আপনজন ডেস্ক: মরুশহরে গেরুয়া ঝড় থামিয়ে সাফল্যের মুখ দেখল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত ভোটে খারাপ ফল হলেও পুরসভার নির্বাচনে রাজস্থানে বিজেপিকে টেক্কা দিল কংগ্রেসের। রাজস্থানের মোট ১২টি জেলার মোট ৫০টি পুরসভায় মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ১,৭৭৫টি। কংগ্রেস ৬২০টি আসনেই জয় পেয়েছে। বিজেপি প্রার্থীরা জিতেছেন ৫৪৮টি আসনে। অন্যদিকে নির্দল প্রার্থীদের ঝুলিতে গিয়েছে ৫৯৫টি আসন। রাজস্থানের পুরসভার ভোটে ভালো ফল করায় বাড়তি উজ্জীবিত হাত-শিবির। খানিকটা হলেও স্বস্তিতে অশোক গেহলট সরকার।
গ্রামীণ রাজস্থান অনেকটাই মুখ ফিরিয়েছে কংগ্রেসের থেকে। রাজ্যের ৪ হাজার ৩৭১টি জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনের মধ্যে ১,৮৩৩টি আসনে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থীরা। উল্টোদিকে, ১,৭১৩টি আসনে জিতেছেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। নির্দল প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৪১৩টি আসনে। বিশ্লেষকরা বলছেন, 'পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের অন্তর্কলহের ফায়দা নিয়েছে পদ্ম-শিবির। রাজস্থানের গ্রামীণ এলাকার ভোটে তাই ভালো ফল হয়েছে বিজেপির। মাসখানেক আগে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ও প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলটের দ্বন্দ্ব চরম সীমায় পৌঁছয়।'
রাজস্থানে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি সাফল্য পেলেও পুর নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। আপাতত যে পুর নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি তৃতীয় স্থানে চলেছে গেছে। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে নির্দল প্রার্থীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের যে ভরাডুবি হয়েছিল এবার তার মুখ রক্ষা করছে পুরসভার নির্বাচন।
রাজস্থানের ১২ জেলার ৫০টি পুরসভার মধ্যে কংগ্রেস ১৪টি দখল করেছে। বিজেপি দখল করেছে মাত্র চারটি আসন। অবশিষ্ট ৩২টি পুরসভার ভাগ্য নির্ধারণ হবে নির্দলরা কোন দিকে তার উপর। যদিও কংগ্রেস দাবি করেছে তারা নির্দলদের সমর্থনে ৪১টি পুরসভা দখল করবে।
কংগ্রেস রাজস্থানের ১২টি জেলায় ১৭৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬২০টি দখল করেছে। আর তার পরে রয়েছে নির্দলরা। নির্দলরা ৫৯৫টি ওয়ার্ড দখল করেছে। তৃতীয় স্থানে চলে গেছে বিজেপি। বিজেপি ৫৪৯টি আসন।
নির্দল প্রার্থীরা পুরসভার নির্বাচনে ভাল ফল করায় তারাই এখন কিং মেকার হতে চলেছে রাজস্থানে। কারণ ৩২টি পুরসভা কে দখল করবে তা নির্ভর করছে নির্দলরা কাকে সমর্থন করে তার উপর।
এ ব্যাপারে রাজস্থান কংগ্রেসের সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসারা বলেছেন, বিজেপি পুরসভার নির্বাচনেও জিতছে এমন মিথ্যা প্রচার করেছে। অথচ, পুরসভায় ৬১৯টি আসন দখল করেছে, যেকানে বিজেপি পেয়েছে তার থেকে অনেক কম। মাত্র ৫৪৯টি। গোবিন্দ সিং দাবি করেন, ১৭টি পুরসভায় তারা কারও সমর্থন ছাড়াই বোর্ড গঠন করতে পারবে। বাকি ২৪টি পুরসভায় তাদের সাহায্য নিতে হবে নির্দল প্রার্থীদের।
উল্লে্খ্য, কৌশলগত কারণেই কংগ্রেস বেশকিছু আসনে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন। তাদের সেই কৌশল কাজেও এসেছে। জয় পেয়েছেন সেই সমস্ত প্রার্থীরা। রাজস্থানের পঞ্চায়েত ভোটে মুখ থুবড়ে পড়েছিল কংগ্রেস। শহরাঞ্চলে সেই হাওয়া ঘোরাতে সক্ষম হয়েছে অশোক গেহলট। বরাবরই শহরাঞ্চলে ভাল ফল করে বিজেপি। এবার তা হল না। তেলেঙ্গানা পুরসভা নির্বাচনের পর রাজস্থানের পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির হার, বিজেপি নেতৃত্বকে ভাবাবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও এই ফলাফলকে অবশ্য হার হিসেবে দেখতে রাজি নয় বিজেপি। তাদের দাবি, সময় এখনও আছে। কে কটা বোর্ড গঠন করে দেখা যাবে।
বিজেপি গত বার যতগুলি বোর্ড গঠন করেছিল এবার তা র অর্ধেকও হচ্ছে না। গত বছর ৩৪টি বোর্ড গড়েছিল বিজেপি। এবার তাদের দৌড় ৯টিতেই থামিয়ে দেয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। এই তিন পক্ষ ছাড়াও ভোটের ফলে দেখা গিয়েছে, বিএসপি পেয়েছে সাতটি আসন, দুটি করে আসন জিতেছে সিপিআই ও সিপিএম, একটি আসন জিতেছে আরএলপি। তবে, পুরসভার নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির ফলে কংগ্রেস যে অক্সিজেন পাবে তাতে সন্দেহ নেই।
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে পুরসভার নির্বাচন কবে হতে সে ব্যাপারে তাদের মতামতের জন্য। সেক্ষেত্রে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে পুরসভার নির্বাচন অ্যাসিড টেস্ট বলা যায়। কিন্তু রাজস্থানে বিজেপি তৃতীয় স্থানে চলে যাওয়ায় রাজ্যের পুরসভা নির্বাচনে তাদের যে কানিকটা বেগ পেতে হবে তা বলাই বাহুল্য্ কারণ, শাসক দল সহ বিজেপি বিরোধীরা এবার সুযোগ পেয়ে যাবে রাজস্থানের পুরসভায় বিজেপির ভরাডুবির কথা তুলে ধরতে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct