শুনে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে লখনউ থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনের আধিকারিক এবং দমকলের গাড়িগুলিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ত্রাণ কাজ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে থাকা উপমুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক জানিয়েছেন, তিনি ঝাঁসি যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত বর্ণনামূলক এবং হৃদয়বিদারক।
আদিত্যনাথের নির্দেশে পাঠকের সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি অফ হেলথ। ডিভিশনাল কমিশনার বিমল কুমার দুবে ও ঝাঁসি পুলিশ রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল কলানিধি নৈথানিকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদিত্যনাথ। ঝাঁসি লোকসভার সাংসদ অনুরাগ শর্মা একটি নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন, “এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত ব্যথিত।
সদরের বিধায়ক রবি শর্মাও ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন। শনিবার ভোরে এসএসপি সুধা সিং সাংবাদিকদের বলেন, আহত ১৬ শিশুর চিকিৎসা চলছে এবং তাদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। তাদের জন্য সব চিকিৎসকের পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থার ব্যবস্থা রয়েছে।
ঘটনার কারণ সম্পর্কে এসএসপি জেলাশাসকের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। তবে কোন পরিস্থিতিতে বা কার ঢিলেমির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে তা জানতে বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলা পুলিশ প্রধান বলেন, ১০ শিশু মারা গেছে এবং অন্যদের উদ্ধার করা হয়েছে বা আহত অবস্থায় পাওয়া গেছে, এমন তথ্যও রয়েছে যে এনআইসিইউতে আগুন লাগার পরে কিছু বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, পুলিশ এনআইসিইউতে থাকা শিশুদের সংখ্যা এবং তাদের বর্তমান অবস্থা যাচাইয়ের চেষ্টা করছে।
মেডিক্যাল কলেজ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার সময় ৫২ থেকে ৫৪ জন শিশু ভর্তি ছিল। তাদের মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct