আপনজন ডেস্ক: বিশ্ব বাজারে কুমিরের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত চড়া দামে বিক্রি হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কুমির ব্যবসা ‘ঝুঁকিমুক্ত' ।যদি আজকে বিনিয়োগ করে কালকেই মুনাফা চান, তাহলে এ ব্যবসায় সুবিধা করতে পারবে না। বেশি পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসায় লেগে থাকতে হবে। তেমন দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা দুইটি কুমির খামারের একটি ময়মনসিংহে ভালুকা উপজেলার উথুরায়। ২০০৪ সালে ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড' নামের এ ব্যতিক্রমী খামার শুরু। ১৫ একর জায়গা জুড়ে বাণিজ্যিক খামারটি গড়েন ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদ ও মেজবাউল হক।
২০১০ সালে জার্মানিতে হিমায়িত ৬৯টি কুমির বিক্রির মধ্য দিয়ে রপ্তানির খাতা খোলেন তারা। গত বছর পর্যন্ত জাপানে এক হাজার ৫০৭টি কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা এ খামারের কর্তৃপক্ষ বলছে, দু-এক বছরের মধ্যে প্রতি বছর কুমিরের এক হাজার চামড়াসহ মাংস রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন তারা। বিশ্ববাজারে প্রতিটি কুমিরের চামড়া ৫ থেকে ৬শ ডলার মূল্যে রপ্তানি হয়ে থাকে। ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে ১৫টি পুরুষ কুমিরসহ ৭৫টি কুমির আনা হয়। যার জন্য তাদের ব্যয় হয় প্রায় সোয়া কোটি টাকা। বিশেষ ধরণের পুকুরে দেশীয় আবহাওয়ায় লালন-পালন করে থাকেন তারা। তবে প্রথম দিকে আবহাওয়া ও পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পেরে ৫ থেকে ৭টি ব্রিডার কুমির মারা যায়। তারপরও বাকি কুমিরের বংশ বৃদ্ধি করে সফলতা পান তারা। বর্তমানে এ খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে কুমিরের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। প্রথম দিকে এসব কুমির বাঁচিয়ে রাখা, ডিম পাড়ানো, ডিম সংরক্ষণ এবং বাচ্চা ফোটানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশয় দেখা দিলেও অল্পদিনেই আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে ওঠে কুমিরগুলো। পরে কুমিরগুলো ডিম দিতে শুরু করে। তা থেকে বাচ্চা ফোটানোও শুরু হয়।
সাধারণত লোনা জলে প্রজাতির কুমিরের চাষ করা হয়। ৮ থেকে ১০ বছর বয়সে এসব কুমির ডিম পাড়া শুরু করে। বছরে একবার বর্ষাকালে গড়ে ৪৫ থেকে ৬০টি ডিম দেয় কুমির। এসব ডিমের ৮০ শতাংশ থেকে বাচ্চা পাওয়া যায়। কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ৮০ থেকে ৮৫ দিন লাগে। এক জোড়া কুমিরের জন্য সাধারণত ৮০ বর্গ মিটার জায়গা লাগে। ৩ বছর বয়সের কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা হয়। রপ্তানি যোগ্য কুমিরকে ডিম ফোটানোর পর থেকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত পুকুরে পরিচর্যা করতে হয়। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার আগে কুমিরকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে অজ্ঞান করে কাটা হয়। তারপর প্রশিক্ষিত শ্রমিকরা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করেন। অন্য ব্যবসার তুলনায় কুমির চাষের ভিন্নতা রয়েছে। এতে পুঁজি বেশি লাগলেও দীর্ঘ মেয়াদে এ ব্যবসায় ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম। আন্তার্জাতিক বাজারে চামড়ার কদর থাকায় প্রতি বছরেই বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে খামারিরা চামড়া রপ্তানি করছে। ভবিষ্যতে কুমিরের মাংসও রপ্তানি হবে বলে আশা এ বন কর্মকর্তার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct