আপনজন ডেস্ক: প্রত্যাশিত মতোই মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। আর তাতে উৎফুল্ল অমিত শাহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বললেন, শুভেন্দুর নেতৃত্বে সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূলের ভাল নেতারা বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা একা হয়ে যাবেন।
এ যেন গত কয়েক বছর আগের কংগ্রেস-সিপিএম থেকে তৃণমূলে যাওয়ার একেবারে প্রতিচ্ছবি। তবে, বিভিন্ন মিটিং মিছিলে যেভাবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে গেছিল, এবার বিজেপি যোগ দেওয়ার হিড়িক দেখা গেল। তবে, এখন যারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তারাই কিন্তু এতদিন সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই উপরে উঠেছেন। মানুষের কাছে বিজেপির বিপদ সম্পর্কে অবহিত করে ভোটে জিতলেও ভোটার মতামত গুরুত্বহীন হয়ে পড়ল। তাদের কাছে নিশানা হয়ে উঠল তৃণমূল কংগ্রেসে সম্মান না পাওয়ার দাবি। এই দাবি অবশ্য গত ১০ বছর ধরে মধ্যে ওঠেনি।
জনগণের মতকে ব্রাত্য করে দি্য়ে নেতা সর্বস্বকে গ্রহণ করায় ইতিমধ্যে বিজেপির মধ্যেই প্রতিবাদ উঠতে শুরু করেছে। আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দশরথ তিরকে বিজেপিতে যোগ দিতেই এলাকায় এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে গেছে। যে শুভেন্দু অধিকারীর একটা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ছিল হুগলিতেও শুভেন্দুর পোস্টার পোড়ানো হল।
তবে, শুভেন্দু যেভাবে এতদিন পর তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে এদিন সরব হলেন তাতে অনেকেই অবাক। এর আগে যিনি মমতা প্রসঙ্গে বরাবরই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তিনিই হয়ে উঠলেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আর তলে তলে যে বিজেপির সঙ্গে তার গোপন যোগাযোগ ছিল তা প্রকাশ্যে বলেও দিলেন। শুভেন্দুর দাবি, ২০১৪ সাল থেকেই বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার সুদৃঢ় সম্পর্ক। বিশেষ করে অমিত শাহের সঙ্গে। তাহলে কি তলে সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে যে তোপ দাগেন শুভেন্দুকে নিশানা করে তা সঠিক বলে প্রমাণিত হল? এই প্রশ্নের মধ্যে তাই অমিত শাহ শুভেন্দুকে পেয়ে বাংলা দখলের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠায় শুভেন্দুর কড়া সমালোচনা করলেন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। তিনি শুভেন্দুর উদ্দেশ্যে বললেন, ১০ তিনি ক্ষোভ পুষে রেখেছিলেন। আর সময় হল তা প্রকাশ করার যখন বিজেপিতে যোগ দিলেন।
শুভেন্দুকে নিশানা করতে ছাড়েননি ফিরহাদ হাকিমও। তিনি বললেন, দশ বছরের মধ্যে সাড়ে ৯বছর পর উপলব্ধি হল। ফিরহাদ তাই ফের মনে করিয়ে দিলেন, তৃণমূল কর্মীদের আবেগের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দুর কীর্তি ফাঁস করার হুমকি দিলেন। বললেন, এমন সব ভিডিও রয়েছে শুভেন্দুর যে চমকে উঠতে হবে।
এদিন যেভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়ে শুভেন্দুর উচ্ছ্বাস দেখা গেল তা অতীতে দেখা যায়নি। শুভেন্দু অমিত শাহকে দাদা বলে সম্বোধন করলেন। যে অমিত শাহ গুজরাত দাঙ্গার কারণে আজও সংখ্যালঘু সহ উদারপন্থী মানুষের কাছে ‘ঘৃণিত’ তার হাত ধরে বিজেপির প্রবেশ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একদা উদার ভাবমূর্তির কারণে শুভেন্দুকে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু মুর্শিদাবাদে বেশ প্রভাব সৃষ্টি করেছিলেন সংখ্যালঘুদের মধ্যে। বহু মুসলিম বলছেন, শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, সারা রাজ্যের সংখ্যালঘুদের কাছে তাই এখন ভিলেনে পরিণত হতে চলেছেন শুভেন্দু।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct