আপনজন ডেস্ক: মানভূম তথা পুরুলিয়ার অন্যতম প্রধান উৎসব বাঁদনা পরব। কালীপুজোর সময় মানভূম তথা পুরুলিয়ার প্রতিটি গ্রামে বাঁদনা পরবে মেতে ওঠেন সাধারণ মানুষ। অগ্রহায়ণে পাকা ধান খেত থেকে বাড়িতে তোলার আগের মুহূর্তে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি সেজে ওঠে। তবে বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের রাঁচি জেলার পূর্বাংশে, হাজারীবাগ, গিরিডি, ধানবাদ, সাঁওতাল পরগনা, উড়িষ্যার ময়ূরভঙ্গ, কেওনঝড়, বোনাই, বামরা এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল সহ অসমের কৃষিজীবী মানুষরাও অত্যন্ত সাড়ম্বরের সঙ্গে বাঁদনা পরব পালন করেন।
এই উৎসবটি কার্তিক অমাবস্যার প্রতিপদ ও দ্বিতীয়া সব মিলিয়ে তিন দিন ধরে কৃষকরা গরু ও মোষ এর যত্ন ও সেবাই মেতে উঠেন। আহিরা গানের মাধ্যমে গরু ও মোষ কে জাগানো হয়। অমাবস্যার দিন চালের গুঁড়োয় তৈরী প্রদীপ জ্বালিয়ে আমন্ত্রণ ও জানানো হয়। পরের দিন গরু ও মোষ কে রক্ষাকারী দেবতা হিসেবে গোঁরইয়া পুজো করা হয় এবং দ্বিতীয়ার দিন বলদ খুঁটা বা কাড়া খুঁটা অনুষ্টিত হয় আবার কোন কোন কৃষক খেত ও খামার কেও জাগিয়ে থাকেন। এই উৎসব পালনের জন্য কৃষিজীবি সম্প্রদায় দূর্গা পূজার পর থেকেই তাদের ঘর দর পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করে থাকেন। পাশাপাশি মাটির দেওয়ালে প্রলেপ দিয়ে নানা রকম রঙে সাজিয়ে থাকেন এবং পশু পাখির ছবিও অঙ্কন করে থাকেন। অপরদিকে গরু ও মোষ থাকার গোয়াল ঘরের গর্ত গুলোও মরাম মাটি দিয়ে সমতল করেন যাতে করে গরু বা মোষদের বসা ওঠার ক্ষেত্রে কোনো রকম অসুবিধা না হয়। বাঁদনা পরব সম্পর্কে লোক কথার প্রচলন আছে কপিলা মঙ্গলা নামে একটি সুদীর্ঘ কাহিনী।
তবে এই উৎসবটি সম্পর্কে লোক কথা বা লোক কাহিনী প্রচিলিত থাকলেও প্রকৃত পক্ষে বাঁদনা পরব হল কৃষি জীবি মানুষের সঙ্গে তাদের সাহায্য কারী পশুর মেল বন্ধন। তবে ধীরে ধীরে বাঁদনা পরবের জৌলুস কমছে। এখন গাই জাগানো বা গো বন্দনা বা অন্য কিছুতেও এখন আর বেশি মানুষের অংশগ্রহণ দেখা যায় নি। অনেক গ্রামে গরু খুঁটা বা কাড়া খুঁটা উঠে গেছে (বন্ধ হয়ে গেছে)। শুধুমাত্র নমো নমো করে গো বাঁদনা হয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঁদনা পরবের আহিরা গান। বাঁদনা পরবের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো অনেকে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct