আব্দুস সামাদ মণ্ডল, আরামবাগ: আরামবাগের কালিপুরের বাসিন্দা তথা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অচিন্ত্য কুণ্ডু ক্যান্সারে আক্রান্ত। সে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালালেও তার মানবিক মুখ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আরামবাগ জুড়ে। শারীরিক কষ্টের মাঝেও সমাজের জন্য তার প্রাণ কেঁদে ওঠে সর্বক্ষণ।
সমাজকল্যাণের বহু কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে বরাবর অচিন্ত্যবাবু মানবিকতার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই ভেবে, সমস্ত জাতিগত বিদ্বেষকে দূরে সরিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের জন্য তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের মনও জয় করেছেন। তার
জীবনের শেষ মুহূর্তে মুসলিম ভাইদের কবরস্থানের জন্য জমি দান করে তিনি আবার সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করলেন। শুধু তাই নয় তার হিন্দু ভাইদের শ্মশান বানানোর জন্যও তিনি জমি দান করেন । হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান করার জন্য তিনি অকপটেই শহরের মূল্যবান জায়গা, প্রায় দুবিঘার মত বাস্তু ভিটে দান করে দিয়েছেন। এই শ্মশান ভূমিতে তৈরি করে দিয়েছেন মন্দির, চুল্লি। অপরদিকে শহরের মধ্যেই ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের জন্য কবরস্থান করে দিয়েছেন। এখানেও কাঠা দশকের মত জায়গা একেবারে নির্দিষ্ট পাঁচিল তৈরি করে ঘিরে দিয়েছেন।
আজকের দিনে আরামবাগের মত শহরে কোটি টাকারও বেশি মূল্যের জায়গা দান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কালিপুরের বাসিন্দা তথা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অচিন্ত্য কুণ্ডু। মা গীতা রাণী গৃহবধূ ও বাবা হরি মোহন কুন্ডু ছিলেন আরামবাগের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। আর স্ত্রী ড. তৃপ্তি কুণ্ডু রায় পেশায় শিক্ষিকা। মায়ের আশীর্বাদ আর বাবার স্মৃতি কে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে অচিন্ত্যের এই সামাজিক কাজ একদিকে হিন্দুদের জন্য শ্মশান ও অপরদিকে মুসলিমদের জন্য কবর স্থান- দুইয়ে মিলিয়ে এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যেই তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।
শুধু দুই সম্প্রদায়ের জন্য নয় সাধারণ জনগণের জনহিতকর কাজে ব্যবহারের জন্য সরকারকেও বিনা মূল্যে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দান করেছেন। তার ইচ্ছা সেখানে গড়ে উঠুক সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। সব মিলিয়ে অচিন্ত্য কুণ্ডু এখন এই শহরের একজন আইকন। তার ইচ্ছা বাবার স্মৃতিকে মানুষের মনে গেঁথে রাখতেই এই উদ্যোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা, হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনও জানিয়েছেন তারা অচিন্ত্যর জন্য গর্বিত। এই রকম একজন মানুষ কে তারা কাছে পেয়েছেন যিনি নিজেই একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত, সেই মানসিকতা তেও সব সময়েই মুখে হাসি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
রাতদিন এক করেই যখন প্রয়োজন তখনই অচিন্ত্যকে পেয়েছেন এলাকার অগণিত মানুষ। আমরাও গর্বিত তার জন্য। স্থানীয় বাসিন্দা তথা এক গৃহবধূ আরজিনা বিবি জানান, আমরা খুব আনন্দিত গর্বিত অচিন্ত্যদার জন্য। কারণ, তিনি বহু মূল্যবান জায়গা দান করেছেন কবরস্থান করার জন্য। তাকে সুরক্ষার জন্য প্রাচীর দিয়ে ঘিরেও রেখেছেন। সত্যিই আমরা খুশি।
অপর এক বাসিন্দা জানান, আমাদের এখানে ইলেক্ট্রিক চুল্লি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা হয়নি। কিন্তু আমাদের এই এলাকার সকলের দাদা অচিন্ত্য কুণ্ডু নিজে এগিয়ে এলেন। উনিও চেয়েছিলেন যাতে এখানে ইলেক্ট্রিক শ্মশান চুল্লি হোক ।কিন্তু না হওয়ায় তিনি এতদ এলাকার মানুষের জন্য তার দুই বিঘে জমি দিয়েই দিয়েছেন। আর অচিন্ত্যবাবু বলেন, আমি নিজে দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। আমারই কোন নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু আমার মানুষের জন্য প্রাণ কাঁদে। তাই বাবার স্মৃতিকে ধরে রাখতেই যৎসামান্য কিছু সামাজিক কাজ করেছি। এ আর এমন কি, আমি চাই এসব মানুষের মনে আমি থাকি, আমার বাবা-মা যেন তাদের মনে গেঁথে থাকেন।
আর তার স্ত্রী তৃপ্তি কুণ্ডু রায় বলেন, মানুষের জন্য সব সময়েই তিনি এগিয়ে গেছেন এগিয়ে যানও। আমি গর্বিত তার মতো মানুষের স্ত্রী হতে পেরে। যতদিন বেঁচে আছি আমিও চাই উনি মানুষের জন্য কিছু করে যান। আমি সব সময় তার পাশে আছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct