বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা, বিশেষ করে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন ভালো ফল করেছে। কংগ্রেস না ডোবালে সেখানে বামেদের সমর্থনে তেজস্বী যাদব সরকার গড়তে পারতেন। এই ফলের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই (এম এল) লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের গণতন্ত্রবিরোধী আচরণ বা দুর্নীতির বিষয়গুলি আছে। তবুও আমি বলব বাংলাতেও বিজেপিকে পয়লা নম্বর প্রতিপক্ষ হিসেবে বামপন্থীদের নিতে হবে। ত্রিপুরা বিজেপি পেয়েছে, অসমে বিজেপি আছে, বিহারে বিজেপি ফিরে এল। পশ্চিমবঙ্গেও লোকসভা ভোটের পর থেকে কী ভাবে বিজেপির দাপট বেড়ে চলেছে, তা বাংলার মানুষ দেখছেন।’
দীপঙ্করের এই বক্তব্য যে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, এবং বাস্তবসম্মত সে বিযয়ে সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেযক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় তাই লিখেছেন, ‘বিহারে বামপন্থীরা একটা সোজা কথা সাফ করে বলেছেন : ভারতে ও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিই বামপন্থীদের এক নম্বর প্রতিপক্ষ। এ রাজ্যে এ কথার তাৎপর্য স্পষ্ট। নির্বাচন যত কাছে আসবে, সেই তাৎপর্য ততই গুরুতর আকার ধারণ করবে।’
কিন্তু সিপিআইএম দীপঙ্করের তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁদের কাছে এ রাজ্যে পয়লা প্রতিপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপি। রাজ্য কংগ্রেসের প্রধানের মুখেও এক কথা। বিজেপি ঠিক এটাই চাইছে। বিরোধী শিবির যত ছত্রভঙ্গ হবে ততই তাদের লাভ। মনে হয়, সিপিএমের তৃণমূল বিরোধিতার মূলে রাজনীতির চেয়ে ইগো আছে বেশি। এই তৃণমূলই তাদের বহুদিনের মৌরসি পাট্টা নষ্ট করেছে। একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছে তাদের। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে নরম হওয়া চলবে না। তৃণমূলেরও একই ইগো। তাদেরও বোধহয় প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি ও বাম। আবারও বলছি ঠিক এটাই চাইছে বিজেপি। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেসের ভোট যেমন বিজেপির দিকে যাবে, তেমনি ভোট কাটাকাটিতে বহু কেন্দ্রে জিতে যাবে বিজেপি। তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস কী দেওয়ালের লিখন পড়তে পারছেন না ? দেখছেন না, বিজেপি কী ভাবে গ্রাস করছে দেশকে। এবারের উপনির্বাচনের ফলাফল কী তাঁদের ভাবাচ্ছে না ? মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, ওড়িশা, মনিপুর, নাগাল্যাণ্ড, হরিয়ানা, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা সব জায়গায় বিজয় পতাকা উড়ছে বিজেপির। যে উত্তরপ্রদেশে এত কাণ্ড হল, হাসরথের ঘটনা ঘটল, সেখানে মায়াবতী প্রার্থী দিয়ে ভোট কাটাকাটিতে অচেতনভাবে সাহায্য করলেন। ফলে ৭ টার মধ্যে ৬ টা আসনে জয়ী হল বিজেপি।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী মহাজোট তৈরি না হলে এ রাজ্যে বিজেপির জয় অবশ্যম্ভাবী। সিপিএম যদি ভেবে থাকে আগে তৃণমূলকে তাড়িয়ে পরে বিজেপিকে তাড়াবেন, তাহলে সেটা হবে মহা ভুল। তৃণমূলকেও বুঝতে হবে সত্যটা। নানা কেলেঙ্কারি আর অন্তর্দ্বন্দ্বে ফেঁসে আছে সে দল। বিজেপি কেনা-বেচার রাজনীতি করবেই সঙ্গতভাবে। আদর্শের দায় নেই বলে তৃণমূলের যে কোন নেতা যখন-তখন চলে যেতে পারেন সুবিধাজনক ছত্রচ্ছায়ায়। ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোরেরও কিছু করার থাকবে না।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct