আপনজন ডেস্ক: বহু শিশুকে অক্সিজেন সরবরাহ করে হিরো হয়ে ওঠা উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বিআরডি হাসপাতারের চিকিৎসক ডা.. কাফিল খানের বিরুদ্ধে মামলায় সুপ্রিম কোর্টে জোর ধাক্কা খেল উত্তরপ্রদেশে সরকার। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে এক রায়ে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাফিল খানের বিরুদ্ধে জাতীয় সুরক্ষা আইন প্রযোজ্যের কড়া নিন্দা জানিয়েছে। সেই সঙ্গে এনএসএ আইন যোগী সরকারের কাফিল খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকারের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে, ডা. কাফিল খানকে নিয়ে মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টেও ফের মুখ পুড়ল যোগী সরকারের।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে কাফিল খানকে মুক্তির দেওয়াকে সমর্থন জানিয়ে এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রতি বলেছেন, ফৌজদারি মামলাগুলি তাদের নিজস্ব মেরিটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপনি অন্য মামলায় প্রতিরোধমূলক আটকের আদেশ ব্যবহার করতে পারেন না। ভারতের প্রধান বিচারপতি এসএ ববদে বলেছেন, এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি আদেশ যা ডাক্তারকে মুক্তি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, যোগী আদিত্যনাথ সরকার গত সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট এনএসএ-র অধীনে কাফিল খানকে গ্রেফতার করাকে ‘বেআইন’ ঘোষণা করার যে রায় দিয়েছিল তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে জানিয়ে দিয়েছে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় যতাযথ হয়েছে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই।
গত বছর আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সভায় ‘প্ররোচনামূলক’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে জানুয়ারিতে মুম্বই থেকে গোরক্ষপুর বিআরডি হাসপাতালের এই ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শহরের জনসাধারণের মধ্যে শন্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে এবং আলীগড়ের নাগরিকদের মধ্যে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করতে পারে এই অভিযোগ তুলে ডা. কাফিল খানের বিরুদ্ধে জাতীয় সুরক্ষা আইন প্রয়োগ করা হয়।
যদিও এলাহাবাদ হাইকোর্ট এই গ্রেফতারে আদেশ বাতিল করে দিয়ে বলেছিল, ডা. কাফিল খানের বক্তেব্যর মধ্যে ঘৃণা বা সহিংসতা ছড়ানোর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ডা. খানকে প্রথমে ধর্মের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষ প্রচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু ১০ ফেব্রুয়ারি জামিন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে এনএসএ আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
উত্তরপ্রদেশ সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল, কাফিল খানের অপরাধ করার একটি ইতিহাস রয়েছে যার ফলে শৃঙ্খলাবদ্ধ পদক্ষেপ, চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া, পুলিশ মামলা দায়ের করা এবং জাতীয় সুরক্ষা আইন করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর হাসপাতালে অক্সিজেনের এভাবে শিশুমৃত্যুর মিছিল থামিয়ে হিরো হয়ে উঠেছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. কাফিল খান। তবু তাকে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ও শিশু মৃত্যুর খবর চাউর করে যোগী সরকারের দুর্নাম করার দায়ে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও যোগী সরকারের রোষ থেকে রেহাই পাননি কাফিল খান। গত ডিসেম্বরে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন কাফিল খান। যোগী আদিত্যনাথ সরকার তার মধ্যে দেশদ্রোহের গন্ধ পায়। তাই তাকে ২৯ জানুয়ারি মুম্বাই থেকে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে প্রথমে সিএএ বিরোধী সভায় উস্কানি মূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়। এবার তাকে ফের জাতীয় সুরক্ষা আইন বা এনএসএ যে গ্রেফতার করে পাঠানো হয় মথুরা জেলে। জারি থাকে তার চাকরির উপর সাসপেনশন।
এরপর ডা. কাফিল খানের মা নুজঝাত পারভিন কাফিল খানের মুক্তির দাবিতে আর্জি জানান এলাহাবাদ হাইকোর্টে । সেই আবেদনের ভিত্তিতে মুক্তির নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর ও বিচারপতি সৌমিত্র দয়াল সিংয়ের গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ডা. কাফিল খানের বিরুদ্ধে এনএসএ আইনে দেশদ্রোহের অভিযোগ খারিজ করে দেয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশ সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল।
উল্লেখ্য, শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে কিংবা ভারতের সুরক্ষা বিঘ্নিত হতে পারে এমন সন্দেহে এনএসএ আইনে গ্রেফতার করা হয়। আর বিনা বিচারে তাকে এক বছর জেলে রাখার বিধান রয়েছে এসএসএ আইনে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের গালে ফের চপেটাঘাত হল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct