আপনজন ডেস্ক: পুরুলিয়ার ঝালদা ১ নং ব্লকের মাড়ু মসীনা গ্রাম পঞ্চায়েতের পোস্তাবেড়া মৌজার পাহাড়তলির প্রত্যন্ত পাড়কিডি গ্রামে ভূঁইয়া ও মাহাত পরিবার সবমিলিয়ে বসবাস ২৬টি পরিবারের। গ্রামবাসীদের আর্থিক রোজগার বলতে বিড়ি বাঁধা ও অল্প স্বল্প চাষ বাস।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানকার গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন দেওয়াল লেখনের মাধ্যমে। দাবি ছিল পানীয় জল, রাস্তা ঘাট ও শিক্ষা-দীক্ষার উন্নতি ঘটানো। আর সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে ক্ষণিকের মধ্যেই সেই খবর ভাইরাল হতেই নড়ে চড়ে বসে রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসন। আবির্ভাব হতে শুরু হয় বাম-ডান সহ সমস্ত দলের রাজনৈতিক নেতাদের। এমনকি বাদ যায়নি তৎকালীন ঝালদা ১ নং ব্লকের বিডিও-ও। তবে তারা সকলেই ধাপে ধাপে আসেন গ্রামে বলেই দাবি করেন গ্রামবাসীরা। আশ্বাস দেন সব কটা সমস্যার দ্রুত সমাধান করে দেবেন। কিন্তু বাস্তবে ভোট আসে ভোট যায়, কে কার খবর রাখে? গ্রামবাসীদের মধ্যে প্রাক্তন শিক্ষক মহিতোষ মাহাত ও রাজারাম মাহাতরা জানান, ভোট বয়কট করে দেওয়াল লিখন করার পর এ খবর ভাইরাল হতেই এসেছিলেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা সহ প্রশাসন। কথা দিয়েছিলেন সবকটা সমস্যা ভোট পেরিয়ে গেলেই সমাধান হবে, ব্যস ওই টুকুই।
গ্রামবাসীদের কথায় আমরা পাইনি রাস্তা, আমাদের মেটেনি পানীয় জলের সমস্যা। হয়নি গ্রামে আইসিডিএস ভবন নির্মাণ। যার কারণে এখনো আমাদের গ্রামে ঢোকেনি কোনও চার চাকা গাড়ি। গর্ভবতী মহিলারা ও শিশুরাও পাচ্ছে না কোনও পুষ্টিকর খাদ্য।
তা ছাড়াও গ্রামের কোন বয়স্ক মহিলা বা বিধবা বা গর্ভবতী মহিলা বঞ্চিত আছেন বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে। তারা আরও জানান, বর্ষাকালে আমাদের গ্রামে কোনও গর্ভবতী মহিলা বা সাধারণ মানুষ যদি অসুস্থ হয় তাহলে তাকে দোলা করে নিয়ে যেতে হয় ৫০০ মিটার দূরে কাসরা গ্রামে। গ্রামবাসীদের কথায় নেই রাস্তা-ঘাট,পানীয় জল, শিক্ষা-দীক্ষা। তবে ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে পেয়েছি সৌরবাতি। সেও আবার মাত্র চারটে।
পাশাপাশি তারা জানান, স্বাধীনতার এতদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো গ্রামে কেউ পায়নি বিধবা পেনশন বা বার্ধক্য ভাতা। সরজমিনে গিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কথায় তবে তাদের মধ্যে এখনও অনেকে বোঝেন না শৌচালয় মানে কি? পেরিয়ে গেল পঞ্চায়েত নির্বাচন। চলে গেলে লোকসভা নির্বাচন। এর পর আসছে আগামী বিধানসভা নির্বাচন। প্রশ্ন, এভাবেই কি তারা দিনের পর দিন রাজনৈতিক নেতা বা প্রশাসনিক কর্তাদের কথা শুনে ঠকিয়ে যাবেন ? নাকি মিলবে সুরাহা মিলবে ? নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, বাম আমলের পর পরিবর্তনের সরকার হয়েছে। তারপরও যদি আমরা বঞ্চিত থাকি আমাদের ন্যূনতম দাবিগুলো নিয়ে তাহলে কি আশা করব পরিবর্তনের সরকারের কাছে?
সাফ তারা জানান, আসছে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই যদি অর্থাৎ আমাদের গ্রামবাসীদের সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে আমরা কোনও রাজনৈতিক নেতা বা স্থানীয় প্রশাসন কাউকে ঢুকতে দেব না গ্রামে। এবিষয়ে ঝালদা ১ নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি নাকি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। কারণ, তার কাছে কেউ লিখিত ভাবে এবিষয়ে জানাননি। তিনি জানতে পারলেন এই সাংবাদিকের কাছ থেকে। সুতরাং, এরপর তিনি সবকটা বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন ও সমস্যার সমাধান করবেন বলে আশাবাদী গ্রামবাসীরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct