আপনজন ডেস্ক: চিনের জিনঝিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলানদের ওপর চিন সরকারের অত্যাচারের ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন বন্দি শিবিরে উইঘুর মুসলিমদের ধর্মীয় আচার বিধি পালনে আগেই নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে। সেখানকার বহু মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এবার সে সব ঘটনাকে চাপিয়ে গেছে মুসলিমদের খাদ্যাভ্যাসে থাবা বসানোয়। কাতার ভিত্তিক নিউজ চ্যানেল আল-জাজিরা তুলে ধরে উইঘুর মুসলিরা কি ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
আল-জাজিরা ওয়েবসােইটে বলা হয়েছে, উইঘুর মুসলিমদের চিনের ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে বিশেষ শিবিরে নেওয়া হয়। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ নির্মূল করতে উইঘুরদের শূকর খেতে দেওয়া হয়। তাছাড়া শূকর সরবরাহ করতে খামারও স্থাপন করা হয়।
এ ব্যাপারে তুলে ধরা হয়েছে বন্দি শিবিরে থাকা এক উইঘুরের মর্মান্তিক স্মৃতি। জিনঝিয়াং অঞ্চলের ‘পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র’ থেকে দু বছর আগে সায়রাগুল সাউতবে মুক্তি পান। কিন্তু বন্দীকালে সহ্য করা অপমান ও সহিংসতা তাকে এখনও আচ্ছন্ন করে ফেলে। সায়রাগুল সাউতবে একজন পেশাদার চিকিৎসক ও শিক্ষক। বর্তমানে তিনি সুইডেনে বসবাস করেন। সম্প্রতি তার একটি বই প্রকাশিত হয়। তাতে সাউতবায়ে বন্দীকালে নিজ চোখে দেখা প্রহার, নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন ও সহিংসতার বর্ণনা দেন।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সাউতবে উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কৃত অমানবিক আচরণ নিয়ে আলোকপাত করেন। এতে তিনি শূকরের মাংস খাওয়া সম্পর্কেও বর্ণনা করেন, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
সাউতবে বলেন, “প্রতি শুক্রবার শূকর খেতে আমাদের বাধ্য করা হত। তারা ইচ্ছাকৃত এমন একটি দিন নির্বাচন করে যেদিনটি মুসলিমদের জন্য পবিত্র দিন বলে স্বীকৃত। আর তা গ্রহণ না করলে আপনাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।”
তিনি আরও জানান, মূলত এমন নিয়ম মুসলিম বন্দীদের মধ্যে অপমান ও লজ্জা তৈরির জন্য করা হয়েছিল। তাই খাবার গ্রহণ কালের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সাউতবে বলেন, “আমার মনে হত আমি অন্য কেউ। আমার চারপাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সত্যিই তা মেনে নেওয়া আমার জন্য খুবই কষ্টকর ছিল।”
সাউতবে ও অন্যান্যদের সাক্ষ্য থেকে বোঝা যায়, মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসকে দমন করতে চিন কঠোরভাবে ব্যাপক নজরদারির ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে। ২০১৭ সাল থেকে চরমপন্থা প্রতিরোধ করতে একটি বিশেষ শিবির খোলা হয়।
জার্মান নৃতত্ত্ববিদ ও উইঘুর গবেষক অ্যাদরিয়ান জিনজ জানান, বিভিন্ন তথ্য থেকে বোঝা যায়, কৃষি উন্নয়নও ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির একটি অংশ। বিভিন্ন খবর থেকে আরও বোঝা যায়, উইঘুর অঞ্চলে শূকর চাষাবাদ প্রসার করতে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করা হয়।
২০১৯ সালের নভেম্বর জিনঝিয়াংের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা শোহরাত জাকির জানান, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিকে শূকর উত্থানের একটি শহরে পরিণত করা হবে। তবে উইঘুররা জানায়, এটি তাদের নিজেদের জীবনযাত্রাকে প্রতিহত করবে।
গত মে মাসে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের বরাত দিয়ে কাশগরের দক্ষিণাঞ্চলে একটি নতুন খামারের কথা বলেন জিনজ। এ খামার থেকে প্রতি বছর ৪০ হাজার শূরক উৎপাদনের আশা করা হয়।
সিনা ওয়েবসাইটের খবর অনুসারে কাশগরের কনক্সাহার কাউন্টির একটি শিল্প পার্কে ২৫ হাজার স্কয়ার মিটারের স্থানে প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করা হবে আশা করা হচ্ছে।
গত ২৩ এপ্রিল রমাজানের প্রথম দিন শূকর খামার স্থাপনের চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হয়। তাতে বলা হয়, শূকরের খামার স্থাপন রফতানির উদ্দেশ্যে নয়। বরং তা কাশগরে সরবরাহ নিশ্চিত করতে করা হচ্ছে।
জিনঝিয়াং ও আশাপাশের এলাকার ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠী উইঘুর মুসলিম। জিনঝিয়াংের জনসাধারণকে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে পুরোপুরি নির্মূলের অংশ হিসেবে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় যাতে তারা ইসলাম থেকে দূরে থেকে ধর্মীয় চেতনামুক্ত হয়।
উইঘুর মুসলমানদের জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে শূকরের মাংস!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct