আপনজন ডেস্ক: পরিত্যাক্ত ভাসানচর এখন রোহিঙ্গাদের নতুন ঠিকানা। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য জায়গার অভাব রয়েছে। ভাসানচরকেই রোহিঙ্গাদের নতুন ঠিকানা হিসাবে নির্বাচিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানের পর্যাপ্ত সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বাংলাদেশ এখন রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠাতে বদ্ধপরিকর। তাই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত রাষ্ট্রসংঘ। সম্প্রতি ভাসানচরে পাঠানো ১,৬৪২ জন রোহিঙ্গাদের নিয়ে গভীর চিন্তা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংস্থার বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রসংঘকে একবার ভাসানচরে গিয়ে স্থানান্তরিত হওয়ায় রোহিঙ্গাদের অবস্থা যাছাই করে আসা উচিত। কারণ রাষ্ট্রসংঘে সম্মতি ছাড়াই বাংলাদেশ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরিত করতে শুরু করেছে। সেখানে পরিবেশ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলে তাতে বাংলাদেশ কর্ণপাত করেনি। এদিকে তিন বছর কেটে গেলেও রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের ফিরে যাওয়ার বিষয়টিও অমীমাংসিতই থেকে গিয়েছে। এই সমস্ত কিছুর জন্যই রোহিঙ্গাদের চরম দুর্দাশার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা বস্তিগুলি সামান্য নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হলেও ভাসানচরকে রোহিঙ্গাদের জন্য সুরক্ষিত স্থানবলে মনে হয়নি। রাষ্ট্রসংঘের ও অন্যান্য আন্তজার্তিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী। ভাসানচরের ক্যাম্পগুলিকে টিন ও কাঠ দিয়ে তৈরি করা হলেও তা একটি পরিত্যাক্ত জায়গা। জনমানস হীন ওই অঞ্চলে জীবনধারণ করার মত সুযোগ নেই। এমনকি কৃষিকাজেরও অনুপোযুক্ত। দোকানপাঠ বাজার থাকলে লোকালয়ের অভাবে ব্যবসায়ীক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়াও সেখান থেকে বাংলাদেশের শহরগুলিতে জীবিকা করতে এলেও যোগাযোগের অসুবিধা রয়েছে। অঞ্চলটি জলস্তর থেকে সামান্য উঁচু। কিন্তু বর্ষাকালে সেখানে বন্যার সম্মুখীন হতে হবে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বঞ্চিত গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের অবস্থা সেখানে দূর্বিসহ হয়ে উঠবে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও পানীয় জলেরসংকট রয়েছে। এতগুলি সমস্যা থাকলেও কক্সবাজারে ঠাঁই না পেয়ে ওই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় খুঁজে পেতে সেখানে যেতে হয়েছে।
তাই রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংস্থার বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজের দাবি, 'এই যাচাইকরণ এবং মূল্যায়নগুলি সবার সেরা স্বার্থে, ফলে উদ্বাস্তুদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলি সনাক্ত করে তারা ভাসানচরকে উপযুক্ত করে তুলে বাংলাদেশ সরকারকে আশ্বাস দেবে।'
অ্যান্ড্রুজ আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, তিন বছর পরও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে তার নীতি ব্যর্থ হয়েছে। এটি ব্যর্থ হয়েছে কারণ মায়ানমার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্মস্থানটিতে নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরির জন্য অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে রাজি নয় এবং বাংলাদেশ তার মানবিক মিশন পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে রিসোর্স না করে ব্যর্থ হয়েছে।'
নিপীড়িত মানুষদের ঝুঁকি থেকে রক্ষার পদক্ষেপ হিসাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসান চরে স্থানান্তরিত করার একটি বিতর্কিত পরিকল্পনাকে বাংলাদেশ রক্ষা করছে। সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আপত্তি সত্ত্বেও, বাংলাদেশ ১,৬৪২ রোহিঙ্গার প্রথম ব্যাচটি বঙ্গোপসাগরের দূরদ্বীপল ভাসানচরে স্থানান্তরিত করে।
রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ সদস্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাসানচর দ্বীপটির মূল্যায়ন করার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যান্ড্রুজ। তাঁর দাবি এই প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত করবে যে স্থানান্তরকরণে স্থিত হওয়া ব্যক্তিরা যে তাদের নিজস্ব ইচ্ছায় সেটা নির্ণয় করতে সাহায্য করবে এই পর্যালোচনা। তবে তিনি কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলির বিকল্প দরকার ছিল বলে মনে করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct