আপনজন ডেস্ক: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে নামাযরত অবস্থায় হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মুসলিম নিহত হয়েছিলেন। ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামে এক শ্বেতাঙ্গ সেই হামলা চালানোর পর মুসলিমদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন। তিনি সেময় নিহতদের পরবিারের পাশে দাঁড়িযে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এই হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত তদন্ত হবে। তার জন্য তিনি গঠন করেছিলেন রয়েল কমিশন। কিন্তু সেই রয়েল কমিশন নিউজিল্যান্ডের সংসদে যে রিপোর্ট পেশ করেছে তাতে নিউজিল্যান্ডে মুসলিমদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে ব্যর্থতার পরিচয় মিলেছে। ফুটে উঠেছে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীয় অসেচেতনতা। তাই মুসলিমদের উপর হামলা ও তদন্তের ঘাটতির জন্য তাই ক্ষমা চাইলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন। জাসিন্ডা বিষয়টিতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও তদন্ত কমিটির ব্যর্থতা রয়েছে বলে স্বীকার করেন। ৮০০ পাতার প্রতিবেদনে গুরুত্বের সাথে বলা হয়, ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের দিকেই নিউজিল্যান্ডের নিরাপত্তা বাহিনীর নজর থাকায় এভাবে হামরা হতে পারে তা নিয়ে তাদের অসচেতনতা ছিল।
নিউজিল্যান্ডের সংসদে ক্রাইস্টচার্চ হামলার তদন্ত কমিশনের যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে তা থেকে জানা যাচ্ছে, নিউজিল্যান্ড পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছিলো, তবে হামলা আটকানো ছিল অসম্ভব ব্যাপার। তদন্ত প্রতিবেদনে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়, নিউজিল্যান্ড পুলিশের পুরো মনোযোগই ছিল ইসলামি সন্ত্রাসবাদের দিকে। মুসলিমরাও যে অন্য ধর্মের মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন, তা তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি।
নিউজিল্যান্ডে গত বছর দু’টি মসজিদে ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামে এক ব্যক্তির সন্ত্রাসী হামলায় ৫১ জন মুসলিম নিহত হন। এই হামলার আগে দেশটির নিরাপত্তা সংস্থা ‘প্রায় একতরফাভাবে’ সম্ভাব্য ইসলামি সন্ত্রাসবাদের প্রতি জোর দিয়েছিলেন। ফলে এমন ধরনের ঘটনা ঘটে বলে একটি তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার আগে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে না পারার ব্যর্থতার জন্য পুলিশের সমালোচনা করা হয়েছে। হামলার আগে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে একটি বর্ণবাদী ইশতেহারও পোস্ট করেছিল এ সন্ত্রাসী। গুলি চালিয়ে নির্বিচারে মুসল্লিদের হত্যার দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়েছিল। এসব ত্রুটি সত্ত্বেও সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো ব্যর্থতা খুঁজে পায়নি ওই প্রতিবেদন। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চের ওই হত্যাকাণ্ড তারা প্রতিরোধ করতে পারত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
যদিও ট্যারেন্টকে প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। হামলার পর মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করায় বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা। ও ঘটনার পরই অস্ট্রেলীয় সন্ত্রাসীর ব্যবহার করা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের বিক্রি তিনি দ্রুতগতিতে নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct