জয়প্রকাশ কুইরি ,পুরুলিয়া: পুরুলিয়া জেলার ৬৫ তম জন্মদিন। ১৯৫৬ সালের ১ লা নভেম্বর মানভূম জেলা ভেঙে নব গঠিত পুরুলিয়া জেলার জন্ম হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবি ওঠে। বাংলা ভাষা প্রধান এলাকা হলেও মানভূম জেলা ছিল হিন্দির বিহারে। বিহার সরকার জোর করে বাংলা ভাষা প্রধান এলাকা মানভূমে জোর করে হিন্দি ছাপানোর চেষ্টা করে। স্কুল, অফিস সর্বত্র হিন্দি ভাষায় চালানোর নিয়ম লাগু করে। তাই মানভূমের স্বাধীনতা সংগ্রামীরাও দাবি তোলে মানভূম জেলাকে বাংলা ভাষার অধিকার দিয়ে হবে। এবিষয়ে মানভূম জেলা কংগ্রেসের মধ্যে মতবিরোধ হয়। মানভূমের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা অতুল চন্দ্র ঘোষ, লাবন্যপ্রভা ঘোষ, বিভূতি ভূষণ দাশগুপ্ত, ভজহরি মাহাত প্রমুখ বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীর নেতৃত্বে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে লোকসেবক সংঘ গঠন করে শুরু করেন মাতৃভাষা বাংলার অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন। ১৯৫২ র সাধারণ নির্বাচনে লোকসেবক সংঘের হয়ে লোকসভায় নির্বাচিত হন ভজহরি মাহাতো ও চৈতন মাঝি। তারা লোকসভায় এই দাবি তোলেন। এই সময় সংসদ ভজহরি মাহাতো ভাষা আন্দোলনের একটি টুসু গান "শুন বিহারী ভাই, তোরা রাখতে লারবি ডাঙ দেখাই"। এই গানটি ছিল মানভূমের বাংলা ভাষা আন্দোলনের থিম সং। এই গানটি লেখার জন্য সাংসদ থাকাকালীন ২২ মাস জেলে থাকতে হয়েছিল তাকে। ৯ বছরের দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের শেষ হয় ঐতিহাসিক বঙ্গ সত্যাগ্রহ অভিযান দিয়ে। ১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল মানভূমের পুনচা থানার পাকবিড়রা থেকে এক হাজারের বেশি সত্যগ্রহী পায়ে হেঁটে কলকাতা যায়। সত্যাগ্রহ করে সকলে জেলে বন্দি হয়। পরে তার মুক্তি পায়। তারপর ১৯৫৬ সালের ১লা নভেম্বর মানভূম জেলা ভেঙে পুরুলিয়া জেলা গঠিত হয় এবং পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়। রক্ষা পায় মানভূমের মাতৃভাষা বাংলা। এই ঐতিহাসিক দিনটি নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করলো পুরুলিয়াবাসী। পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে লোকসেবক সংঘের উদ্যোগে ৬৫ তম বঙ্গভুক্তি দিবস পালিত হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লোকসেবক সংঘের সচিব সুশীল মাহাত, গণেশ মাহাত, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী উমা সরকার, লোকসেবক সংঘের কর্মী তথা চিত্রপরিচালক দেবরাজ মাহাতো সহ লোকসেবক সংঘের কর্মী সমর্থকেরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct