আপনজন ডেস্ক: কথায় বলে যদি মনের মধ্যে জেদ ও সততা থাকে তাহলে যে কোনও অসাধ্যই সাধন করা যায়। সেখানে কোনও বাধাই হার মানাতে পারে না। তেমনই এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল সমাজের পিছিয়ে পড়া শবর সম্প্রদায়ের মেয়ে রমনিতা শবর।
পুরুলিয়া জেলার বরাবাজারের প্রত্যন্ত ফুলঝোড় গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব শবরের মেয়ে রমনিতা শবর ঝাড়খণ্ডের চাইবাসার কোলহান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত পতমদা ডিগ্রি কলেজে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পড়াশুনা করেন। সম্প্রতি অনার্সের চূড়ান্ত বর্ষের ফল বের হয়েছে।
ফলাফলে দেখা গেছে, রমনিতা এবার ইতিহাসের অনার্সের চূড়ান্ত বর্ষে মোট ৩০৬ নম্বর পেয়ে তার কলেজের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছেনে। ঝাড়খণ্ডের কোলহান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত মার্কস শিটে ডিস্টিঙ্কশন সহ প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রমনিতার এমন নজর কাড়া সাফল্যে একদিকে যেমন গর্বিত তার কলেজ কর্তৃপক্ষ, তেমনই অপরদিকে গর্বিত সমাজের সমস্ত শবর সম্প্রদায়ের মানুষজন।
ছোট থেকেই পড়াশুনার প্রতি রমনিতার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে পরিবারের চরম দারিদ্রতা বরাবরই যেন হার মেনে এসেছে। বলা ভালো পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। ভবিষ্যতে তার স্বপ্ন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার নয়, পরিবারের চরম দারিদ্রতাকে কাটিয়ে তুলতে রমনিতা চান যেকোনও একটি সরকারি চাকরি।
বাবা মহাদেব শবর একজন নিতান্তই চাষি এবং মা বেহুলা শবর গৃহবধূ। সংসারে আর্থিক দিক থেকে প্রচুর সমস্যা থাকা সত্ত্বেও নিজের মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে কোনও রকম খামতি রাখেননি বাবা-মা। তবে এবার রমনিতার উচ্চশিক্ষার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্রতা। যদিও রমনিতার পাশে প্রথম থেকেই আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবল তথা শবর পিতা নামে পরিচিত পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানা এলাকার বাসিন্দা অরূপ মুখার্জি। শবর দরদি অরূপ বাবু বলেন, ‘রমনিতা আমাদের গর্ব। তার আগামীদিনের পড়াশোনায় যতরকম ভাবে সাহায্য, সহযোগিতা দরকার আমি করব। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আগেও তার পাশে দাঁড়িয়েছি, আগামীদিনেও দাঁড়াব।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct