আপনজন ডেস্ক: কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে শিশু ব্যবসার রমরমা।এই খবর পেয়ে পুলিশ শিশু পাচারের অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করে। মুনাফার লোভে কালোবাজারে অবৈধভাবে যে সব মায়েদের শিশু বিক্রি হয়েছে, কেন তারা এই পথে গিয়েছেন, কেন সামান্য অর্থের বিনিময়ে নিজের সন্তান বিক্রি করে দিয়েছেন তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।আডামা নামক এ্ক মহিলা বলেন, 'আমার বয়স যখন ২২ বছর বয়স এক পুরুষের সাথে তার পরিচয় হল। আমি অন্ত:স্বত্তা হলাম।আমার কন্যা সন্তান জন্মানোর তিনদিন পর সন্তানের বাবাও মারা গেল। একাকীত্বের যন্ত্রণা গভীর হল। বাচ্চাটা ১৮ মাস বয়স হওয়া পর্যন্ত নানা অসুখে ভুগত। এরপর মেয়ের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর আমাদের দুজনের বেঁচে থাকার জন্য আয়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। আমি মেয়েকে বৃদ্ধা মায়ের কাছে রেখে নাইরোবি গেলাম কাজের খোঁজে। নাইরোবি পৌঁছে প্রথমে রাস্তায় তরমুজ বিক্রির কাজ করি।এতে আয় হত খুবই সামান্য। যার সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবসা করছিলাম, সে ব্যবসার টাকা চুরি করে নিত। শহরের জীবন খুবই কঠিন ছিল।'
আডামা আরও বলেন, 'এরপর নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে গেলাম। কিন্তু সেখানে কোন বেতনই পেতাম না। এরপর একটি নাইটক্লাবে কাজ জোটে। প্রথমে বসকে বলেছিলাম, বেতনের পুরো অর্থ সরাসরি গ্রামে আমার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতে। পরে বেতনের কিছু অর্থ নিজের জন্য রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। নাইরোবিতে একটি রুম ভাড়া নিলাম। সেখানে এক পুরুষের সাথে আলাপ হয়। দুজনে মেলামেশা শুরু করলাম। আমি ফের মা হলাম। আমার শর্ত ছিল, যদি আমার নতুন স্বামী আগের কন্যা সন্তানকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসার ব্যাপারে রাজি হয়, তাহলে তাঁর সন্তানের মা হব। সে রাজি হয়।। অন্ত:স্বত্তা থাকার প্রথম পাঁচ মাস আমার দ্বিতীয় স্বামী বাড়ি ভাড়া সহ যাবতীয় খরচ দিয়েছেন।যখনও আমার মেয়েকে গ্রাম থেকে শহরে আনার সময় হল, তখন আমার দ্বিতীয় স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে যায়। সে আর কখনও ফিরে আসেনি।'
কেনিয়ায় প্রতি বছর কযেক হাজার কিশোরী এভাবে অন্ত:স্বত্তা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ' করোনা মহামারির মধ্যে এই সঙ্কট আরও গুরুতর হয়েছে। অনেক মহিলা জানে একজন সন্তানকে পৃথিবীতে আনার আগে তার খাওয়াপরা জোগানোর চিন্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর দুজন হলে তো সে চিন্তা আরও বেড়ে যায়। কেউই অপরিচিত লোকের কাছে নিজের সন্তান বিক্রি করার কথা কখনই ভাবে না। কিন্তু কেনিয়ার দরিদ্র কিছু মহিলা অভাবে পড়ে বাঁচার শেষ উপায় হিসাবে পাচারকারীদের কাছে তাদের শিশুসন্তানকে বিক্রি করছে। পাচারকারীরা এর বিনিময়ে এসব মহিলাকে এত কম অর্থ দেয় যা অভাবনীয়। অনেকে নিজের বাচ্চাকে বিক্রি করে দেয় ৩০০০ কেনিয়ান শিলিং-এর বিনিময়ে।পাউন্ডের হিসাবে যার অর্থমূল্য মাত্র বিশ পাউন্ড। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে মেয়েরা সন্তান বিক্রি করছে। অনেকে মায়ের দাবি মেটাতে না পেরে সন্তান বেচেছে, অনেকে আবার স্কুলে পড়তে পড়তে অন্ত:স্বত্তা হয়ে গেছে ১৫/১৬ বছর বয়সে, যা নানাধরনের সমস্যা তৈরি করেছে। একমাত্র পথ তখন সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়া।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct