আপনজন ডেস্ক: ইসরাইলি আগ্রাসনের ফলে ফিলিস্তিনে গাজা ভূখণ্ডের মানুষজনের যে মানবেতর অবস্থা তা আরও একবার ফুঠে উঠল রাষ্ট্রসংঘের এক রিপোর্টে। রাষ্ট্রসংঘ প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি অবরোধের ফলে ১০ বছরে ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১ ,৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর এই এক দশকে দারিদ্র্যসীমার নচে বাস করছেন ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিন নাগরিক।
গাজা উপত্যকার এই করুণ দশা নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে গত বুধবার এক রিপোর্ট পেশ করেছে বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক জোট আংকটাড। তাতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইসরাইলি দখলদারিত্বের কিছু প্রভাব দেখানো হয়েছে। ২০০৭ সালে গাজায় দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। কিন্তু ইসরাইলি অবরোধের মুখে এখন তা দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশে। অর্থাত্, সেখানকার ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির কাছে মৌলিক চাহিদা পূরণই কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ১০ বছরে গাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে এবং দারিদ্র্যের হার পৌঁছেছে ৫৬ শতাংশে। এ অবস্থার আরো অবনতি ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ২০০৭, ২০১২ ও ২০১৪ সালে তিনটি বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালায় ইসরাইল। এতে বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে, বিধ্বস্ত হয়েছে অগণিত ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। আংকটাডের প্রতিবেদন অনুসারে, উপত্যকায় ইসরায়েলি হানায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩ হাজার ৭৯৩ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি। আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ।
অর্থনৈতিক অবরোধ প্রসঙ্গে আংকটাডের ফিলিস্তিন কোঅর্ডিনেটর মাহমুদ এলখাফিফ জানান, অবরোধ চলতে থাকলে সেখানকার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে। গাজার ২০ লাখ মানুষের ওপর অনৈতিক অবরোধ তাত্ক্ষণিক তুলে নেওয়া উচিত। তাদের আরো স্বাধীনভাবে চলাফেরা, ব্যবসা, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য এবং উপত্যকার বাইরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার অনুমতি থাকা উচিত।
২০০৭ সালের জুন থেকে গাজাবাসী উপত্যকার মাত্র ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। সেখানে পণ্য প্রবেশ একেবারে সীমিত হয়ে পড়েছে, বৈদেশিক বাণিজ্য ও রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ। গাজার বহু লোকের বাড়িতেই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি-বিদ্যুৎ পৌঁছায় না, নেই যথেষ্ট পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধাও। আংকটাডের বিশ্বায়ন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক রিচার্ড কোজুল-রাইট বলেন, উপত্যকার ফিলিস্তিনিরা বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত হতে না পারলে অবনতি ছাড়া তাদের ভাগ্যে আর কিছু দেখা সম্ভব নয়। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, একবিংশ শতাব্দীতেও ২০ লাখ মানুষকে ওই ধরনের পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছে। গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের এই করুণ পরিস্থিতি নিয়ে অবশ্য কোনও হেলদোল নেই ইসরাইলের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct