হাফিজুল ইসলাম, আলিপুর: করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এ বছর গঙ্গাসাগর মেলা ই-স্নানের ব্যবস্থা করেছে সরকার।পাশাপাশি বিভিন্ন পয়েন্টে তীর্থ যাত্রীদের জন্য বিশেষ মেডিকেল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই ক্যাম্পগুলোতে তীর্থযাত্রীদের থার্মাল চেকিংয়ের পাশাপাশি প্রয়োজনে রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হবে। বিশেষ করে যাদের জ্বর, সর্দি-কাশি থাকবে। যদি কারও করোনা ধরা পড়লে তাকে কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। শহরের ক্ষেত্রে জেলার এমআর বাঙ্গুর এবং ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া হবে। অন্যদিকে, গঙ্গাসাগর তীর্থক্ষেত্রে আগত যাত্রীদের কারও করোনা ধরা পরলে তাদের কাকদ্বীপ, নামখানা, রুদ্রনগর সহ অস্থায়ী কোভিড হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এছাড়া তীর্থযাত্রীদের জন্য সেফ হোমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আলিপুরে গঙ্গাসাগর মেলার বিষয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলাশাসক পি উলগানাথন একথা জানান। এদিন ওই বৈঠকে জেলাশাসক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামীমা শেখ।
গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে জেলাশাসক আরও জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে বহু তীর্থযাত্রী ইচ্ছা থাকলেও আসতে পারছেন না। তাঁদের কথা মাথায় রেখে ই-স্নানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলা অ্যাপসে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করলে মাত্র ১৫০ টাকার বিনিময়ে পিতলের কমণ্ডুলুতে করে পবিত্র গঙ্গাজল বাড়িতে পৌঁছে যাবে। এ বছর মুড়িগঙ্গায় নাব্যতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওই সময়ে ২০ ঘণ্টা ভেসেল পরিষেবা থাকবে। যাত্রীদের যাতায়াতের বাস ও জলযান যাতে আটকে না পড়ে তার জন্য জিপিএস ট্র্যাকিং করা হবে। মেলা ক্ষেত্র সুশৃঙ্খল রাখতে ১০০০ সিসিটিভি ক্যামেরা বসাচ্ছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ২৫টি ড্রোন মেলা প্রাঙ্গণ ও তীর্থযাত্রীদের যাতায়াতের পথে নজরদারি চালাবে। ১২০ টি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ওয়াকিটকি ব্যবহার করবেন মেলা আধিকারিকরা। যার ক্ষমতা ৪০-৫০ বর্গ কিলোমিটার। আসন্ন গঙ্গাসাগর মেলায় তীর্থযাত্রীদের জন্য অন্য বছরের মতো সব ধরনের পরিষেবা রাখা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির জন্য গঙ্গাসাগর তীর্থক্ষেত্র আসা-যাওয়ার যাতায়াতের পথে প্রতিটি পয়েন্টে স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমরা গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে আমরা সবরকম ব্যবস্থা রাখছি। মেলা প্রাঙ্গণে যাতে শারীরিক দূরত্ব বিধি বজায় থাকে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
অন্যদিকে, এবারের গঙ্গাসাগর মেলাকে পরিবেশ বান্ধব ও দূষণমুক্ত করে তুলতে বদ্ধপরিকর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। এই লক্ষ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার গঙ্গাসাগর মেলা মাঠ ও সাগর সৈকত পরিষ্কার করলেন প্রায় ৩০০ জন সাফাইকর্মী। মূলত সাগর ব্লক প্রশসন ও সাগর পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়। আজ থেকে মেলা শেষ না হাওয়া পর্যন্ত এই সাফাই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার দুই অতিরিক্ত জেলা শাসক, জেলা পরিষদের ডেপুটি সেক্রেটারি, ও সি, পরিবেশ, সভাপতি, সাগর পঞ্চায়েত সমিতি, সমষ্টি উন্নয়ন অধিকারিক, সাগর এবং অন্যান্য আধিকারিকবৃন্দ। কপিল মুনি মন্দির চত্বরের সাধু সন্তরা ও এই কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিলেন। সকলেই অঙ্গীকারবদ্ধ হন এবারের সাগর মেলাকে প্লাস্টিক বর্জিত, পরিবেশ বান্ধব ও দূষণমুক্ত মেলা করে তুলতে। এই অনুষ্ঠানে গঙ্গাসাগর মেলায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সাগরে স্বনির্ভর দলের ৮টি মহাসংঘকে সাগর ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে শংসাপত্র এবং উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct