অকারণ মুখোপাধ্যায়: বছর দশেক বয়সের দরিদ্র এক পিতৃহারা হিন্দু নাবালিকার দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ায় উপায় পাচ্ছিল না চিকিৎসার খরচ যোগাতে। সেই সময় তার যাবতীয় খরচের দায়ভার নিয়ে এলেন এক মুসলিম যুবক। হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতর এই সাক্ষী থাকলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের অনুন্নত পিছিয়ে পড়া বাসন্তী ব্লকের নির্দেশখালি গ্রাম।
গ্রামেরই দীনমজুর রঘু দাস। স্ত্রী প্রতিমা দাস আর চার কন্যা নিয়ে দরিদ্র এই দীনমজুরের সংসার। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের হাল ফেরাতে সংসারের দায়িত্ব সামলে স্বামীর সাথে দীনমজুরের কাজে হাত লাগায় প্রতিমা। ২০১৩ আচমকা মৃত্যু হয় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী রঘু দাসের।দুই নাবালিকা কন্যা কে নিয়ে আরো অসহায় হয়ে পড়েন প্রতিমা।এলাকার বাবুদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে কোন রকমে দুই মেয়ে কে মানুষ করার চেষ্টা চালাতে থাকেন। স্থানীয় নির্দেশখালি পুলিশ ফাঁড়িতে রান্না করার কাজ করেন প্রতিমা। সেই সুবাদে সেজো মেয়েকে গ্রামেরই ঋতুভকত উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেনীতে ভর্তি করেন।ইতিমধ্যে সেজো মেয়ে সাগরিকার দাঁতের রোগের সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে যতটুকু সঞ্চয় ছিল সবই শেষ।কখনও অর্ধাহারে কখনও বা অনাহারে দিন কাটালেও মেয়ের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেন প্রতিমা। কোথাও কোন প্রকার সাহায্য না মেলায় হতাশ হয়ে পড়েন প্রতিমা ও তাঁর দুই নাবালিকা কন্যা। সেই সময় এই করুণ অসহায় পরিস্থিতির কথা জানতে পারেন স্থানীয় যুবক মেহেদি হাসান সেখ। তিনি এই দরিদ্র হিন্দু পরিবারের সাথে কথা বলেন। অসহায় দাস পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে দুই কন্যা কে আগামী দিনে পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এমত অবস্থায় হাসি ফোটে দাস পরিবারের মুখে। মেহেদি হাসানের উদ্যোগে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে শুরু হয় চিকিৎসা। দরিদ্র পরিবারের অসহায়তার কথা জানতে পেরে সম্পূর্ণ বিনা ব্যয়ে চিকিৎসা করতে রাজী হয়ে যায় স্থানীয় পানিখালি বাজারের “আশীর্বাদ” নার্সিং হোমের দন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওবায়দুর রহমান সেখ।অন্যদিকে স্থানীয় যুবক মেহেদি হাসান সেখ দরিদ্র এই পরিবার কে ওষুধপত্র কিনে দেওয়া সহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচ করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct